পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খুব দুৰ্ব্বল, হবে ?” কিশোর বলিল—“জর ক্রমে কমে যাবে, এখন অপারেশন না করলে কে যে আরও খারাপ হয়ে পড়বে। ম্যালিগন্তান্ট টাইপের কারবাঙ্কল, ধ। ধর্ণ করে বেড়ে যাচ্ছে ।" - মা বেহুস অবস্থায় যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করিতেছিলেন, এবং মধ্যে মধ্যে ভুল বকিতেছিলেন। একবার বলিলেন- “ছেলেটি বড় ভাল, কৃষ্ণনগরে বাড়ি, আমার নীরীর সঙ্গে বেশ মানাবে, বড় ভাল ছেলে ।” এই প্রলাপ-বাক্য শুনিয়া কিশোর আমার দিকে তাকাইয়া যেন একটু হাসিল । আমি মুখ ফিরাইয় বসিলাম। আবার কিছুক্ষণ পরে মা বলিলেন- “তোর আমাকে নিশ্চয়ই মেরে ফেলবি । ও আমি বিয়ে দেপে যাব, তোরা আমাকে মারিসনে, মারিসনে ৷” মার এই-সব কথা শুনিয়া আমি আর সেখানে বসিতে পারিলাম না । আমি চক্ষু মুছিতে মুছিতে আমার বিছানায় গিয়া শুইয়া পড়িলাম। এই সময় শঙ্কর উঠিয়া আসিল এবং কিশোরের কাছে বসিল । এই ভাবে রাত্রি কাটিল । পর দিন বেলা ১০টার সময় ডাঃ পাকড়াশী আসিলেন । কিশোর তাহার আগেই সুরথ বাবু ডাক্তারকে লইয়। আসিয়াছিল। শঙ্কর আর বাড়ি যায় নাই, এখানেই ছিল । ডাক্তারের মাকে একবার ভাল করিয়া দেখিলেন । তথন জর খুব কম ছিল। তখনই অপারেশন করা স্থির হইল । স্বরথ বাৰু ক্লোরোফৰ্ম্ম করিলেন ও নাড়ী ধরিয়া বসিলেন, কিশোর ঘড়ী ধরিল, ডাঃ পাকড়াশী ছুরি চালাইলেন। আমি ক্লোরোফৰ্ম্ম করিতেই পাশের ঘরে গিয়া বসিয়াছিলাম। ভয়ে আমার বুক কঁাপিতে লাগিল । আমি কত ক্ষণ সেভাবে কাটাইয়াছিলাম, আমার হুস ছিল না। পরে দাদা আসিয়৷ আমাকে যখন ডাকিল—“নীরু, আয় দেখে যা”, আমি তাহাকে বলিলাম--“মা বেঁচে আছেন ত, দাদা ?” দাদা বলিল--"ইঃ, চোখ চাইছেন, তবে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে।” আমি গিয়া দেখিলাম, ডাক্তারের ড্রেসিং শেষ করিয়াছেন। আমাকে দেখিয়া কিশোরের চক্ষু উজ্জল হইয়া উঠিল, সে বলিল- “আপনি বড় ভয় পেয়েছিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছায় নির্বিম্নে শেষ হয়েছে।” শঙ্কর বলিল—“আমি ত আগেই বলেছিলাম, ডা: পাকড়াশীর হাত খুব সাফাই ।” এর মধ্যে অপারেশন করা কি ভাল সঙ্কি $3 দাদা বলিল- “অপারেশন ত হ’ল, এখন শেষটা কি রকম দাড়াবে সেই ত কথা।” - আমরা একটু দূরে দাড়াইয়া এই সব আলাপ করিতেছিলাম। ডাক্তার দুই জন তখন মায়ের পাশে চৌকাতে বাসুয়াছিলেন। স্বরথবাবু যন্ত্রপাতি ধুইতে ধুইতে কিশোরকে ডাকিলেন, কিশোর গিয়া তাহাকে সাহায্য করিল। পরে ডাঃ পাকরাশী বাহির হইলেন, আর সকলেও তাহার সঙ্গে বাহিরে গেল। আমি অমনি মার কাছে গিয় তাহার মাথায় হাত দিয়া বসিলাম। মা আমার দিকে চোখ মেলিয়া চাহিয়া বলিলেন “আমার পিঠে অস্ত্র করেছে, উঃ বড় যন্ত্রণা, পিঠ নাড়তে পারছি না।" আমি বলিলাম–“ম, তুমি একভাবে পড়ে থাক, নড়াচড়া করে ন৷ ” এই বলিয়া জামি বাভাস করিতে লাগিলাম। দাদা আসিয়া বলিল- “ডাক্তারেরা লাইব্রেরী-ঘরে বসেছেন, তারা এখনই বাবেন, তাদের টাকা দিতে হবে ।” আমি বলিলাম---“যা দিতে হবে দিয়ে দাও, আর যা-যা বলেন নোট ক’রে রাগ।” দাদা বলিলেন - “কিশোরবাবু নোট করছেন, আমি যাই, তুই একবার আসবি না ?” আমি বলিলাম—“আমি আর গিয়ে কি করব, দাদা, যা করতে হয় তুমিই কর। আমি এখন মা’র কাছে বলি, তার বড় যন্ত্রণা হচ্ছে ।” প্রমীলা ইতিমধ্যে আসিয়া বসিয়াছিল। সেও এতক্ষণ ভয়ে জড়সড় হইয়া অন্য ঘরে ছিল, কাছে আসিতে সাহস করে নাই। ডাক্তারদের বিদায় করিয়া দিয়া দাদা তাহার বন্ধুদের সহিত মা’র কাছে আসিল । কিশোর আমাকে বলিল— “এই দেখুন, ডাঃ পাকড়াশী এই-সব ইনষ্ট্রাকগুন (উপদেশ ) দিয়াছেন।” এই বলিয়া সেগুলি পড়িয়া শুনাইল । পরে বলিল - “এই প্রেস্ক্রিপশন অনুসারে ওষুধ এনে এখন খাওয়াতে হবে, আমি সে ওষুধ এনে দিশে যাচ্ছি। আমার কলেজ আছে।” আমি বলিলাম—“ওষুধ নিয়ে আম্বন ; এখানে খেয়ে যাবেন। আর কলেজের ছুটির পর একবার আসবেন ::