পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খুকুও বিচ্ছেদ বুঝিল না, দুর্দিনও জানিল না। তাহার মাতাকে সারাদিন অকারণ কান্নায় ব্যতিব্যস্ত করিয়া রাখিল। তাহাদের অভিভাবক হইলেন ভবতারণের বন্ধু পাশের বাড়ির রায়খুঁড়ে । খুড়ো আঙ্গ জীবিত থাকিলে কত খুনী হইতেন! এক মাসের মাহিনী নিবারণ আগাম পাইয়াছিল। টাকা কয়টি তখনও খরচ হয় নাই। অৰ্দ্ধেক টাকা লীলার হাতে দিম বাকী অৰ্দ্ধেক লইয়। সে কলিকাতায় রওনা হইল । তারপর পূরা দুই বৎসর সে যে গভীর সংগ্রাম করিয়াছে তাহ সে ও লীলা ছাড়া আর কেহ জানে না। সে রন্ধ হীন দুঃখ আজ মনে করিলেও শরীর শিহরিয়া উঠে। ঐ সময়ের মধ্যে একবার সে বাড়ি আসিয়াছিল। পিতামী তখন স্বর্গগত। হইয়াছেন। লীল ও খুকুর সে দারিদ্রাক্লষ্ট শীর্ণ ছবি আজও সে ভুলিতে পারিল না । কলিকাতায় ফিরিয়া নিবারণ ধর্থন একদিন সন্ধ্যার কাছাকাছি নিতান্ত হতাশ মনে চৌরঙ্গী দিয়া ফিরিতেছিল, দেখিল ডবিন্‌ সাহেবের সেই বন্ধুটি মোটর হইতে নামিতেছেন। সাহেব যাইতেছিলেন হোটেলে। নিবারণের অন্তর পুলকে নৃত্য করিতে লাগিল। সে ছুটিয়া গিয়া সেলাম করিয়া সাহেবের সম্মুখে দাড়াইলে সাহেব কিন্তু তাহাকে চিনিতে পারিলেন না। ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন— “টুমি কি চাও?" বলিতে বলিতে পকেট হইতে পাসটি বাহির করিলেন । নিবারণ দমিয়া গেল। তবুও আত্মপরিচয় দিয়া সংক্ষেপে অবস্থাটা বর্ণনা করিতেই সাহেব পাসটি পুনরায় পকেটে রাথিতে রাথিতে বলিয়া §osa,—“Now I See, ofts ডুপিটু হইলাম। কাল আমার সহিটু ডেথা করিও—” বলিয়া একখানি কার্ড বাহির করিয়া নিবারণের হাতে গুজিয়া দিয়াই হন হন করিয়া হোটেলে চলিয়া গেলেন। নিবারণের ইচ্ছা হইল তখনই ছুটিয়া গিয়া লীলাকে সংবাদটি দেয়। কিন্তু তাহা সম্ভব নয় দেখিয়া মনের আনন্দে পথ দিয়া একরূপ ছুটিয়া চলিল। সেদিনটিও নিবারণের জীবনে আর একটি স্মরণীয় দিন। তাহার পর হইতেই দালালী করিম নিবারণের ভাগ্য দ্রুত পরিবর্তিত হইতে থাকে। তাহার অল্পকাল পরেই সে লীলা ও খুকুকে কলিকাতায় লইয়া যায়। সেই হইতে দেশের সহিতও আর সম্পর্ক থাকে । উত্তরে - - ------- - - - -------- না। বাড়ি ঘর ভাঙিয়া-চুরিয়৷ ভিটা জঙ্গলাকীর্ণ হইয় 8ማ> উঠে। এমন কি, কিছুকাল ধরিয়া জায়গাটা পল্লীবাসী ও পথিকের একটা ভয়ের কারণ হইয়া দাড়াইয়াছিল। মি: গস কিছুতেই বুঝিতে পারিলেন না আয়ের কোন পথ ধরিয়া তাহার চাল বদলাইতে স্বরু করিল। তিনি সাহেব-পাড়ায় বাড়ি করিলেন, গাড়ি কিনিলেন, বয়, খানসাম, কুকুর রাথিয়া, ধুতি-চাদর-হুক ছাড়িয়া, আহার-পদ্ধতি ফিরাইয়া সাহেব হইয় গেলেন। এমন কি, লীলারও পরিবর্তন হইতে খুব বিলম্ব ঘটিল না। চাল দুরস্ত করিতে নিবারণ ঘোষ একবার বিলাত গেলেন এবং ফিরিয়া আসিয়াই হইলেন "মিঃ গস্ ! এখন তাহার বন্ধু-বান্ধবরাও কেরল সাহেব ও সাহেবী ভাবাপন্ন দেশী লোক। ‘ ছেলেরা, এমন কি, ছোট মেয়েটাও সেই মেজাজ পাইয়াছে। কিন্তু গোল বাধাইয়াছে ঐ খুকী। এতদিন ধরিয়া পাশ্চাত্য শিক্ষা দিয়াও কোন ফল হইল না। মেমেট তাহ সম্পূর্ণ পরিপাক ত করিলই, এখন আবার ঐ-সব চালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ভাইদের সে “সাহেব” বলিয়া ডাকে। তাহাঁকে পরিজনবর্গ “দিদিমণি” বলিয়৷ না ডাকিলে রাগিয়া আগুন ! মিঃ গস মেয়ের পাগলামীতে মনে মনে হাগু করিলেন। তাহার প্রতি স্নেহে তাহার অন্তর পরিপূর্ণ इड्रेग्री सेटैिल । সেই সঙ্গে একটা দুশ্চিন্তাও দেখা দিল। মেয়েটা কিছুতেই বিবাহ করিবে না। বিলাত-ফেরৎ কত ভাল ভাল ছেলের সহিত তাহার সম্বন্ধ হইয়াছে, কিন্তু তাহদের কাহাকেও সে পছন্দ করিল না । তাহার পছন্দ হইয়াছে মিঃ রে’র এক আত্মীয় সেই গ্রাম গ্র্যাজুয়েটটিকে । কিন্তু তাহার মেয়ের উপযুক্ত পাত্র সে হইতেই পারে না। অবশু ছেলেটি যে নিতান্ত খারাপ তাহা বলা যায় না, বরং ভালই ; স্বাস্থ্যবান, শিক্ষিত, দেশে প্রচুর জমিজায়গা। ঘরও লেখাপড়া জানা, কিন্তু কলিকাতায় বাড়ি নাই। ছেলেটি থাকে গ্রামে চাষ-বাসের কাজ লইয়। বিবাহ হইলে খুকীকে । চিরজীবন থাকিতে হইবে গ্রামে। কথাটা ভাবিলেই মন দমিয়া যায়। কিন্তু ও যা মেয়ে-স্বচ্ছন্দে থাকিতে পরিবে । এই ত এখানে আসিয়া অবধি ওর আনন্দ ধরে না। মিঃ গস চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া সেখানে পায়চারি করিতে