পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

અહે૭ ব্রাহ্মণ ও একজন চাকরানী আছে। এখানকার আহারাদির ব্যয়ের জন্য প্রতি বালিকার নিকট হইতে মাসিক পাচ টাকা করিয়া লওয়া হয়, বাকী যাহা পড়ে তাহ রাজসরকার হইতে দেওয়া হয়। আমার খোরাকীখরচও রাজসরকার হইতে দেওয় হইবে। 总 নিস্তারিণী আরও বলিলেন, এখন যিনি রাজা হইয়াছেন, র্তাহার নাম দেবরাজসিং, বয়স অল্প, প্রায় ত্রিশ বৎসর। তিনি বিলাত হইতে শিক্ষালাভ করিয়া আসিয়াছেন, স্ট্রীশিক্ষার দিকে তাহার অত্যন্ত উৎসাহ, স্ত্রীজাতির সর্বপ্রকার উন্নতিবিধানে কঁহার বিশেষ যত্ন । সেই জন্য অনেক টাকা ব্যয় করিতেছেন। বালকদিগের শিক্ষার জন্যও একটা ভাল হাই স্কুল আছে । আমরা এই সকল কথা শুনিয়া জিনিষপত্র যথাসম্ভব গোছগাছ করিয়া রাখিয়া আহারান্তে বিশ্রাম করিলাম। পরদিন প্রাতঃকালে উঠিয়া আমি, বোর্ডিঙে যে-সব মেয়ে থাকে, তাহাঙ্গের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করিলাম এবং জহাদের দুই জনকে সঙ্গে লইয়া শ্ৰীমতী নিস্তারিণীর বাড়িতে গেলাম। র্তাহার বাড়ি স্কুলের নিকটেই কতকটা পঞ্জীর মধ্যে। মেটে দেওয়াল ও টালির চালা দেওয়া একখানা বড় ঘর, আর ছোট ছোট খড়ের চালা দেওয়া তিনখানা ঘর ; ইহাদের মধ্যে একটা উঠান, বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। উঠানের এক পাশে কয়েকটা বেল লুই গোলাপ ফুলের গাছ। এই পাড়াগায়ের বাড়িঘর আমি প্রথম দেখিলাম,-- আমার বেশ ভাল লাগিল । নিস্তারিণী বিধবা, বয়স প্রায় ত্রিশ বৎসর হইবে, দুইটি শিশুপুত্র ও একটি কন্য লইয়৷ সেই বাড়িতে থাকেন। তাহার নিবাস পূর্ববঙ্গে । বিবাহের পূৰ্ব্বে হাই স্কুলে পড়িয়া মাটিক পাস করিয়াছিলেন, বিবাহের পরে আর পড়িতে পারেন নাই। র্তাহার স্বামী বি-এ পাস করিম কি একটা চাকরি করিতেন, কয়েক বৎসর হইল মারা গিয়াছেন, কিছু সঞ্চয় করিয়া যাইতে পারেন । নাই, সেই জন্ত তাহাকে এই চাকরি করিয়া পুত্ৰকস্তাদের লালনপালন করিতে হইতেছে । আমি তাহার এই বৃত্তান্ত গুনিয় তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “আপনি কেমন বোধ করেন। পরমুখাপেক্ষী হইয়া থাকার চেয়ে এই স্বাধীন ভাবে জীবিক উপার্জন আপনার কেমন লাগে * , ধ্ৰুপ্রবচনী টr 心○8○ তিনি বলিলেন, “আমার এই অসহায় অবস্থায় স্বামীর বাড়ি কিংবা বাপের বাড়ি পরাধীন হয়ে থাকার চেয়ে আমি বেশ আছি। তবে স্বামীর সঙ্গে বাস করে যেরূপ সুখে ছিলাম তার তুলনা হয় না।” আমি বলিলাম, “স্বামীর সঙ্গে থেকেও ত তার অধীন হয়ে থাকতে হ’ত ?” তিনি কতক ক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকাইমু থাকিয়৷ বলিলেন—“আপনি বলেন কি ? স্ত্রীলোকের স্বামীর সঙ্গে থাকার চেয়ে কি সুখ আছে ? স্বামীর অধীন হইয় থাকাকে কি কেউ পরাধীনতা মনে করে ? প্রকৃত ভালবাস জন্মিলে স্বামী-স্ত্রীতে কোন ভেদ থাকে না। এই ধরুন, যেমন রাধাকৃষ্ণের প্রেম—রাধা কখন কৃষ্ণের পায় ধরছেন, আবার কৃষ্ণ কথন রাধার পায় ধরছেন।” এই বলিয়া তিনি একটু হাসিলেন। আমিও সেই হাসিতে যোগ দিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, "আচ্ছা, আপনার স্বামীর কথা মনে পড়লে এখনও আপনার মনে কষ্ট হয় ?” এই প্রশ্ন গুনিয়া উছিার মুখের হাসি অমনি মিলাইষ্টা গেল, তিনি ছল ছল নেত্রে বলিলেন, “সেকথা আর জিজ্ঞেস করছেন কেন ? তবে প্রথম প্রথম যতটা অসহ ক্লেশ বোধ হ’ত, এখন ততটা নয় ; ক্রমে সয়ে গিয়েছে।” এই বলিয়া তিনি আঁচলে চক্ষু মুছিলেন। আমি হঠাৎ এরকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিম নিতান্ত অপ্রতিভ ও লজ্জিত হইলাম। আমার হৃদয় যেন পাষাণ, যেমন কিশোর বলিয়াছিল—সকলে ত সেরূপ নহে। বোডিঙে ফিরিয়া আসিয়া দেখি, দাদা বাড়ি রওনা হওয়ার জন্ত ব্যস্ত হইxাছে । আমি তাহাকে আর এক দিন থাকিয়া সব ভালরূপ দেখিয়া শুনিয়া যাইতে বলিলাম, কিন্তু দাদ বলিল, “আমার কলেজ কামাই হচ্ছে, আমি আর দেরি করতে পারিনে। যা দেখছি, তোর এখানে কোন অস্ত্রবিধা হরে বলে মনে হয় না. যদি কোন অস্ববিধ ঘটে, তবে আমাকে চিঠি লিখিস, আমি এসে তোকে নিয়ে যাব।” দাদা আহারাদি করিয়া বেলা দশটার সময় যাত্রা করিল, আমিও আহারাদি শেষ করিয়া আমার স্কুলের কার্ধ্যে প্রবৃত্ত হইলাম । ক্রমশঃ