পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ, বাহিরের ঘরে দেবেনবাবুর ঘুম হইতেছে কি-না ললিতা বুঝি চোখ বুজিয়া তাই ভাবিতেছে। অজিত বোধ হয় কাল সকাল পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা করিয়া স্ববলের বাড়ি চিঠিসমেত লোক পাঠাইবে । কিন্তু গায়ত্রী কি করিতেছে কে জানে ? ছোট ছেলেটিকে সে বোধ হয় বুকের কাছে টানিয়া লইয়াছে, তার কচি আঙুলগুলি নিজের ঠোঁটের উপর চাপিয়া ধরিয়া অপলক দৃষ্টিতে ওপ্যালের মত বিচিত্র আকাশের দিকে চাহিয়া আছে। কাজেই আমাদের এখান হইতে ভোর হইতে লগ্ন রাত্রি আটটায়। একটু সকাল-সকাল বাহির হইবার কথা। কলরব চরম হইয়া উঠিয়াছিল, কিন্তু সন্ধ্যার পর হঠাৎ মেঘ . করিয়া আসিল, কোথায় রহিল শ্রাবণ-পূর্ণিমার সমারোহ— মিনিট-কক্ষেকের মধ্যে বিজয়ী রাজার নগর-প্রবেশের মত ঝম্ ঝম্‌ শব্দ করিতে করিতে বৃষ্টি আসিয়া পড়িল। ছাদের হোগলার পাড় ছাপাইয়া বৃষ্টির জল উঠানটিকে কর্দমাক্ত করিম তুলিল, মাটির ভাড় ও গেলাসের ভগ্নাবশেষগুলি ভিজিয়া কেমন একটা গন্ধ বাহির হইতে লাগিল এবং বর্ষণের কলরোলকে ছাপাইয়া পনের-কুড়িটি নারীকণ্ঠ এ-উহার সহিত প্রতিযোগিতা স্বরু করিয়া দিল। এবার তাহাদের সাজিবার পালা। আজ বাড়িতে নুতন কোন অতিথির উপস্থিতির সম্ভাবনা নাই, তবু আজ তাঁহাদের দেহবিস্তাস না করিলে চলিবে না। এ বাড়ির ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে যে বড়, আজ সে বিবাহ করিতে চলিয়াছে। চুল বাধিবার পালা বেল তিনটা হইতেই স্বরু হইয়াছিল। এখন তাহারা একে একে আমার পাশের ঘরটি অধিকার করিল। ঘরের প্রকাও খাটটি শাড়ীতে, ব্লাউসে বোঝাই হইয়া গিয়াছে, সদ্যহ্মাতাদের উপস্থিতির ফলে, সাবানের উগ্র গন্ধে বাহিরের বাতাস পর্য্যন্ত বিহবল হইয়া পড়িয়াছে। যে টেবিলটার উপর বড় একটা আয়না রাখা থাকে তাহার উপর জমা হইয়াছে আলতার শিশি, পাউডার, ক্ষে এবং সেন্টের রকমারি বাক্স । আমাদের গ্রামসম্পৰ্কীয়া এক খুড়ীমা সাদাসিদ একটি দিশী কাপড় পরিয়া বিয়েবাড়িতে ঘোর-ফেরা করিতেছিলেন, অজিতাদের দল তাহাকেও ঘরের মধ্যে ধরিয়া জানিয়াছে। বলে তার প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি হইবে; পাড়াগায়ের بس-s 3 শুভবিবাহ e్శల মেয়ে-দুই-তিনটি সন্তানের জননী, সাজগোছ করিতে র্তাহার বিলক্ষণ লজ্জা। তিনি বারংবার আপত্তি করিয়া বলিতেছেন— ওম, আমি এই বয়সে রঙীন শাড়ী পরে বাহার দেব কি লে। তোর পর, তাই দেখেই আমাদের চোখ জুড়োবে। কিন্তু অজিত নাছোড়বান্দা । স্থবল আজ সকাল হইতেই এ-বাড়িতে হাজির হইয়াছে ; স্বতরাং সে ত আজ সাজিবেই এবং খুড়ীমাকেও না সাজাইয়া ছাড়িবে না। সে তার তীক্ষ কণ্ঠস্বরে অপর পক্ষের সমস্ত আপত্তি ডুবাইয়া দিয়া বলিল,—তাই আবার কখনও হয় নাকি ! আমার ওই খয়ের রঙের বেনারসীখানা নিয়ে পর। আর হাতে একগাছি ক'রে কলি দিয়ে থাকাই কি ভাল দেখায়নাকি বাপু মেজমামী বুড়ে বয়সে তিন স্কট চুড়ি হাতেদিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে—আমিনীচেগিয়ে এক স্কট চেয়ে এনে তোমাকে দিচ্ছি। আর ঐ ড্রয়ারের মধ্যে দু-ছড়া হার আছে। মফ চেন্‌টা আমার জন্তে রেখে দিয়েবিছে হারটা তুমিগলায়দাও । কথা শেষ করিয়াই অজিতা দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া নীচে নামিতেছিল। তাহাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম,— গায়ত্রী কোথায় বল ত ? অজিত একটু ভাবিয়া লইয়া বলিল,—কে বড়দি 7...কই অনেকক্ষণ তাকে দেখিনি। বোধ হয় নীচের ঘরে পান সাজছে । কিন্তু তুমি যে এখনও জাম-কাপড় কিছুই পরনি, কপালে চন্দনও পরা হয়নি। এদিকে সাতটা প্রায় বাজে, সে খবর রাখ! কারও যদি এদিকে নজর থাকে । নাও, তুমি চট করে মুখে হাতে সাবান দিয়ে নাও, আমি এখ খুনি ছোটমামীকে চন্দন পরাবার জন্তে নীচে থেকে ডেকে আন্‌চি। —বলিতে বলিতে সে নীচে নামিতে লাগিল । বলিলাম,—তোকে আর ছোটমামীকে চন্দন পরাবার জন্তে মেহনৎ করে ডেকে পাঠাতে হবে না । তার চেয়ে তোর বড়দি কোথায় ডেকে দে, সেই ভাল পাববে। অজিতা সিড়ির মাঝখানেই থামিয়া গেল,—তার চোখে বিস্ময় ও বিরক্তি। একটু উপরে উঠিয়া আসিয়া বলিল,— তোমার কি বুদ্ধি-স্বদ্ধি দিন-দিন কমছে নাকি মন্ট দা ? ওকে আজকের কোন কাজেই হাত দিতে নেই। তুমি দাড়াও আমি ছোটমামীকে এখখনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।