পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԳԵ- t - জেলেরা তখন মাছ ধরিতেছিল। হলদে, নীল, শ্বেত, গৈরিক নানা রঙের ছোট ছোট পাল তুলিমা প্রায় সত্তরআশখানি ডিঙি সারি বাধিয়া উজানে দূরে চলিয়া যাইতেছে, আবার পাল নামাইয়া স্রোতের টানে ধীরে ফিরিয়া আসিতেছে। মিঃ গসের ইচ্ছা হইল দৃশুটা ছেলে-মেয়েদের ডাকিয় দেখান। কিন্তু খানসামার মুখে শুনিলেন, মেমসাহেব ও মিলিবাবাতাহার বড় মেয়ে খুকী—ছাড়া আর সকলে মোটর লইয়৷ বড় রাস্তা ধরিয়া কোথায় যেন হাওয়া থাইতে বাহির হইয়াছে । মিঃ গল্ একটু মনঃক্ষুন্ন হইলেন। কিন্তু বাড়ির দিকে মুখ ফিরাইতেই দেখিলেন, র্তাহার বড় মেয়ে খুকী দ্বিতলের জানালার গরাদে ধরিয়া দাড়াইয়া ডিঙিগুলির দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকাইয়া আছে। তিনি হাসিয়া উচু গলায় জিজ্ঞাসা করিলেন—“কিরে খুকী, কেমন লাগছে ?” খুকী হাসিয় উত্তর করিল—“খুব সুন্দর। আর তোমরা এখানে আসতে চাও না বাবা—” মিঃ গল এ অনুযোগের উত্তরে হাসিতে লাগিলেন। তারপর নদীর দিকে আবার চোখ ফিরাইয়া ধীরে স্মৃতির মাঝে তলাইয়া গেলেন...... ঐ ত ডবিন সাহেবের আকমাড়াই কলের কারখানার কেরাণী ভবতারণ ঘোষের বাড়ি। মাত্র খান-দুই খড়ের চাল । কিন্তু বাড়িটার সম্মুখে ও পিছনে অনেকটা জমী। বড় বড় গোটা কয়েক আম, জাম, সজিন ও নোনার গাছ— মনে পড়িতেছে বেড়ার এক কোণে একটা কুলের গাছও ধেন ছিল । বৎসরে বৎসরে সে-গুলি পুষ্পিত ও ফলবান হইয়া উঠিত, এখনও উঠে । ভবতারণ যখন মারা যান, ছেলে নিবারণের বিবাহ হইয়াছে। সেও ঐ কারখানায় বিশ টাকা মাহিনায় কেরাণীগিরি করিতেছিল। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর চাকরীটি টিকিল না। নূতন সাহেব আসিয়াই পুরাতন চাল উন্টাইয়া দিলেন। খুকী তখন ছয়মাসেরটি। নিবারণ একবার ভাবিল, মুহুরীগিরি করিবে। নতুবা খাইবে কি করিয়া ? আর, এই গ্রামতুল্য জঙ্গলাকীর্ণ শহরে তাহাকে চাকরীই বা দিবে কে ? পৈতৃক বিত্ত তাহার কিছু নাই ; দেশ ও জমী-জায়গা বলিতে শহরপ্রান্তে ঐ ঠাইটুকু। তবে পিতার মুখে একবার গুনিয়াছিল, শহরের পাশেই একখানি ilt ü SSDBO গ্রামে তাহদের বাড়ি-ঘর, বাগান-পুকুর, ক্ষেত-খোলা, বড় বড় মরাই প্রভৃতি ছিল। বাড়িতে দুর্গোৎসব হইত। তিনখানি গ্রামের লোক তিন দিন ধরিয়া খাইয়া-লইয়াও তাহাদের ভাণ্ডার শূন্ত করিতে পারিত না। এত বড় ঘর তাহার। অবশ্ব এ-সব নিবারণের পিতাও চোপে দেখেন নাই, তাহার পিতামহীর মুখে শুনিয়াছিলেন। তখন কোথায় বা ছিল এই শহর, কোথায় ছিল ঐ রেলপথ। কিন্তু এখন সে অতীত গৌরব স্মরণ করিয়া লাভ কি ? পৃথিবীতে বঁচিতে হইলে সবলের মতই বাচিতে ও জয়ী হইতে হইবে। নিবারণের চেহারাটি ছিল পুরুষোচিত। ডবিন সাহেবের এক বন্ধু একবার কারখানায় বেড়াইতে আসেন। মাতুযটি ভাল। তিনি নিবারণকে দেখিয় তাহার পিঠ চাপড়াইমা বঙ্গভাষায় জিজ্ঞাস করেন—“যুবক, টুমি কি বাঙালী ?” “ই স্তার ” “Strange. ठिंक জান ?” தி “ই স্তার ” অতঃপর সাহেব আর কিছু বলিলেন না। নিবারণও—সে মাসে কতগুলি আকমাড়াই কল বিলি হইয়াছিল খাতার উপর ঝুঁকিয়া পূৰ্ব্ববং হিসাব করিতে লাগিল । কথাটা আজ সহসা নিবারণের মনে পড়িয়া গেল। সেই সাহেবের সহিত দেখা হইলেও হয়ত তাহার কোন স্ববিধ হইতে পারে। কিন্তু তিনি কোথায় থাকেন এবং এখনও এ-দেশে আছেম কিনা তাহা ত সে জানে না। সে স্থির করিল, কলিকাতায় যাইবে । কিছুদিন সাহেব অঞ্চলে ও নানা আপিসে ঘোরাঘুরি করিবে। তাহার ফলে সাহেব অথবা যে কোন একটা চাকরী মিলিবারই সম্ভাবনা । না মিলিলে—না মিলিলে ? তাহার পর কি হইবে সে কল্পনায় আনিতে পারিল না। তাহার সমস্ত চিত্ত জুড়িয়া দাড়াইল খুকুকে কোলে লইয়া স্মিতমুখী লীলা ও তাহদের পশ্চাতে স্নেহময়ী স্থবির পিতামহী। লীলার কাছে কথাটি ব্যক্ত করিলে সে বলিল—“এ ছাড়া জার উপায় কি ” যাইবার দিনও সে মুখে কিছু বলিল না; কিন্তু তাহার মনের কথাটি ফুটিয়া উঠিল সজল চোখদুটিতে।