পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ সন্ধি 8?& नकt ਾਦ কঠিন বোধ হইত। একওন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতের সাহায্য পাইলে ভাল হয়। সেজন্য আমি নিস্তারিণীকে জিজ্ঞাসা করিলাম, সে রকম একজন ভাল পণ্ডিত এখানে পাওয়া যায় কি না ? তিনি বলিলেন, এখানকার হাইস্কুলের প্রধান পণ্ডিত বীরেশ্বর বিদ্যারত্ব মহাশয় একজন খুব বড় পণ্ডিত, তিনি বৃদ্ধ হইয়াছেন, তিনি প্রাতঃকালে এক ঘণ্ট সংস্কৃত পড়াইতে সম্মত হন কিনা জানিয়া আসিব। আমি এই কথা শুনিয়া নিস্তারিণীকে তাহার সঙ্গে দেখা করিতে বলিলাম। নিস্তারিণী পরদিন আসিয়া বলিলেন, পণ্ডিত মহাশয় সকালে আটটার সময় আসিয়া এক ঘণ্টা পড়াইতে সন্মত হইয়াছেন, কিন্তু তিনি এজন্য কোন বেতন লইবেন না ; তবে মাসের শেষে তাহাকে প্রণামী বলিয়৷ কিছু দিলে হয়ত তাহা অস্বীকার করিতে পারিবেন না। এই বন্দোবস্ত অনুসারে উক্ত পণ্ডিত মহাশয় এক দিন প্রাতঃকালে আসিলেন। উজ্জল গৌরবর্ণ খৰ্ব্বাকৃতি বৃদ্ধ, গোলগাল শরীর, দাড়ি গোফ কামান, মাথার চুল সব পাক, বেশ হাসিখুনী মুখ, দেখিলে ভক্তি হয়। নিস্তারিণী তাহাকে বোর্ডিঙে পৌছাইমা দিয়া চলিম্বা গেলেন। আমি তাহাকে প্ৰণাম করিয়া পদধূলি লইলাম। তিনি আমাকে আশীৰ্ব্বাদ করিলেন । তিনি আমাকে নিরীক্ষণ করিয়া হাসিমুখে বলিলেন, “ম লক্ষ্মী, তোমাকে আপনি বলতে পারব না, তুমি বলেই সম্বোধন করব। কিছু মনে ক’রো না।” আমি হাসিয়া বলিলাম, “আপনি আমার পিতৃস্থানীয়, আমাকে আপনার মেয়ের মতনই দেখবেন। আমার স্বৰ্গীয় পিতাও কলিকাতায় একজন খ্যাতনাম কলেজের অধ্যাপক ছিলেন ।” পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন, “তা না হবে কেন ? “আকরে পদ্মরাগগ্য জন্ম কাচমাণঃ কুতঃ, পদ্মরাগমণির আকরে কাচ জন্মায় না, পদ্মরাগই জন্মায়। আমাদের জেলার রঘুনাথ বাবু একজন দেশবিখ্যাত লোক, তোমাদের ব্রাহ্মসমাজের একজন নেতা, বোধ হয় তাকে চেনে,- তার দুইটি বস্তা অত্যন্ত বিদ্বী হয়েছে, অনেক গ্রন্থও রচনা করেছে। রঘুনাথবাবুও ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত বংশে জন্মেছিলেন ।” আমি বলিলাম, কিন্তু আপনি একটা মন্ত ভুল করলেন, পণ্ডিত মশায়। আমি ব্রাহ্ম আপনাকে কে বললে? আমি হিন্দুর মেয়ে, আমার বাবা নিষ্ঠাবান্‌ ব্ৰাহ্মণ ছিলেন, প্রত্যহ । সন্ধ্যাহিক শিবপুজা করতেন।” - পণ্ডিত মহাশয় অপ্রতিভ হইয়া বলিলেন, “বটে, বটে, শুনে খুব সন্তুষ্ট হলেম। আমার ত তা হলে মন্ত ভূল । হয়েছিল, মা । কিন্তু মা, আমার যে ভুল হয়েছিল তাতে আমার বিশেষ দোষ নেই। ব্রাহ্মণের মেয়ে এত বয়স পর্যন্ত অনৃঢ় থাকতে আমি এর আগে কখনও দেখিনি। মা তুমি কিছু মনে ক’রো না। আচ্ছা, তুমি সংস্কৃত কি কি বই পড়?” পণ্ডিত মহাশয়ের মন্তব্য গুনিয়া আমি একটু লজ্জিত হইলাম। পরে বলিলাম, “আমার পাঠ্য হচ্ছে, শিশুপালবধ, প্রথম দুই সর্গ, আর শকুন্তল৷ ” “তুমি কোনো ব্যাকরণ পড়েছ, মা ?” “আজ্ঞে, আমি কোনো সংস্কৃত ব্যাকরণ পড়িনি, প্রথমে পড়েছিলুম বিদ্যাসাগর মশায়ের উপক্রমণিকা, পরে ব্যাকরণ কৌমুদী, কিন্তু তাও শেষ হয়নি, কেবল শস্বরূপ, ধাতুরূপ, কুৎ, তদ্ধিত পড়েছি, চতুর্থ খণ্ড পড়া হয়নি।” “একখানা ব্যাকরণ শেষ পর্যন্ত পড়া দরকার। মুখবোধ পড়লেই ভাল হত, তা না করে তুমি ঐ কৌমুদীই শেষ ক’রে পড * “কিন্তু কৌমুী ৪র্থ খণ্ড ত আমার নেই ?” “তবে সে বই একখানা আনাতে হবে।” এই কথার পরে তিনি সেদিনের মত বিদায় হইলেন। পরের দিন তিনি যথাসময়ে পড়াইতে আসিলেন। জামি শকুন্তলা পড়া আরম্ভ করিলাম। পড়িতে পড়িতে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,—“পণ্ডিত মশায়, আমি ত্ৰাক্ষণের মেয়ে হয়ে এতদিন অবিবাহিতা আছি গুনে আপনি আশ্চৰ্য হয়েছিলেন, কিন্তু শকুন্তলা ঋষিকস্ত হয়ে যৌবনকাল পৰ্যন্ত অনুঢ়া ছিলেন কিরূপে ?” পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন- “সে যুগে ঐ ব্যবস্থা ছিল, বিশেষতঃ ঋষিকস্তাদের পাত্র মেলা সহজ হ’ত না। কিন্তু তার ফলও ত ভাল হয়নি। ঋষিরা এই সকল দেখে-গুনে ব্যবস্থার পরিবর্তন করেছিলেন। প্রথম দর্শনেই ছুশ্বন্ত শকুন্তলার রূপে মুগ্ধ হলেন, শকুন্ডলও দুষ্মন্থকে দেখে গলে গেলেন,-জু-জনের মধ্যে আমনি মালা বদল করে গান্ধৰ্ব্ব বিবাহ