পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ লালবালু 8b為 পরিশেষে একটা কেলেঙ্কারি হইবার সম্ভাবনা, কারণ রায়বাহাদুরের কথাগুলি উপস্থিত ভদ্রমহোদয়দের শতকরা নব্বই জনের পক্ষেই খাটে, আর থাটে বলিয়াই একে অন্যের নিকটে এ-সম্পর্কে শব্দমাত্র উচ্চারণ করিতে চাহে না । একটা বড় ব্যাপারের উল্লেখে বা অবাস্তর কি অপ্রাসঙ্গিক সহস্র প্রকার বিষয়ের অবতারণা করিয়া সকলেই নিজেদের এই স্থপরিস্ফুট দুৰ্ব্বলতাকে বিস্মৃতির মধ্যে গোপন করিতে প্রয়াস পায় । টিপিয়া হাসিয়া প্রমাণ করিতে চাহে যে, সে নিজে এ সকলের বহু উদ্ধে—যদিও এই অবাধ ভাড়ামির অপারত সে কখনও কথন ও মনে প্রাণে অতুভব করে । প্রসাদ সাহেব চতুর লোক । বলিলেন,— রায়-বাহাদুর বাহাই বলুন- ডাক পড়িলেই আসিতে হয়, কেউ প্রাণের টানে, কেউ পেটের দায়ে । আমরা নোকর - হাজির তে দিতেই হইবে । কিন্তু রাজা-বাহাদুরের কথা স্বতন্ত্র । মনিব আসিয়া প্রথমেই বলিবেম, রাজা বাহাদুর কোথায় ? গণপতি আইনব্যবসায়ী-রাজী-বাহাদুরের সান্ধা-মজলিসের লোক । বলিলেন,--ত নয়তো কি ? নহিলে রাজবাহাদুরের কি ?– ছেলের চাকরিও নাই--মেয়ের বিবাহও নাই । রাজা-বাহাদুর স্তুতিতে সপ্তষ্ট হইলেন বটে, কিন্তু মুখ খুলিলেন না। প্রসাদ সাহেব বলিয়া চলিলেন,—ত যাহাই হউক, সে-বার প্যালেসে ষে পার্টিট হইল—সেট, ইঁ্যা এ দুবৎসরে উল্লেখযোগ্য বটে। সত্য কথা বলিতে কি, তিনি এবার সমস্ত প্রদেশের সম্মান রক্ষা করিয়াছেন । তা সবসুদ্ধ কত টাকা খরচ হইয়াছিল রাজা-বাহাদুর ? রাজা-বাহাদুর বলিলেন, - আহ সে সামান্য ব্যাপারের কথা, তাহা আর কেন ? গণপতি বলিলেন,—আজ্ঞে, সেটা আপনার নিকট সীমান্ত হইতে পারে, তা আমাদের কাছে অসামান্ত বটে। রাজা-বাহাদুর হাসিয়া বলিলেন,--কি যে বল— তোমরা আবার ছাড় না। - কত আবার হইবে ?--হাজার-বার । তবে টাকাটা আমার তহবিল হইতে যায় নাই, প্রজার মাথট দিছে। আর বল কেন ? সেই নিয়ে এক মহালে তো و حتیت- که আর অপরের কথা উঠিলেই একটু মুখ একটা দাদাই হইয়া গেল-বলে টাদ দিব পাই না! - - আবার স্বরু হইল। কেমন করিয়া সে বিদ্রোহী মহাল শাসনে আনিতে হইল, কয়টা মাতব্বরের হাত-পা ভাঙিয়া গেল—কাহার কাহার জেল হইল, রাজা-বাহাদুর বিনাইয়া বিনাইয় তাহাই বলিতে লাগিলেন। মোহিত ইঞ্জিনিয়ার। পেটের দায়ে এখানে হাজিরা দিতে হইতেছিল, কিন্তু এই অভিজাতদের দলে নিজেকে ঠিকমত খাপ খাওয়াইয়া লইতে পারিতেছিল না । একদিকে সে রাজা-বাহাদুরের বন্ধুপ্রীতি, অন্যদিকে রায়-বাহাদুরের ভবিষ্যৎ চিন্তার গভীরতা অনুধাবন করিতে চেষ্টা করিতেছিল। স্বৰ্য্য তখন অনেকখানি উঠিয়া গিয়া হেমন্তের হিমকে ভাতাইয়া তুলিয়াছে । সম্মুখে প্রশস্ত মাঠ ; মাঝে মাঝে চুণ ফেলিয়া দাগিয়া দেওয়া হইয়াছে। একদিকে একটু ঢালু জমি— সেখানে রক্তবর্ণ পতাকা পুতিয়া বিপদের আশঙ্কা জানান হইয়াছে-- যেন বিমানচারী রথকে সেখানে না নামান হয়। মোহিত দূরে আকাশের শেষ সীমায় চাহিয়া ছিল। সহসা মুখ ফিরাইয়া মিঃপ্রসাদের দিকে চাহিয়া বলিল,—এ জায়গাটাকে ‘লালবালু বলা হয় কেন ? এখানকার বালু কি বেশী লাল ? হঠাৎ একটা নতুন রকমের কথা পাইয়া সকলেই উন্মুখ হইয় প্রসাদ সাহেবের দিকে চাহিল। প্রসাদ সাহেব বলিলেন,— বালু তো লাল নয়, তবে এই জায়গাটার ইতিহাস একটু লাল— সেট ‘মিউটিনি’র সময়কার কথা । শ্রোতৃবৃন্দ উৎসুক হইয়া উঠিল। প্রসাদ সাহেব বলিতে আরম্ভ করিলেন,- সেটা ১৮, ৭ সাল—তখন পঞ্জাব হইতে বিহার পর্য্যস্ত সৰ্ব্বত্রই এক বিরাট সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। ‘স্বধৰ্ম্মে নিধনং শ্রেম’- জাতিধৰ্ম্ম আর থাকে না— হয় মৃত্যু, নয় মুক্তি । এ পর্যন্তও, তাহার ঢেউ আসিয়া পৌছিয়াছে। এদিকে তখন বিলাতী নীলকরের দল। বিশ-পচিশ ঘর হইবে—এই ত্রিশ মাইলের মধ্যে। কেহ সপরিবারে, কেহ একাকী। খবর আসিল, বিদ্রোহী সৈন্যের একটি ভগ্নাংশ এদিকে আসিতেছে, বিধৰ্ম্মাদিগকে আর এদেশে বাস করিতে দেওয়া হইবে না। সৈন্যদল একান্ত বদ্ধপরিকর। কথাটা বিদ্যুদ্বেগে ছড়াইয়া গেল। এই পচিশ জ্বর কেন—থাইতেই