পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ করিয়া ঐ দরখাস্ত ডাকে দিলেন। মহেশবাবু সরকারী চাকুরি পাইলেন । বাঁকুড়ায় মহেশবাবু ব্রাহ্মসমাজের সংলগ্ন বাসায় থাকিতেন। সঙ্গে থাকিতেন তাহার এক জ্যেষ্ঠ ভগিনী ও এক ভাগিনেয়, নিমু। নিমু এখন একজন বিখ্যাত অধ্যাপক ; লক্ষ্মেী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের প্রধান অধ্যাপক । তাহার ভাল নাম নিৰ্ম্মলকুমার সিদ্ধান্ত । আমরা যখন বাকুড়ায় ঘাই তখন নিমুর বয়স নয়-দশ বৎসরের অধিক হইবে না, হয়ত বা কিছু কম হইবে। নিমুকে মহেশবাবু হাতে গড়িয় মানুষ করিয়াছেন । মহেশবাবু তাহাকে বরাবর বাড়িতে পড়াহয়৷ সেকেণ্ড ক্লাসে স্কুলে ভৰ্ত্তি করিয়া দেন। প্রবেশিক পরীক্ষায় নিমু ১৫ টাকা বৃত্তি পায়। অতঃপর এখান হইতে এম-এ পাস করিয়া বিলাত যায়। মহেশবাবু নিজে শিক্ষক, তাই ছেলেদের পাঠ্যপুস্তক কি হওয়া উচিত তাহা তাহার বিশেষ জান ছিল। যতদূর মনে হয় তিনি তাহাকে রয়্যাল রীডার সৗরীজ পড়াইতেন ; এবং সহজ ইংরেজী গল্পের মধ্য দিয়া ভাষা শিথাইবার জন্য তাহাকে রিভিউ অব রিভিউজ আপিস হইতে প্রকাশিত শিশুপাঠ্য পুস্তকমালার ( "Books for the Bairns' Series) AGosfi or “fo দিতেন । আনন্দের মধ্যে যে শিক্ষা হয় তাহাতে শ্রমবোধ হয় না—পরস্তু শাসনের শিক্ষা অনেক সময় ফলপ্রদ হয় নী— হাজারীবাগে এ বিষয়ে তাহার সহিত অনেক কথা হইয়াছিল। র্তাহার ও আমাদের বাস স্কুলের নিকটেষ্ট ছিল ; প্রায় প্রত্যহুই দু-এক “ঘণ্টা” অবসর থাকিত । মহেশবাবু সে সময় অলসভাবে স্কুলে না কাটাইয়া বাসায় চলি আসিতেন এবং ঘণ্টা পড়িবার পূৰ্ব্বেই স্কুলে যাইতেন। তাহার সেই ছোট ঘরটি ইংরেজী ও সংস্কৃত পুস্তকে পূর্ণ ছিল । বাংলা পুস্তকের মধ্যে বঙ্গবাসী সংস্করণের পুরাণাদি অনেকগুলি ছিল । আমরা যে সময়ে বাঁকুড়ায় ছিলাম, তখন শ্রদ্ধাস্পদ অম্বিকাচরণ সেন জেলা-জজ ছিলেন । জজ বাহাদুরের সহিত মহেশবাবুর আলাপ হইল। মহেশবাবু ও সেন মহাশয় তখন উভয়েই ঋগ্বেদ পড়িতেছিলেন। জজ সাহেবকে কাহারও বাড়িতে যাইতে দেখি মাই ; কিন্তু দেখিলাম তিনি প্রায় প্রত্যহ সন্ধ্যাকালে ঐ দরিদ্র শিক্ষকের স্কুটীরে উপস্থিত হইতেন ; এবং কোনও দিন বারান্দায় কোনও দিন বা উঠানে বেতের মহেশচন্দ্র ঘোষ రిa ) o মোড়ায় বসিয়া উভয়ে ঋগ্বেদের আলোচনা করিতেন। नकर्म সময়ে আমরাও একখান বেঞ্চ টানিয়ু লইয়। নিকটে বসিম নীরবে ঐ সদালাপ উপভোগ করিতাম ; এইরূপে কোনও কোনও দিন রাত্রি ৯টা অতিবাহিত হইয়া যাইত, তখন জজ সাহেব বাসায় ফিরিতেন। প্রত্যহ সকালে বেড়াইতে যাওয়া তাহার অভ্যাস ছিল ; আমরা তাহার মত সকালে উঠিতে পারিতাম না। তিনি সকালে উঠিম| আমাদিগের বাসায় উঠানে দাড়াইয়া আমাদিগকে জাগাইতেন এবং সঙ্গে সঙ্গে "জাগো সকলে, অযুতের অধিকারী, তোমরা জাগে|” ইত্যাদি এত ব্ৰহ্মসঙ্গীতটি গাহিতে থাকিতেন। প্রায় - এক ঘণ্ট। বেড়াইয়া বাসায় ফিরিয়া লিখিতেন বা পড়িতেন। তংপূৰ্ব্ব হইতে মধ্যে মধ্যে মাসিক কাগজে প্রবন্ধ দিতেন । ‘প্রবাসী তখন এলাহাবাদ হইতে প্রকাশিত হইত ; যতদূর মনে হয় । এই সময়েই প্রবাসী’তে তাহার এক-আধটি করিয়া প্রবন্ধ বাহির হইতে থাকে । বিদ্যার এমন একনিষ্ঠ সাধক কম দেখিয়াছি । ঋগ্বেদ পড়িতে পড়িতে তাহার আবেস্ত পড়িতে ইচ্ছা হইল। মূল ভাষা শিক্ষা করিয়া মূল আবেস্ত পড়িতে লাগিলেন। তখন তিনি বৌদ্ধ-ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে অধিক আলোচনা করেন নাই ; পরে দেখিয়াছি বৌদ্ধধৰ্ম্ম ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্মগ্রন্থ সম্বন্ধে তাহার জ্ঞান গভীর। হাজারীবাগে একখানি খাত দেখাইলেন,— একখানি পালি গ্রন্থের অধিকাংশ রোমান অক্ষর হইতে বাংল৷ অক্ষরে রূপান্তরিত করিয়াছেন। তিনি আমরণ ছাত্রই ছিলেন এবং অধ্যয়নই যে ছাত্রের তপস্ত, তাহা তিনি বিশেষ করিয়া হৃদয়ঙ্গম করিয়াছিলেন । বাকুড়ায় থাকিতে দেখিতাম যে স্কুলের অধ্যাপনাক্রম প্রস্তুত করা হইতে লাইব্রেরীর জন্ত পুস্তক-নিৰ্ব্বাচনের ভার মহেশবাবুর উপর ন্যস্ত ছিল। অনেক স্কুলেই দেখা যায় শিক্ষকদের মধ্যে একটা দলাদলি ভাব থাকে ; কিন্তু এই অজাতশত্রু বালকস্বভাব শিক্ষকের কোনও দল ছিল না। বরং সম্ভবতঃ তাহারই প্রভাবে বাকুড়ার স্থলে দলাদলির স্বজন হয় নাই। মহেশবাবু সেকালের "এ" কোসের বি-এ। র্তাহার অপশুন্যাল বিষয় ছিল অঙ্কশাস্ত্র। এই জন্য স্কুলে তাহাকে ইংরেজী ও অক্ষ পড়াইতে হুইত, কিন্তু তাহার, প্রাণের টান ছিল দর্শনশাস্ত্রে । দর্শনশাস্ত্র