পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পেীg: —to নানবাবু লজ্জিত হবার নাম মাত্র নেই। বলে চললেন— আর বলবেন না মশায় । ভেঙে ভেঙে .হৃদয়টা একেবারে গুড়িয়ে ধূলো হয়ে গেছে। তবুও তো মশায় একদিনের জন্তেও খাওয়াদাওয়া অরুচি হ’ল না। দিব্যি ঘুরে ফিরে বেরাচ্ছি। ফুটবল খেলছি, সিনেমায় যাচ্ছি, চা খাচ্ছি ; ওহে, ভাল কথা মনে-ওরে অতুল, স্বশীলবাবুর জন্তে এক কাপ চা নিয়ে আয়— তারপরে আবার—দেখুন সুশীলবাবু? নতুন কিছু একটা করুন। ও হৃদয়ভাঙা বড় পুরোণো হয়ে গেছে । বরং মশায় হাত-পা যাহোক একটা ভাঙন, তবু একটু রোমাটিক বলে মনে হবে। কিন্তু, আপনার মত ছেলে, প্রেমে হতাশই বা হলেন কেন ? অতিকষ্টে দুটো কথা মুখ দিয়ে বার করলুম, আমি গরিব— কথাটা বলতে গিয়ে সত্যিই আমার গলাটা কেঁপে গেল। এমন কি তখন একটু চেষ্টা করলে আমার চোখ দিয়ে দু-ফোট জলও বেরিয়ে যেত । অতুল চা নিয়ে এল। একহাতে আমার সামনে পেম্বালাটা ধরে আর এক হাত আমার পিঠে মোলামেমভাবে বুলোতে বুলোতে নয়ানবাবু বললেন,—খেয়ে ফেলুন, খেয়ে ফেলুন। প্রেমে চায়ের মত উপকারী জিনিষ আর নেই— সত্যিই রাগ হয়ে গেল ; একজনের হৃদয়ের গভীরতম ব্যাপার নিয়ে,-ছ্যা গভীর ব্যাপার বৈ কি,-ছবিরাণীর সঙ্গে ষে আমার মিলন হ’ল না, সে কি একটা কম ট্র্যাজেডি" ? একটু কড়া স্বরেই বললুম, দেখুন, কারুর হৃদয় নিয়ে— নয়ানবাবু দ্রুতগতিতে বলে গেলেন,—আহাঁহ, চটেন কেন ? আমি কি বুঝি না ? বাস্তবিক বলছি, এই অবস্থা আমার অন্ততঃ পাচ বার হয়েছে। স্বাটকেসের মধ্যে পোটালিয়াম সায়ানাইডের শিশি এখনও লুকানো আছে। দেখতে চান তো দেখাতে পারি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি মশায়, যত উপকার পেয়েছি এই চা থেকে, তেমন আর কিছুতেই পাই না। এর পর মেসে কারুর কাছে আর কথাটা গোপন রইল না । ব্যাপারটা নিয়ে অল্প সকলের আড়ালে শৈলেনের সঙ্গে করিস্ । আমি মনে মনে ভাবি, এই অস্ত্রাণ মাস পর্যন্ত, তারপর শৈলেন হতভাগা আর আমার মুখ দেখবেন না। । প্রফুল্প দেওঘর থেকে তখনও ফেরেনি। ছবিটা তখনও আমার ঘরে বিরাজ করছে । কয়েক বার ইতিমধ্যে ভেবেছি যে, অপরিচিত মেয়ের ছবি নিয়ে রহস্তটা বেশী দূর চালানো উচিত নয়, কিন্তু নেহাৎ আলস্তেই আর ছবিট নামানো হয়ে ওঠেনি । - - * এতদিন ক্রমাগত নির্জনতা সন্ধানের পর, এই একান্ত স্থিত মোটর নীরব দীর্ঘ দিনগুলি আমার কেমন লাগছে এবং তাদের অবসরবহুল নিরুদ্বেগ ছায়া-রৌদ্রপাতে আমার মনের মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে কি-ন, এসম্বন্ধে আগ্রহ হওয়া স্বাভাবিক । বাস্তবিক পক্ষে ভাল লাগছে কি মন্দ লাগছে, সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। তবে একথা ঠিক যে, সন্ধ্যার ঝোকে হঠাৎ মনের মধ্যে একটু খুঁতখুতের আবির্ভাব হয়—কি যেন হওয়া উচিত ছিল, হচ্ছে না। ছাদের ওপর ইজিচেয়ারটা টেনে আকাশের দিকে চেয়ে বসে থাকি, দেয়ালের পাশে অশখ গাছটায় হাওয়া লাগে, কিন্তু বেচার হাওয়ায় সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে দোল খেতে লজ্জা বোধ করে, শহুরে মানুষ হয়েছে সে, একান্ত পাড়াগেয়ে গাছের মত অবাধে উৎসাহ প্রকাশ করা তার পক্ষে অসম্ভব। ছাদের জালসের ওপর দু-একটা পাখী দেখি, মনটা সাড়া দেয় না। মনে হয় আজকাল ওরা জ্ঞান-বৃক্ষের ফল খেতে আরম্ভ করেছে। একটু নিরর্থক ডাকা নেই, আকাশে বিনা কারণে পাখা মেলে দেওয়া নেই, শুধু নজর আছে ঐ উঠোনটার দিকে, যেখানে মাছকোট হয় এবং উচ্ছিষ্ট পড়ে । * এই ক্রমশঃ জমে ওঠা বিরক্তিটুকু একদিন আমার “চিন্তাধারা’ নামক খাতায় ঢেলে দেওয়া গেল—কলিকাতা শহরে নির্জনতা হচ্ছে একটা ‘কমেডিটি বা পণ্যদ্রব্য মাত্র। পাড়াগায়ের সেই নির্জনত, যা বহিঃপ্রকৃতির একটা অংশ, যার মধ্যে মনে হয় যেন একটা ব্যক্তিত্ব আছে, যাকে । উপভোগ করা যায়, অনুভব করা যায়, মনের মধ্যে একে নেওয়া যায়, তার সঙ্গে এই নির্জনতার তুলনা! আমার জো: