পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“আমি বেথুন কলেজে পড়বার সময় নারী-প্রগতি সমিতি' নাম দিয়ে একটি সমিতি গঠন করেছিলুম, অনেক গুলি মেয়ে তার মেম্বর হয়েছিল, আমরা কিছু কিছু কাজও জারভ করেছিলুম।” “আপনার এই সব চেষ্টা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নারী জাতির উন্নতিসাধন আমার জীবনের একটা প্রধান লক্ষ্য, তা এ-স্কুল থেকে কতকটা বুঝতে পারছেন। আমি আপনাকে এ-বিষয়ে যথাসাধ্য সাহায্য করব।” “কিন্তু এখানে তার ফীল্ড (ক্ষেত্র ) কোথায় ? এ-বিষয়ে রাণী-সাহেবার মত কি ? তার কোন সাহায্য পাব কি ?” রাজা হাসিয়া বলিলেন, “সে অঞ্চলে এখনও আলোক esz- Kā zifR 1–They ale on the other side of the globe ( তারা পৃথিবীর বিপরীত পাশে ) । আপনি একদিন গিয়ে আলাপ করলেই বুঝতে পারবেন। যাবেন ? আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেব। খোলা গাড়ীতে যেতে আপনার আপত্তি নেই ত?” “ন, তাতে আর আপত্তি কি ?” “আপনি এখানে এলে বোধ হয় এই ঘরেই আটক রয়েছেন, রাস্তায় বেড়াতে পারেন না। কার সঙ্গেই বা বেড়াবেন ? কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যাবেল একটু খোলা বাতাসে বেড়ান ভাল। বলেন ত আমার গাড়ী পাঠিয়ে দেব।” “আপনার অন্ধবিধা না হ’লে মধ্যে মধ্যে পাঠাতে পারেন ।” “আপনার অনুমতি হ’লে আমি নিজেও আপনাকে বেড়িয়ে আনতে পারি। আচ্ছ, আজ তবে এখন উঠি ” আমি উঠিয়া দ্বাড়াইয় তাহাকে ধন্যবাদ দিলাম। তিনি আমার করম্পর্শ করিয়া হাসিতে হাসিতে বাহির হইয়া গেলেন । পরদিন বেলা আটটার সময় একটি লোক আসিয়া বলিল, রাজাসাহেব আমার রাজবাড়ী যাওয়ার জন্ত গাড়ী পাঠাইয়াছেন। কিন্তু তখন পণ্ডিত মহাশয়ের আসিবার সময়, আমি কি করিয়া রাজবাড়ী ধাইব ? অনেক ভাবিয়া-চিন্তিম বাওয়াই স্থির করিলাম এবং একখানা ভাল শাড়ী ও পিন্ধের ব্লাউস ও শাল পরিয়া বোর্ডিঙের একটি মেয়েকে সঙ্গে লইয়া । গাড়ীতে উঠিলাম। আমরা রাজবাড়ীর প্রকাও ফটকের মধ্য দিয়া বাজিয়ের প্রাঙ্গণে পৌছিলে গাড়ী থামিল । তখন Y:থ সেবাচনা শুfl S)ථ8ථ রাজাসাহেব স্বয়ং আসিয়া আমার হাত ধরিয়া আমাকে গাড়ী হইতে নামাইলেন এবং আমাকে সঙ্গে করিয়া অন্তঃপুরে লইয়৷ চলিলেন। একটার পর একটা এইরূপে তিনটা মহলপার হইয় আমরা চলিলাম। প্রথম মহলে ঠাকুর-বাড়ী ও ফুলবাগান । দ্বিতীয় মহলে রাজার বৈঠকখানা ও কাছারি-ঘর, তৃতীয় মহলে সদর বাড়ী, তাহার পরে অন্তঃপুর। রাজার বৈঠকখান হালফ্যাসানে তৈয়ারি । এতদ্ভিন্ন আর সমস্ত ঘরই প্রাচীন কালের প্রস্তুত । তবে রাজা যে অট্টালিকায় শয়নাদি করেন, তাহার দরজা-জানালাগুলি বড় বড় দেওয়ালে রঙ-করা ও ইংরেজী কামুদায় আসবাবপত্র দ্বারা মুসজ্জিত। অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, একটি বড় ঘরে গালিচা পাতা, তাহার এক পাশে পালঙ্ক, তাহাও পুরু গালিচমণ্ডিত। সেই ঘরে একটি সুন্দরী রমণী একখান সোফায় চুল খুলিয়া বসিয়া আছেন, একজন পরিচারিক স্নবর্ণমণ্ডিত হস্তিদস্তের চিরুণী দিয়া তাহার চুল আঁচড়াইতেছে, স্বদীর্ঘ কেশকলাপ পৃষ্ঠদেশ ঢাকিয়া পড়িয়াছে, আর একটি পরিচারিক তাহার পাশে রূপার পিকদানী হাতে দাড়াইয় আছে । বলা বাহুল্য, ইনিই রাণী-সাহেব । রাজাসাহেব আমাকে সঙ্গে করিয়া সেই ঘরে প্রবেশ করিলেন, এবং রাণী-সাহেবকে আমার পরিচয় দিয়া বলিলেন, “ইনি তোমার সঙ্গে আলাপ করতে এসেছেন । তোমরা দুই জনে আলাপ কর, আমি আসি ।” রাণী-সাহেব আমার প্রতি সম্মিত কটাক্ষ নিক্ষেপ করিয়া আমাকে বসিতে ইঙ্গিত করিলেন, আমি তাহার সম্মুখের একখান চৌকিতে বসিলাম, আমার সঙ্গের মেয়েটি মেঝের গালিচার উপর বসিল । রাণী-সাহেব স্বভদ্র দেয়ী মধ্যভারতের নয়াগড় রাজার কন্যা ( আমি পরে জানিয়াছিলাম ), তাহার বয়স প্রায় পচিশ বৎসর, সৰ্ব্বশরীর জরির পোষাক ও বিবিধ অলঙ্কারে ঝলমল করিতেছে। তিনি বিলাত-ফেরত স্বামী পাইয়াও রাজপরিবারের বনিম্নাদি চালচলন ছাড়েন নাই। তবে কথাবার্তায় বুঝিলাম, লেখাপড়া কিছু শিথিয়াছেন, আমার সঙ্গে হিন্দী-মিশ্রিত বাংলাতে কথা বলিলেন। মধ্যে মধ্যে দুই-একটা ইংরেজী শব্দও ব্যবহার করিলেন। ঘরের বাহির না হুইলেও তিনি বহির্জগতের সংবাদ রাখেন। যেরূপ ভাবে আলাপ করিলেন, তাহাতে র্তাহাকে বুদ্ধিমতী বলিয়া বোধ হইল ।