পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তরঙ্গিনী কিন্তু একবিন্দু রাগ করে নাই, তেমনি হাসিভর মুখ। খানিক পরে উমানাথের রাগ পড়িয়া আসিলে পুনরপি প্রশ্ন হুইল-ঠাকরুণের ওখানে স্থিতি হয়েছিল ক'দিন, ওগো ? উমানাথ সদস্তে বলিতে লাগিল—ক’দিন আবার, যাবার পথেই পড়ল বলেই ত! দলের সমস্ত লোক হাটখোলার পাশে উকুন খুঁড়ে নিল, আমি ত আর তা পারি নে ? হাজার হোক পজিসন আছে একটা— বলিয়া পজিসন-মাফিক গম্ভীর হুইল । তবু তরঙ্গিনী সমীহ করিল না। বলিল—তা জানি । কিন্তু জিজ্ঞাসা করছি, পজিসনটা টি কলো কি করে ? অতিথ বলে হাতজোড় করে গিয়ে তার উঠোনে দাড়ালে ? কথাবাৰ্ত্তার ধরণে মনে মনে শঙ্কিত হইলেও উমানাথ মুখের আস্ফালন ছাড়িল না - আমার বয়ে গেছে । হঠাৎ দেখা হ’ল, তারপর আমারি হাত ধ’রে টানাটানি, সে কি নাছোড়বান্দা... কিছুতে শুনবেন না। --তারপর ? —তারপর বিরাট আয়োজন। জগদ্ধাত্রী দিদি আর বাকী রাখেন নি কিছু। দুধ-ঘি, সন্দেশ-রসগোল্লা, মাছমাংস বাটির পর বাটি আসছে পাতের ধারে ; ফুরোয় ন!— গম্ভীর কণ্ঠে তরঙ্গিণী কহিল—খাওয়া-দাওয়ার পরে ? উমানাথ চমকিয়া গেল । ঝড় প্রত্যাসন্ন। সে পলাইবার পথ খুঁজিতে লাগিল। কিন্তু তাহার আবশ্বক হইল না। ছোটবোঁ আসিয়া ঢুকিল ; তার পিছনে মেজবোঁ । দুটিই অল্প বয়সী। ক্ষেত্রনাথের মেজ ও ছোট ছেলের বে। বিয়ে এই বছর দুই তিন মাত্র হইয়াছে। জলচৌকীর পাশে তেলের বাটি নামাইয়া রাথিয় ছোটবোঁ বলিল–নাইতে যান কাকাবাবু, রাত্তিরে ত উপোষ করে আছেন। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম--তা, আমাদের ডাকতে পারলেন না—এমনি আপনি এক দৌড়ে নেয়ে আহুন. নয় ত দেখবেন কি করি—। বলিয়া দুটি বেী মুখোমুথি চাহিতেই ছোটবে খিলখিল করিয়া গঢ়ি উঠল। দেয়াপাড়া-জাগুলগাছি অঞ্চলে ধাহাদের গতামাত আছে উমানাথ চাটুজে অর্থাৎ ছোট চাটুজের পরিচয় তাহাদিগকে দেৰৗম্বাস রায়ের সিজুক లి) দিবার দরকার নাই। বর্ষার সমটা এই সৰ্ব্বসমেত মাস চারেক বাদ দিয়া বছরের বাকী দিনগুলি ছোট চাটুঙ্গের দলের গাওনা লাগিয়াই আছে। দলট। কিন্তু হিসাবমত উমানাথের নয়, সে বঁাধনদার মাত্র। এবং রাহাখরচ ও টাকাটাসিকিট ছাড়া প্রাপ্তিও এমন কিছু নাই। তাই ঘরবাহিরের ক্রমাগত হিতোপদেশ শুনিতে শুনিতে এক একসময়ে উমানাথ প্রতিজ্ঞ করিয়া বসে, ছোটলোকের সমাজে ছড়া কাটিয়া বেড়াইয়া পিতৃপুরুষের মান ইঙ্গত যা ডুবিয়াছে ডুবিয়াছে— আর ডুবাইবে না। দিন কতক বেশ চুপচাপ কাটিয়া যায়, সে দিব্য বাড়ি বসিয় গাইতেছে, বেড়াইতেছে, ঘুমাইতেছে,— হঠাৎ কেমন করিয়া খবর উড়িয়া আসে, অমুক গ্রামে ভারী হৈ-চৈ-তিন দলে কবির লড়াই, কান্তিক দাস তার শিষ্য অভয়চরণ আর বেহারী চুলিকে লইয়া পূব অঞ্চলের সমস্ত বায়ন ছাড়িয়া দিয়া চলিয়া আসিতেছে। পরদিন সকাল হইতে আর ছোট চাটুজ্জের সন্ধান নাই, থেরোবাধা খাতাখানাও ঐ সঙ্গে অন্তৰ্দ্ধান করিয়াছে। বিকালের দিকে মঠবাড়ি হুইতে খোলের আওয়াজ আসিতে উমানাথ শশব্যস্তে ঘরে ঢুকিয়া চাদর কাধে ফেলিল । বগলে যথারীতি গানের খাত রহিয়াছে। — দাড়াও ছোটদাদু, আমি যাচ্ছি— ছ-সাত বছরের নিতাইচন্দ্র, কাল মারামারি করিতে গিয়া ফুলপাড় পৌধীন ধুতিখানার ক'জায়গায় ছিড়িয়া আনিয়াছে, তরঙ্গিনী তাহাই মেরামত করিতে লাগিয়াছে। উবু হইয়া বসিয়া বসিয়া নিতাই মনোযোগের সঙ্গে শিল্পকাৰ্য দেখিতেছিল, তাড়াতাড়ি বলিয় উঠিল—আজকে আর থাক রাঙাদিদি, উ-ই দাও । ছোটদাঙ্কু মেলায় যাচ্ছে, আমি যাব – তরঙ্গিনী মুখ টিপিয়া হাসিয়া বলিল—যাও তাই। ছোটাছ সন্দেশ কিনে খাওয়াবে— তারপর তরঙ্গিনী নাতিকে কাপড় পরাইম স্বন্দর করিয়া কোচ দিয়া দিল। গায়ে পরাইয়া দিল, সবুজ একটি ছিটের জাম। ফুটফুটে মুখখানি অতি যত্নে আঁচলে মুছাইয়া মুখচোখে কহিল—বর পাত্তোরটি চলেছেন। বেী নিয়ে আসা চাই কিন্তু নিতু বাৰু। - - -