পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Φυ হ’ল। কখমুনি আশ্রমে ছিলেন না; তার অনুমতির অপেক্ষ রইল না। একাজটা কি ভাল হ’ল ? এর ফলও বিষময় হয়েছিল। এই জন্তই শাস্ত্রকার নারীকে কোন অবস্থায়ই স্বাধীনতা দেন নাই। মন্ত্র বলেছেন,— “পিতা রক্ষতি কৌমারে ভৰ্ত্ত রক্ষতি যৌবনে । পুত্রশ স্থবিরে রক্ষেং ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমহুতি।” স্ত্রীলোক যখন কুমারী থাকে তখন তাকে পিতা রক্ষা করবেন, যৌবনকালে অর্থাৎ বিবাহ হ’লে তাকে স্বামী রক্ষা করবেন, পরে বাৰ্দ্ধক্যে তাকে পুত্র রক্ষা করবেন। কোন অবস্থায়ই স্ত্রীলোক স্বাধীন ভাবে থাকবার যোগ্য নহে ।” আমি বলিলাম, “পণ্ডিত মশায়, আপনার শাস্ত্রকারেরা নারীকে মানুষের মধ্যেই গণ্য করতেন না, সেই জন্য এই ব্যবস্থা করেছিলেন।” পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন—“তা করবেন না কেন ? নারীকে তারা কেবল মামুষ নম্ন দেবতা বলে গণ্য করতেন । সেই মনুই বলেছেন,— “প্রজনাৰ্থং মহাভাগা: পূজাৰ্হা: গৃহদীপ্তয় । প্রিয় শ্রিয়শ্চ গেহেষু ন বিশেষোহস্তিকশ্চন।” অর্থাৎ সস্তানজননী মহীয়সী নারীগণ পূজার যোগ্য, তাহারা গৃহের দীপ্তি-স্বরূপ। গৃহে সেই সকল নারীর সহিত লক্ষ্মীর কোন ভেদ নাই। তাহারাই গৃহে লক্ষ্মীর ন্যায় বিরাজ করেন। আমি বলিলাম, “পণ্ডিত মশায়, তা হ’লে নারী-জীবনের উদ্দেশু কি কেবল সস্তানপালন ? গৃহস্থেরা গরুকেও ত বাছুর হওয়ার জন্য বাড়ীতে রাখে এবং পূজাও করে। একটি নারীর সহিত একটি গাভীর পার্থক্য কি, পণ্ডিত মশায় ?” পণ্ডিত মহাশয় একটু উষ্ণ হইয়া বলিলেন, “ম, শাস্ত্রকারের বাক্যের অমৰ্য্যাদা করে না । তোমরা যত বড়ই বিদুষী হও, ঋষিদের বাক্যে অশ্রদ্ধা করতে পার না । নারীকে গাভীর সহিত তুলনা-বটে ? কি আশ্চৰ্য্য!” আমি লঙ্গিত হইয়া বলিলাম, “পণ্ডিত মশায়, আমার অপরাধ হয়েছে, আমার প্রগল্ভত ক্ষমা করুন।” পণ্ডিত মহাশয় প্রসন্ন হইয়৷ বলিলেন, “আমরা ক্ষম ত করেই আছি। আজ বেলা হয়েছে, আমার স্কুল আছে, তোমারও স্কুল আছে—কাল এ-বিষয়ে আলোচনা করা যাবে।” এই বলিয়া পণ্ডিত মহাশয় গাত্ৰোখান করিলেন.। আমিও SO8C) স্বানাহার করিতে গেলাম । বৃদ্ধ পণ্ডিত ( মহাশয়কে রাগাইয়া আমার অন্ত্রতাপ হইল। আমার বাক্সংযম শিক্ষা করিতে হইবে। তবে আমার বহুধত্বে পোষিত মত্তের বিরুদ্ধে কোন কথা শুনিলে আমার ধৈর্য্য থাকে না। পরদিন সকালে পণ্ডিত মহাশয় পড়াইতে আসিয়া প্রথমেই বলিলেন, “ম, আগে তোমার সেই প্রশ্নের আলোচনা করা যাক। তোমার জিজ্ঞাস্য এই,— নারীজীবনের উদ্দেশ্য কি ? কেবল সন্তানজনন ? তাহা কখনও হইতে পারে না। কি পুরুষ কি স্ত্রী কাহারও জীবনের উদ্দেশ্ব কেবল সন্তান উৎপাদন হতে পারে না। তাহলে তারা ত পশুর সমান হবে। ধৰ্ম্মই জীবনে একমাত্র উদ্দেশ্য। সেই ধৰ্ম্ম লাভ করতে হলে আবার অর্থ চাই, আবার কাম অর্থাৎ কামনা চরিতার্থ করাও চাই । ইহার ফলে হয় মোক্ষ অর্থাৎ ঈশ্বরলাভ । এই জন্য ধৰ্ম্ম, অর্থ কাম ও মোক্ষকে চতুৰ্ব্বৰ্গ বলে। এই চতুৰ্ব্বৰ্গ লাভ দ্বারাই মনুষ্যজীবন সার্থক হয় । মনুষ্যজীবন সার্থক করতে হলে সকলকে বিবাহ করে গৃহস্থ হতে হবে । কেহ কেহ আজীবন কৌমাৰ্য্য অবলম্বন করেছিলেন দেপতে পাওয়া যায়, কিন্তু তাহা সাধারণ নিয়মের বহির্ভূত। তাহার বিপদ অনেক, হঠাৎ পদস্খলন হতে পারে, তাহলেই সৰ্ব্বনাশ। দেবীভাগবতে আছে, ব্যাসপুত্র শুকদেব গুরুগৃহে পাঠ সমাপন করে গৃহস্থাশ্রমে প্রবেশ না করেই প্রত্ৰজ্য অবলম্বন করতে অভিলাষ করেছিলেন, ব্যাসদেব তাকে দারপরিগ্রহ করে গৃহী হওয়ার জন্য অনেক প্রকার উপদেশ দিয়েছিলেন । তার মধ্যে একটা উপদেশ বড়ই সুন্দর,— ‘ইন্দ্রিয়ানি মহাভাগ মাদকানি স্বনিশ্চিতম্। আদারস্ত দুরন্তানি পঞ্চৈব মনসা সহ ।” অর্থাৎ মামুষের ইন্দ্ৰিয়সকল নিশ্চয়ই উন্নত্ত ; যারা বিবাহ করে না তাহাদের সেই পাচ ইন্দ্রিয়কে মনের সহিত জয় করা অত্যস্ত কঠিন হয়। ব্যাসদেব অবশেষে শুকদেবকে উপদেশ লাভের জন্য রাজষি জনকের নিকট পাঠালেন। সেখানে জনকের সহিত শুকদেবের অনেক বিচার হ’ল। জনকও তাকে বললেন,— “মনস্ত প্রবলং কামমজেয়মল্লতাত্মভি: | অতঃ ক্রমেন জেতব্যমাগ্রমাঙ্কুকমেণ চ ” অর্থাৎ এই সংসারে মনকেই প্রবল শত্রু বলে জানবে,