পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रैरे পরিচন্ধের সম্ভাবনা ছিল না, সেই একটি পরিবারের সহিত অকস্মাৎ জড়িত হইয়া পড়িলাম। স্বকুমারের মা যে-দিন মারা যান, আমি তার পর দিন শুধু ভদ্রতার খাতিরে তাহদের বাড়িতে গেলাম। সুকুমার আমাকে লাইব্রেরী-ঘরে বসাইয় রাখিয়া বোধ হয় তাহার ভগিনীকে সংবাদ দিতে গেল। অল্প ক্ষণ পরেই আসিয়া বলিল-নীরু শোকমূচ্ছিত হুইয়া শয্যাগ্রহণ করিয়াছে। আমি যে তাহার ভগিনীর সহিত দেখা করিতে আসিয়াছি একথা তাহার মনে কেন আসিল জানি না। আমি বলিলাম—“আমি তার সঙ্গে দেখা করতে আসিনি, আপনারা কেমন আছেন জানতে এসেছি।” স্থকুমার বলিল –“আমরা ত এক রকম আছি, কিন্তু নীরুকে নিয়েই মুস্কিল হয়েছে। সে কাল থেকে জলবিন্দু মুখে দিচ্ছে না।” আমি বলিলাম, “হঠাৎ এরূপ বিপদ ঘটবে আমরা কখন ভাবতেও পারিনি। তার মনে একটা গুরুতর আঘাত লেগেছে। প্রকৃতিস্থ হতে কিছু সময় লাগবে। আপনাদের কোন জিনিষপত্র কেনবার দরকার হলে আমাকে বলবেন, এনে দেব।” স্বকুমার বলিল— “আচ্ছা, কাল আপনি একবার আসবেন । আপনার উপর আমাদের যতটা দাবি আর কারু উপর ততটা নেই । হুবিষ্যি করবার জন্য ভাল ঘি কোথায় পাওয়া যাবে, আপনি একটু খোজ করবেন।” আমি খোজ করিব বলিয়া চলিয়া আসিলাম । আমি পর দিন সকালে অনেক খোজ করিয়া এক সের গাওয়া ঘি কিনিলাম এবং তাহা লইয়া সুকুমারদের বাড়িতে গেলাম। মুকুমার ঘি পাইয়া খুব সস্তুষ্ট হইল। আজ আমি তাহার সঙ্গে নীরু দেবীর ঘরে গিয়া দেখিলাম, তিনি শয্যাম গুইয়া চক্ষু মেলিয়া দেওয়ালের দিকে তাকাইয়া আছেন। আমার আগমন জানিয়াও একটুও নড়িলেন না, বা মাথায় কাপড় টানিয়া দিলেন না, বা কোন প্রকার লজ্জার ভাব দেখাইলেন না। যে ভাবে পড়িয়াছিলেন সেই ভাবেই রছিলেন । সুকুমার আমাকে সেখানে রাখিয়া অন্ত ঘরে গেল। আমি মিনিট-পাঁচেক বসিয়া রহিলাম, কোন কথা বলিলাম না, পরে উঠিয়া আসিলাম। প্রমীলা বলিল, “আজ ছই দিন ঐ এক ভাবেই পড়িয়া আছেন, কোন কথা বলিতে গেলে বিরক্ত হন, অনেক জেদ করাতে কাল রাত্রে একটু দ্বধ । Sово খেয়েছিলেন। কাল সন্ধ্যাবেলা দাদা এসেছিলেন, তার মুখের দিকে চেয়ে কেঁদে ফেললেন, দাদা কত বুঝালেন।” আমি বলিলাম, “কাদা ভাল ” এই বলিয়া আমি চলিয়া আসিলাম। আমার বুকের মধ্যে খপ করিয়া একটু বিধিল । আমি কি তবে তার কেউ নয়? আমাকে যেন চিনিতেই পারিলেন না। আমার অদৃষ্ট । ইহার পরে দুই দিন আমি আর স্বকুমারদের বাড়িতে ধাই নাই । তৃতীয় দিন সন্ধ্যাবেল শঙ্কর আসিল । সে হাসিতে হাসিতে বলিল, “কি রে কিশোর, আমাদের এক যাত্রায় পৃথক ফল হ’ল ” আমি বলিলাম- “সে কি রকম ?” শঙ্কর বলিল, “আমি তোকে সঙ্গে ক’রে প্রমীলাদের বাড়ি নিয়ে গেলুম, তোর ভাগ্যে হ’ল স্ত্রীলাভ, আর আমার ভাগ্যে হ’ল বন্ধুহানি।” “বন্ধুহানি কি রকম ?” “বুঝলি না, তোর সঙ্গে আলাপের পূৰ্ব্বে নীরু দেবীর সঙ্গে আমি ত খুব বন্ধুত্ব জমিয়ে নিয়েছিলুম।" ত৷ গেল কিসে? এখনও ত তার সঙ্গে তোমার খুব ভাব আছে ।" “সে ভাব আর কয় দিন থাকবে রে ? তুই কি আর থাকতে দিবি ?” “কেন দেব না ? আমার হাত কি ?” “তুই যে তার বাগদত্ত স্বামী।” “তিনি যদি আমাকে স্বামী বলে স্বীকার না করেন ?” “করবেন বই কি ! মার মৃত্যুকালের আদেশ, তা কি কেউ অমান্য করে ?” “আমার বিরুদ্ধে তার যে মস্ত প্রেজুডিস (প্রতিকূল সংস্কার ) তা কি ভুলতে পারবেন ? আমি হচ্ছি স্ত্রীজাতির অবমাননাকারী পাপাত্মা দুঃশাসন, মনে আছে ত ?” “ই, মনে আছে।” “আর তার লেখা পড়ে আমি যেরূপ বুঝেছিলেম, তিনি হয়ত বিয়েই করবেন না – এতদিন ত করতে রাজী হন নাই।" “কিন্তু জানিস ত শেক্সপীয়ার স্ত্রীজাতির কি নাম দিয়েছেন—“ফ্রেণ্ট", দাই নেম ইজ ওম্যান " তার মত কনহে নাৰী, চঞ্চলমতি নাম ত তোমারি।"