পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্ন শ্ৰীবীরেশ্বর সেন আমরা সকলেই জানি যে, আমাদের মনের গতি অতি দ্রুত । কলিকাতায় বসিয়া একখানা পুস্তক পাঠ করিতেছি, নিমেষ মধ্যে মন চলিয়া গেল দিল্লী, লাহোর, লণ্ডন, নিউইয়র্কে, অথবা এই সকল স্থান অপেক্ষ কোটি কোটি গুণ দূরবর্তী স্বৰ্য, বৃহস্পতি, শনি বা কোন স্থির নক্ষত্রে। মনের গতির আর একটা প্রকার আছে যাহা ভাবিলে বিস্ময়ে অভিভূত হইতে হয় এবং যাহা ঘটিয়া থাকে স্বপ্লাবস্থায়। যে-সকল ঘটনা আমাদের গোচর হইতে পাঁচ সাত মিনিট হইতে দশ পনর বৎসর লাগিতে পারে সেই সকল ঘটনা স্বপ্লাবস্থায় এক নিমেষের শতাংশেরও অল্প সময়ে মনে প্রতিভাত হইতে পারে । এতৎসম্বন্ধে মনস্তত্ববিষয়ক পাশ্চাত্য অনেক পুস্তকে বহু কৌতুহুলজনক আখ্যান আছে। সংস্কৃত দর্শনশাস্ত্রে সেইরূপ আছে কি না জানি না। গুনিয়াছি কোন কোন পুরাণে আছে। আমি এই ক্ষুত্র প্রবন্ধে তিনটি গল্প মাত্র বলিব । প্রথম গল্পটি আরবদেশীয় যাহা আমি ষাট-পয়ষটি বৎসর পূৰ্ব্বে পড়িঃাছিলাম বা গুনিয়াছিলাম। দ্বিতীয়টি গত মহাযুদ্ধের সময়ের একজন টেলিগ্রাফ সিগনালারের অভিজ্ঞ ভালব্ধ। তৃতীয়টি আমারই জীবনে ঘটিয়াছিল। প্রথম গল্প একজন আরব বোধ হয় একদিন রাত্রে মোটেই ঘুমাইতে পারে নাই। পরদিন সে যখন স্নান করিতে প্রস্তুত হইল, তখন তাহার তন্দ্র জাসিতেছিল। সে জলে একটা ডুব দিয় মাথা তুলিয়া দেখিল যে, সে একজন হাবলী বা কাফ্রী স্ত্রীলোক । নিকটে তাহার স্বামী দাড়াইয় তাহাকে ডাকিয়া বলিল, “তোর স্নান করিতে কতক্ষণ লাগে ? শীঘ্ৰ চলিয়৷ আয় ।” ইহা গুনিয়া সে তাড়া ভাড়ি স্নান শেষ করিয়া তাহার স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ফিরিয়া যায়। সেখানে সে সমস্ত দিনব্যাপী রন্ধনাদি গৃহকাৰ্য্য করিল। এইরূপ বৈচিত্র্যহীন সংসারযাত্রায় দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাং, মাসের পর মাস তাহার অতিবাহিত হইতে লাগিল। দুই-এক বৎসর পরে সেই পুরুষ ( স্ত্রী-রূপা ) একটি পুত্র প্রসব করিল। ইহার দুই বৎসর পরে তাহার একটি কন্ত হইল। আরও দুই বৎসর পরে তাহার একটি পুত্র জন্মিল। এই শিশুটি যখন দশ বৎসরের হইল, তখন সেই নারী একদিন প্রাত্যহিক নিয়মানুসারে স্নান করিতে প্রবৃত্ত হইয়া জলে ডুব দিয়া মাথা তুলিয় দেখিল যে, সে যেমন পুরুষ ছিল তেমনই হইয়াছে। তখনই তাহার সমস্ত পূৰ্ব্বস্তৃতি ফিরিয়া আসিল । সে বুঝিতে পারিল যে, ডুব দিবার সময়ে বিমাইতে ঝিমাইতে নারীজীবনের স্বপ্ন দেখিয়াছিল । তাহার ইহাও মনে হইল ধে, যখন এত বড় স্বপ্ন দেখিয়াছে তখন সে নিশ্চয়ই অনেক ক্ষণ জলমধ্যে ডুব দিয় ছিল । ইহা ভাবিয়া সে পাশ্ববৰ্ত্তী আর একজন স্নানকারীকে জিজ্ঞাসা করিল, “ভাই, আমি কতক্ষণ জলে ডুবিয়াছিলাম ?” সে ব্যক্তি বলিল, “কতক্ষণ আর থাকিবে ? ছলে ডুবিয়া আর লোকে কতক্ষণ থাকিতে পারে? যেমন ডুব দিলে, অমনি মাথা তুলিলে।” তখন সেই আরব বুঝিল যে, সে এক নিমিষেরও কোন ভগ্নাংশ সময়ে সেই দীর্ঘ স্বপ্নটা দেখিয়াছিল। দ্বিতীয় গল্প মহাযুদ্ধের সময়ে পশ্চিম-সীমান্তে ষে-সমস্ত টেলিগ্রাফ কৰ্ম্মচারী কাজ করিত, তাহাদিগকে কখন কখন সমস্ত রাত্রি জাগিতে হইত। এ অবস্থায় মধ্যে মধ্যে তন্দ্রার আবেশ অবশুম্ভাবী। এইরূপ একজন তন্ত্রাপ্রবণ সিগনালারের নিকটে একটা লোক গিয়া একটা মেসেজ ( message ) দিল। তাহার শব্দগুলি শুনিয়া সিগনালার টাকা চাহিল। আগন্তুক আবশ্বক টাকা রাখিয়া বলিল, এই নিন টাকা। এই জিন চারি সেকেণ্ডের মধ্যে সিগনালারের তন্ত্র আসিল এবং লে একটা স্বপ্ন দেখিল। সে যেন যুদ্ধক্ষেত্রের কষ্ট সন্থ করিতে না পারিয়া সেখান হইতে পলায়ন করতঃ একেবারে