পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্তমান যুগের অর্থশাস্ত্রীর সাধন । ক্রমুধাকান্ত দে জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মানুষের অফুরন্ত চেষ্টার সাক্ষ্য আছে। বিদ্যার প্রত্যেক শাখায় বহু ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে নিযুক্ত থাকিয়া নব নব পথে যাত্রা করিয়া নূতন সত্যের আবিষ্কার ও উদঘাটন করিয়াছেন। এই প্রচেষ্টার, এই আবিষ্কারের একটা ইতিহাস আছে, তাহ অস্বীকার করি না। কিন্তু অতীতের প্রতি আকর্ষণ নয়, বৰ্ত্তমান-নিষ্ঠাই অর্থশাস্ত্রের অন্যতম প্রধান অবলম্বন। বস্তুত, অর্থশাস্ত্র ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্ব নহে, অর্থাৎ ইহার উদ্ভব হইতে আজ পর্যন্ত যেসকল বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অনুষ্ঠান বা মতবাদ নানাবিধ উত্থান-পতনের মধ্য দিয়া বিবর্তিত হইয়া আসিয়াছে, সেগুলির নবীনতম রূপই অর্থশাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়। অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দী হইতে আরম্ভ করিয়া আজ পর্য্যস্ত সমুদয় অর্থতত্ত্ব ও মতবাদ সমুহ আলোচনা করিবার সার্থকতা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থশাস্ত্র বলিতে যা বুঝায় তাহার সহিত উহার ইতিহাসের একট পার্থক্য-রেখা সৰ্ব্বদাই টানিয়া রাখিতে হইবে। - অর্থশাস্ত্রের উদেশ্ব যুগে যুগে কি একই প্রকার রহিমাছে ? এই প্রশ্নের উত্তর তখনই দেওয়া যায় যখন অন্ত একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলে । সে প্রশ্ন এই—বিভিন্ন যুগে মানবমন কি একই প্রকার ধ্যানধারণ, আদর্শ ইত্যাদি দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়াছে ? ইহার উত্তরে অবশুই বলিতে হয়, না। প্রথমতঃ, বিদ্যার দিক হইতে বিবেচনা করিয়া দেখিলে বুঝা যায়, বিভিন্ন বিদ্যা অথবা উহার বিভাগগুলি পরম্পরের দাসত্ব হইতে মুক্তি লাভ করিলেও সকল যুগে সকল বিদ্যার প্রভাব সমতুল্য হয় নাই। কোন যুগে একটি বিশেষ বিদ্যা অত্যন্ত আদর লাভ করিয়াছে, অন্ত যুগে অন্য বিদ্যা। যখন যে বিদ্যা সবিশেষ সমাদৃত হইয়াছে তখন সে-বিদ্যা অম্লান্ত বিদ্যাকে অল্পবিস্তর পরিবৰ্ত্তিত অথবা প্রভাবান্বিত করিয়াছে। এই সেদিন পর্য্যস্ত অর্থশাস্ত্র ইতিহাসের অন্তর্গত একটি . বিষ্কারূপে পঠিত হইত। অর্থাৎ ইতিহাস হুইতে স্বতন্ত্র বিদ্যারূপে অর্থশাস্থের কোন সব ছিল না, স্বতরাং ইহার স্বতন্ত্র কোন চর্চাও সম্ভবপর হইত না । আজ অর্থশাস্ত্র ইতিহাসের কোটর হইতে মুক্তিলাভ ত করিয়াছেই, উপরন্তু অর্থশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখার কোন কোনটি ইতিমধেই এন্ধপ গুরুত্ব লাভ করিয়াছে যে অচিরকাল মধ্যে সেগুলি ভিন্ন ভিন্ন বিদ্যারূপে গৃহীত হইবার সম্ভাবন জন্মিয়াছে। যথা, ব্যাঙ্কিং ও সিঙ্কা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সমবায়, বীমা ইত্যাদি। শুধু ইতিহাস নয়, আইন, নৃতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, দর্শন, বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রভূতি নানাবিধ বিদ্যার যখন যেটির উপর জোর দেওয়া হইয়াছে সেটাই অর্থশাস্ত্রের উপর অজ্ঞাধিক প্রভাব বিস্তার করিয়াছে। গাণিতিক অর্থশাস্ত্র, রাসায়নিক অর্থশাস্ত্র, এঞ্জিনিয়ারিং অর্থশাস্ত্র কথার কথ। মাত্র নয় । কিন্তু বৰ্ত্তমান অবস্থাটা কি ? আজিকার দিনে অর্থশাস্ত্রের বন্ধন-মুক্তি ঘটিয়াছে। উহা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করিয়াছে, ইহ আগেই বলিমাছি । ইহার অর্থ এ নয় যে, আজ অর্থশাস্ত্র অন্যান্য বিদ্যার সঙ্গে কোন সম্বন্ধ রাখিতে চায় না। ব্যক্তিবিশেষ কোন কোন বিদ্যার দ্বারা অধিকতর অনুপ্রাণিত হইলেও আজ অর্থশাস্ত্রী মাত্রেরই মাত্রাজ্ঞান রহিয়াছে, কেহই অর্থশাস্ত্র আলোচনা করিতে গিয়া আত্মবিস্তৃত হন না। এঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, রসায়ন, অন্ধ প্রভৃতি বিদ্যার ও বিদ্যার ব্যাপারীর সহায়তার প্রয়োজন আজ প্রত্যেক অর্থশাস্ত্রী পদে পদে অনুভব করেন। আইন, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব ইত্যাদি সামাজিক বিদ্যার ত প্রয়োজন হয়ই, সেগুলির কথা আর বেশী করিয়া বলিবার আবশ্যক নাই। এইঞ্জস্য বর্তমান কালে যেকোন অর্থশাস্ত্রের বই খুলিলে দেখা যায়. যে তাহাতে একদিকে যেমন সমাজতাত্ত্বিকের প্রমাণিত নীতির বিস্তৃত প্রয়োগের উদাহরণ আছে, অন্যদিকে তেমনি রাশি রাশি উচ্চ-গাণিতিক তথ্য ও আনুষঙ্গিক তত্ত্ব৪ স্থান পাইছে লক্ষণৰ এক