পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ সদ্ধি श्शब কয়েক দিন পরে দাদা একটা খবরের কাগজ লাগিল। আমি সেই সকল তৃণগুম্মাচ্ছাদিত সবুজ বর্ণের . ల8 Jo — হাতে করিয়া জাসিয়া বলিল, ‘নীরু, তুই কি যথার্থই চাকরি করৰি ; এই দেখ একটা কাজের বিজ্ঞাপন দিয়াছে।’ আমি উৎসাহের সহিত খবরের কাগজখানা খুলিয়৷ দেখিলাম,—ছোটনাগপুরের অন্তর্গত পলাশগড় রাজার রাজধানীতে একটি বালিক-বিদ্যালয়ের জন্য একজন আই.এ পাস শিক্ষয়িত্রীর প্রয়োজন। বেতন মাসিক ৩৫২ টাক, স্কুলে বোডিং আছে, তাহাতে বাস করিতে পারিবে ও সেখানে বিনা খরচে আহারাদি চলিবে । স্থান স্বাস্থ্যকর, রেলওয়ে ষ্টেশনের নিকটে । সাত দিন মধ্যে আবেদন করিতে হুইবে । আমি বিজ্ঞাপন পড়িয়া বলিলাম, “দাদা, আমার পক্ষে এই কাজই ভাল । বোডিঙে থাকা যাবে, মাহিনাও আমার পক্ষে কম নয়, ছোটনাগপুর স্বাস্থ্যকর জায়গা । তুমি কি বল ?” দাদা বলিল, “কিন্তু অত দূর তোকে যেতে দিতে পারি না । আমার মন কেমন করছে ।” আমি বলিলাম, “দাদা তুমি ভাবছ কেন ? রেলের ধারে, আর বেশী দূরও ত নয়, সাত আট ঘণ্টায় যাওয়া যায়। ছুটি হ’লে তুমি গিয়ে আমাকে দেখে আসতে পারবে । যদি কোন অন্ধবিধা হয় তবে আমি চলে আসব।” অনেক ভাবনাচিস্তার পর দাদা সম্মত হইল। আমি আবেদন পাঠাইলাম এবং দশ দিন পরে চিঠি আসিল যে, আমার আবেদন মধুর হইয়াছে । আমাকে অবিলম্বে সেখানে যাইতে হইবে । আমি বাড়ি ছাড়িয়া কখনও বিদেশে যাই নাই । আমার সাজসরঞ্জাম জোগাড় করিয়া আমি দুই দিন পরেই দাদাকে সঙ্গে লইয়া যথাস্থানে যাত্রা করিলাম। বৰ্দ্ধমান ছাড়াইয়া প্রাকৃতিক দৃপ্ত আমার নিকট সম্পূর্ণ নূতন ৰোধ হইল। স্বজল-স্বফল শস্তহামলা বঙ্গজননীর ক্রোড় ছাড়িয়া আমরা রুশ্ব শুষ্ক কঠিন প্রস্তরাকীর্ণ বিস্তীর্ণ প্রাস্তরের মধ্য দিয়া যাইতে লাগিলাম। রেলের দুই পাশ্বে কয়লার খনিগুলি যেন দৈত্যের মত মুখ ব্যাদান করিয়া অনল উদগীর্ণ করিতেছিল। ক্রমে আকাশের গায় মেঘের দ্যায় নীল পাহাড়ের রেখা ফুটিয়া উঠিল। দেখিতে দেখিতে রেলগাড়ী সেই সকল ক্ষুদ্র পাহাড়ের ধার দিয়া যাইতে ويس---- || } £ পাহাড় একদৃষ্টি দেখিতে লাগিলাম। আমরা যে ষ্টেশনে নামিলাম, সেখান হইতে পলাশগড় রাজবাড়ি প্রায় তিন মাইল। ষ্টেশনে বিস্তুর ছইয়ে ঢাকা গরুর গাড়ী ছিল, আমরা অন্ত কোন ধান না পাইয় তাহার একখানাতে উঠিলাম। আমি পূৰ্ব্বে কখনও গরুর গাড়ীতে চড়ি নাই, তাই নূতনত্বের জন্য প্রথমে বেশ ফুর্তি অনুভব করিলাম ; কিন্তু গাড়ী চলিতে আরম্ভ করিলে সেই প্রবল ঝাকানি ও ঘটর ঘটর শব্দযুক্ত মন্থর গতিতে আমার ভয়ানক বিরক্তি বোধ হইতে লাগিল। দাদা বলিল, “কি রে, কেমন লাগছে ? এ তে তোর কলকাতা শহর নয়, এখানে । ঘোড়ার গাড়ী, মোটর গাড়ী ত নেই।” আমি বলিলাম, “আমাদের সব রকম অভিজ্ঞতা লাভ ৷ করাই ভাল, দাদা। ঘাবড়ালে চলবে কেন ?” গাড়োমান বলিল, “আজ্ঞ্য। বেশী সময় লাগবেক নাই, রাজবাড়ি হোই দেখা যাচ্ছে। আমার এ গরু ঘোড়াকেও হার মানাবেক ।” এই বলিয়া সে গরু দুটিকে কষাঘাত করিল, তাহারা অমনি হঠাৎ গতির বেগ বাড়াইল আর আমি কাং হুইয়া দাদার ঘাড়ের উপর পড়িয়া গেলাম। তখন দু-জনেরই খুৰ হাসি । আমরা যখন রাজবাড়িতে পৌছিলাম, তখন সঙ্ক। উত্তীর্ণ হইয়াছে। এক জন রাজকৰ্ম্মচারী আসি আমাদিগকে স্কুল বোর্ডিঙে লইয়া গেল। এই স্কুলটি হাই স্কুল নহে, এম-ই স্কুল, তবে ক্রমে ইহাকে হাই স্কুলে পরিণত করার চেষ্ট হইতেছে । আর চারি জন শিক্ষয়িত্রী আছেন, আমাকেই হেড মিষ্ট্রেল হইতে হইবে। একথা শুনিয়া মনে একটু আনন্দ হইল। এখানে জার আমাকে সেই ক্লশ্ব স্বভাব মিস কাঞ্জিলালের স্থায় কোন লোকের অধীনে কাজ করিতে হুইবে না । এখন খিনি প্রধান শিক্ষয়িত্রী আছেন, তাহার নাম নিস্তারিণী ঘোষ । তিনি নিকটেই থাকেন, বোডিঙে আসিয়া আমার সহিত দেখা করিলেন এবং আমাকে সকল দেখাইলেন । বোর্ডিং স্বর নূতন হইয়াছে,— ছয়টি কক্ষ, তাহার মধ্যে দুটি আমার জন্ত নির্দিষ্ট হইয়াছে, একটি বসিবার ঘর, অন্তটি শয়ন-স্বর, আর চারিটি ঘরে বারটি বালিকা থাকে। এক জন পাচক