পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8եյաe >ово লাগিলেন। এই জীবন-যাত্রার প্রতি কেমন একটা বিতৃষ্ণ দেখা দিল। জানালার দিকে তাকাইয়া দেখিলেন, খুকী নাই। পাইপ টা বহুক্ষণ নিভিয়া গিয়াছে। আবার তাহাতে আগুন দিয়া পেণ্ট লুনের দুই পকেটে হাত পূরিয়া নদীর দিকে তাকাইয় দাড়াইয়া রহিলেন । নদীর চঞ্চল ও তরঙ্গময় গৈরিকধারায় সোনা ঢালিয়া পশ্চিমে কোমল কৃষ্ণ মেঘান্তরালে তখন সুর্য অস্ত যাইতেছে। ডিঙিগুলি পাল গুটাইয়া জাল ডুবাইয়া মাছ ধরিতে ধরিতে স্রোতের টানে ভাসিয়া চলিতেছিল। এই সময়টা ইলিশ মাছ উঠে প্রচুর। মিঃ গসের সম্মুখে আসিয়া একখানা ডিঙি জাল উঠাইতেই তাহার মধ্যে এক জোড়া ইলিশ ধড়ফড় করিয়া উঠিল যেন জীবন্ত রূপা । মিঃ গল প্রায় ছুটিয়া ঘাটে নামিলেন। সেখান হইতে ইকি দিলেন—“মাঝি—ও মাঝি—” মাঝি ফিরিয়া দেখিল সাহেব । মিঃ গসের স্থাক শুনিয়া একজন খানসাম ছুটিয়া অ সিল । সেও ইকিতে লাগিল— “હી মানঝি—” মাঝি প্রথমে বলিল—“মাছ বিক্রীর নয়”—কিন্তু হাকডাকের প্রাবল্য দেখিয়া ঘাটে আসিমা নৌকা ভিড়াইল । মিঃ গস ম'ছ দুইটি কিনিতে রীতিমত দরদস্তুর স্বরু করিলেন এবং মাঝিকে প্রাদেশিক ভাষায় কথা কহিয়৷ বুঝাইয়া দিলেন, তিনি সেখানকারই লোক, কোন পুরুষেই সাহেব নহেন। অনেক দরাদরির পর মাঝি মাছ দুইটি খানলামার হাতে তুলিয়া দিবার উপক্রম করিতে মিঃ গস্ হাত বাড়াইয়া দুই আঙুলে ছটিকে ঝুলাইয়া লইলেন। চলিতে চলিতে র্তাহার সাদা পেণ্ট লুনের গায়ে মাছের কাচা রক্তের ছাপ লাগিয়া গেল । মে-দিকে ভ্ৰক্ষেপ নাই। খানসাম কি ভাবিতেছে আজ তাহাও চিন্তা করিলেন ন, মহানন্দে অন্দরে প্রবেশ করিয়াই মিঃ গা ডাকিলেন, —“কৈ গে ? কোথায় গেলে ?” গসূ-পত্নী তখন গৃহাভ্যন্তরে কি এক কৰ্ম্মে রত ছিলেন, এ কারণেও বটে-মুদীর্ঘ কাল এমন ডাক শুনেন নাই বলিয়াও—প্রথমটা বিস্থিত হইলেন। সেই ভাবেই বাহিরে জাগিয়া দেখেন, মিঃ গল্প সহস্যমুখে উঠানে দাড়াইয়া, হাতে দুটি মাছ । গল্পীর মধ্য হইতে সহসা যেন বাঙালী গৃহলক্ষ্মী লীলা স্মিতমুখে বাহির হইয়া আসিল । তিনি স্বামীর মুখের দিকে এক ঝলক তাকাইয়া মাছ ছুটি তাহার হাত হইতে লইলেন । খুকীও নামিয়া আসিয়াছিল। ভূত্য বঁট আনিলে সে বলিল, —“তুমি রাখ মা, আমি কুটুব ” বহুকাল যাহা করেন নাই, একরূপ ভুলিয়াই গিয়াছিলেন, সেই গৃহকৰ্ম্মটিতে কি আনন্দ ছিল জানি না গস-পত্নী—“ন, তুই পারবি না। সৰ্ব সৰ্ব -অত বড় মাছ নষ্ট হয়ে যাবে—” বলিতে বলিতে কন্যাকে সরাইয়া দিয়া বঁটি পাতিয়া সেখানে বসিয়া গেলেন। তারপর মাছ দুটি কাটিয়া-কুটিয়া পাকশালায় গিয় নিজেই তাহা হইতে নানারূপ ব্যঞ্জন প্রস্থত করিতে লাগিলেন । রন্ধনে মা ও মেয়ের তেমন উৎসাহ পূৰ্ব্বে কখনও দেখা যায় নাই। কিন্তু রন্ধন সারিয়া যখন বাহির হইয়া আসিলেন, অগ্নি-তাপে ও শ্রমে গম্পত্নীর মুখ চোখ লাল ও ঘৰ্ম্মাক্ত । ইতিমধ্যে ছেলেরাও হাওয়া খাইয়া ফিরিয়া আলিমাছিল। তাহারা দেখিল মা ও দিদি রান্না করিতেছে । দেখিয়া পরম কৌতুক অনুভব করিল। মিঃ গস পত্নীকে কহিলেন “আজ আর টেবিলে খেতে ইচ্ছে করছে না, মাটিতে—” অঞ্চলে মুখের ঘাম মুছিতে মুছিতে লীলা বলিল—“সে আমি জানি—” সকলের আহারের ঠাই হইল প্রকাও দালানে—পিড়ি ও আসনাভাবে একপানি বড় সতরঞ্চি লম্বালম্বি ভাজ করিয়া পাতিয়া দেওয়া হইল। মিঃ গস তখনও কাংসপাত্র সম্পূর্ণ ভাগ করিতে পারেন নাই। গসূ-পত্নী কন্যার সাহায্যে স্বহস্তে ভাত বাড়িলেন, ব্যঞ্জন সাজাইলেন। তারপর মিঃ গসকে ডাকিতে গেলেন “এল গো, খেতে দিয়েছি।” মিঃ গল তখন পেন্টলেন ছাড়িয়া ধুতি পরিতেছিলেন। ত্যক্ত পরিধেয়টকে হাত দিয়া ঠেলিয়া দিতে দিতে বলিলেন,— “ঘাই-এই খোলসটা আগে বিদায় করি—” ছেলেরা সকলেই তাহার সহিত থাইতে আসিল। কিন্তু বড় ছেলের ঘোর আপত্তি—সে পা মুড়িয়া বসিয়া খাইবে না। এ ভাবে বসিয়া লোকে কি করিয়া খায় তাহা বুঝা তাহার বুদ্ধির অতীত। মিঃ গস তাহাকে এক ধমকে খামাইয়া বলিলেন—