কাতিক বদলাতে কতক্ষণ ? যা’ক সে কথা, আমি এখন ওদের বাড়িতে যাচ্ছি।” “বন্ধুত্ব রক্ষা করতে বুঝি ?” “হা, তাদের এই বিপদের সময় আমাদের আত্মীয়স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া উচিত নয় কি ? তুইও আমার সঙ্গে চল ।” আমি বলিলাম “ শঙ্করদ, তোমার সঙ্গে তাদের একটা মিষ্ট সম্বন্ধ আছে, তুমি অবশ্যই যাবে। কিন্তু আমার সঙ্গে ত এখন পৰ্য্যন্ত কোন সম্বন্ধ হয় নি। আমি গেলে বরং তোমাদের আলাপের ব্যাঘাত হবে ।” শঙ্কর “তাই বুঝি ?” বলিয়া চলিয়া গেল। আমি শঙ্করের সঙ্গে হুকুমারদের বাড়ি গেলাম না বটে, কিন্তু শঙ্করের সহিত নীরু দেবীর কি কথাবাৰ্ত্ত হয় তাহ জানিবার জন্য আমার মনে কৌতুহল জাগিয়া রহিল। সেজন্য শঙ্কর কখন ফিরিয়া আসে তাহ দেখিবার জন্য উৎকণ্ঠিত হইয়া রাস্তার ' ধারের বারান্দায় বসিয়া রহিলাম। প্রায় এক ঘণ্ট। পরে *ঙ্করকে আসিতে দেখিলাম। সে আমাকে ডাকিল, আমি ক্রাঙ্গকে উপরে আসিতে বলিলাম। সে বলিল “ন রে, এখন আমার সময় নেই, বড় দেরি হয়ে গেছে । তুই কাল সকালে একবার ওদের বাড়িতে যাস, বিশেষ কথা আছে।” এই বলিয়| শঙ্কর দ্রুতপদে চলিয়া গেল । আমাকে কে ডাকিয়াছে সুকুমার, না নীরু দেবী, কেন ডাকিয়াছে, শঙ্করের সঙ্গেই বা তাঁহাদের কি কথা হইয়াছে, জানিবার জন্ত আমি উৎসুক হইলাম। কিন্তু শঙ্কর কোন কথা প্রকাশ না করিয়া তাড়াতাড়ি চলিয়া গেল, ইহারই বা অর্থ কি ? এই সকল ভাবিতে ভাবিতে আমি রাত্রে ঘুমাইয়৷ পড়িলাম। পর দিন সকালে সাতটার সময় সুকুমারদের বাড়িতে গেলাম । স্বকুমার আমাকে দেখিবামাত্র নীরু দেবীর কাছে লইয়। গেল। নীরু দেবী তাহার মায়ের ঘরে বিছানায় গুইয়া ছিলেন। আমাকে দেখিয়া উঠিয়া বসিলেন, এবং অন্য দিকে মুখ ফিরাইয়। বলিলেন,—“দেখুন স্বরধবাবু ডাক্তার সেদিন বৈকালে এসে অনেক রাত্রি পর্য্যন্ত ছিলেন, সেজন্য র্তাকে কিছু দিতে হবে। যা দিতে হয় আপনিই নিয়ে দিয়ে আসবেন।” আমি বলিলাম—“আচ্ছা, আমি তাকে একবার জিজ্ঞেস जचिह्न ২ও করে আসি, পরে কাল টাকা নিয়ে যাব। আপনি কেমন আছেন ?” নীরু দেবী দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, “আমি আর কেমন থাকব ? আমি যা আশঙ্কা করেছিলুম; শেষটায় তাই হ’ল। মা যে এত শীঘ্র আমাদের ছেড়ে যাবেন, তা স্বপ্নেও ভাবি নাই।” এই বলিয়। তিনি কাদিয়া ফেলিলেন। আমি সাজনা দিয়া বলিলাম,--“কে (cae) যে হঠাৎ এত খারাপ হবে তা ডাক্তারেরাও মনে করেন নাই। মা বুড়া হয়েছিলেন, অপারেশন করার শকু ( ধাই ) সহ করতে পারলেন না। এ সকল ঈশ্বর-ইচ্ছা ঘটনা, মানুষের এতে কোন হাত নেই। আপনি এ ভাবে পড়ে থেকে আর শরীর খারাপ করবেন না ।” আমার এই কথার পর তিনি আর কিছু বললেন না। আমিও উঠিলাম। বাহিরে গেলে মুকুমার বলিল, “কিশোর বাবু, আপনি চ খেয়েছেন ?—এখানে চ প্রস্তুত।” আমি বলিলাম--“আমি চ খেয়ে বেরিয়েছি, এখনই কলেজে যেতে হবে। আমি স্বরথবাবুর কাছে শুনে কাল এসে টাকা নিয়ে যাব।” আমি এই বলিয়া বাহির হইলাম । ইহার পরে মুকুমার তাহার মায়ের শ্রাদ্ধ যথাসময়ে সম্পন্ন করিল। আমাকে পূৰ্ব্ব হইতে তাহাদের বাড়িতে গিয়া দেখিয়া-গুনিয়া কাজকৰ্ম্ম করিবার জন্য আমার বাসায় আসিয়া সুকুমার বলিয়াছিল। আমি ত সময়-মত গিয়া কাজকর্শ্বের সাহায্য করিলাম। শঙ্করও আসিয়া যথারীতি কাজ করিল। নীরু দেবীর সহিত নেহাৎ কাজের কথা ভিন্ন আমার বিশেষ কোন কথা হয় নাই। কিন্তু আমার সম্বন্ধে তাহার মনোগত ভাব কি তাহা বুঝিতে না পারিস্থা আমি সৰ্ব্বদা উৎকণ্ঠিত থাকিতাম। সাহস করিয়া কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে পারি নাই। আবার সদ্যমাতৃশোকাতুর ব্যক্তিকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করাও নিতান্ত অশোভন ও হৃদয়হীনতার পরিচায়ক বলিয়া বোধ হইল । R আমার বাসায় আসিল। আমি বলিলাম--“কিছে, কি গল্প
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।