পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটি মত প্রচার, করিলেন যে, শুধু জড়পদার্থের নিকটবর্তী স্থানই যে বক্র তাঁহা নহে, কোন জড়পদার্থ না থাকিলেও শুষ্ঠ স্থানও বক্র, অর্থাৎ শূন্ত স্থানও এমন নহে যাহাতে ইউক্লিডের জ্যামিতি খাটবে। ডি গীটারের এই মত অনেকেই গ্রহণযোগ্য মনে করিলেন এই কারণে যে, এই মতানুসারে আকাশস্থ অতিদূরবর্তী এক শ্রেণীর জ্যোতিষ্কের একটি অদ্ভুত গতির কারণ নির্ণয় করা যায়। এই জ্যোতিষ্কগুলির রীতি এই যে, ইহার ক্ৰমাগত পৃথিবী হইতে ( অর্থাৎ দর্শক হইতে ) দূরে সরিয়া যাইতেছে। এই শ্রেণীর জ্যোতিষ্কগুলির মধ্যে যেটি যত বেশী দূরে, সেটি তত বেশী দ্রুত দৃষ্টিপথ হইতে দূরে সরিয়া যাইতেছে। এই অদ্ভুত গতির কারণ ইতিপূৰ্ব্বে নির্ণীত না হওয়ায় এবং ডি, সীটারের মতানুসারে অনেকট নিনীত হওয়ায় ডি. সীটারের মতটি অনেকের নিকট গ্রহণযোগ্য বলিয়াই প্রতীত হইল। ডি. সীটারের মতানুসারে যখন দেখা গেল যে জড়পদার্থহীন শূন্ত স্থানও বক্র, তখন গণিতের নিয়মানুসারে ইহাও প্রমাণিত হইল যে, জড়পদার্থহীন শূন্ত ব্ৰহ্মাণ্ডও আমাদের পুরাতন ও চিরন্তন ধারণাকুযায়ী অসীম এবং অনন্ত নয়। ব্যাপারটি কতকট এইরূপ —যদি আমরা বক্রতাহীন সমতলভূমিতে কোন একদিকে চলিতে থাকি, তাহ হইলে আমরা অনন্ত কাল ধরিয়া চলিলেও এই সমতলভূমির ‘শেষ’ বা সীমা’ পাইব না। কিন্তু যদি একটা বক্রস্থানে ( যেমন একটি প্রকাও গোলকের উপরিস্থিত প্রদেশে) কোন একদিকে চলিতে আরম্ভ করি, তাহা হইলে পুনরায় যেস্থান হইতে যাত্রা করিয়াছিলাম, সেইস্থানেই উপস্থিত হইব। এক্ষেত্রে সমগ্র প্রদেশটিকে অনন্ত বা অসীম বলা চলিবে না। এরূপ ব্ৰহ্মাণ্ডে কোন একস্থান হইতে একটি আলোকরশ্মি একদিকে বিকীর্ণ হইলে বহুকাল পরে পুনরায় সেইস্থানে ফিরিয়া আসিবে। স্বতরাং আমাদের পক্ষে নিজের পৃষ্ঠদেশ সম্মুখে দেখিতে পাওয়াও অসম্ভব হইত না, যদি আমরা বহুকাল (বহু কোট বৎসর ) বাচিতে পারিতাম। ব্ৰহ্মাও প্রকৃত পক্ষে এইরূপ কি-না তৎসম্বন্ধে নিশ্চয়ত না হইলেও গণের জলোচনার বিষয়ীভূত হইল । , v : GH ఏరsర. ডি. সীটার যেমন সম্পূর্ণ শূন্ত একটি জগতের স্বরূপ সম্বন্ধে মত প্রচার করিলেন, তেমনি আইনষ্টাইনও একটি স্বরূপের কল্পনা করিলেন। যদি ব্ৰহ্মাণ্ডের সমস্ত জড়পদার্থকে সৰ্ব্বত্র সমভাবে বিকীর্ণ করা যায় এবং সমস্ত জড়পরমাণুর মধ্যে পরম্পর কোন প্রকার আকর্ষণ-বিকর্ষণাদি শক্তি না থাকে তাহা হইলে সমগ্র ব্রহ্মাওটি একটি সসীম আকার ধারণ করিবে। এবং সমগ্র ব্ৰহ্মাণ্ডের আয়তন সমগ্র জড়সমষ্টির উপর নির্ভর করিবে। পরে দেখা গিয়াছে, আইনষ্টাইনকল্পিত এই জগৎ গণিতের নিয়মানুসারে স্থিতিপ্রবণ নহে । প্রকৃত ব্ৰহ্মাগুটি কিন্তু ডি. সাঁটার-কল্পিত জগতের ন্যায় হইতে পারে না। কারণ, আমরা স্পষ্টই দেখিতে পাইতেছি, সমগ্র স্থান শূন্ত নহে। ইহা আইনষ্টাইনকল্পিত জগতও হইতে পারে না, কারণ ইহার জড়পদার্থসমূহ সৰ্ব্বত্র সমভাবে বিকীর্ণ নয়। আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের প্রকৃত স্বরূপ এই দুই স্বরূপের মাঝামাঝি হওয়াই সম্ভব। ১৯২২ সালে ফ্রীড মান নামক বৈজ্ঞানিক আইন্‌ষ্টাইনের মাধ্যাকৰ্ষণতত্ত্ব সম্বন্ধে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তাহাতে দেখা যায়, ব্ৰহ্মাণ্ডের স্বরূপটি সম্পূর্ণ স্থির এবং অপরিবর্তনীয় নাও হইতে পারে। পাচ বৎসর পরে ১৯২৭ সালে লে-মেতর নামক পণ্ডিত পুনরায় ফ্রীড মান-প্রকটিত মতগুলি এবং তৎমতানুসারে জ্যোতিযের কতকগুলি ফলাফল নির্ণয় করিয়া একটি অতি মূল্যবান গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখেন। ইহাতেও দেখা গেল যে, ব্ৰহ্মাওটিকে স্থির ও অপরিবর্তনীয় মনে না করিয়া যদি ইহাকে ক্রমবিবৰ্দ্ধমান মনে করা যায় তাহা হইলেই জ্যোতিষের অনেকগুলি সমস্তার সমাধান হয়। অতিদূরবর্তী এক শ্রেণীর জ্যোতিষ্কের ষে অদ্ভুত গতির কথা ইতিপূৰ্ব্বে উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহারও কারণ এই মতানুসারে নির্ণীত হইতে পারে। এডিংটন-প্রমুখ কয়েকজন প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক এই ক্রমবিবৰ্দ্ধমান জগতের কল্পনাটি ব্ৰহ্মাগুের প্রকৃত স্বরূপ বলিয়া বিশ্বাস করেন। তবে এ-সম্বন্ধে স্থিরনিশ্চয়তা অদূর ভবিষ্যতে হইবে বলিয়া মনে হয় না। উপরি উক্ত ক্রমবিবৰ্দ্ধমান জগতের পরিকল্পনাপ্রস্তুত গণনার সাহায্যে ব্ৰহ্মাণ্ডের আয়তন সম্বন্ধে যেটুকু জ্ঞান বা ;