পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১২ আবার শ্বশুরবাড়ির পথেও এগিয়ে দিয়ে আসতে হবে। ছিল যত কৰ্ম্মভোগ— . মালা বিজুর কথা শুনিয়া আর হাসি সামূলাইতে পারিল না। বলিল,—জত বুড়োমির কথা সব শিখলে কোখেকে বিজুদা ? * বিজু মালার কথার কোন উত্তর না দিয়া কেয়াবনের পথ ধরিয়া আগাইয়া চলিল, আর মালাও তাহার পিছু পিছু স্থাটিতে লাগিল । খানিকট পথ আসিয়া বিজু বলিল,—দিদির কি দুর্জয় সাহস ছিল, এ-পথ দিয়ে রাত করেও আলো ছাড়া যাতায়াত করতে পারতে, সাপের নামে একটুও বুক কাপত না। আর এখন ? দিনের বেলায়ও যাবার সাহস হবে না। বিয়ে এমনিই জিনিষ । মালা বলিল,—তা তোমার আত মাথাব্যথা কিসের বিজু ? —না, এমনিই বলছিলাম। আর দু-দিন পরে তোরও যে ঐ অবস্থ হবে কি-না, তাই।—বলিয়া বিজু থামিল । মালা লজ্জায় আর কোন কথাই বলিল না । বিজুর দিন-দিন সাহল বাড়িতেছে। এখন কেয়াবনের পথ দিয়া চলিতে তাহার আর সাপের ভয় করে না। একটা আলো ও লাঠি হাতে থাকিলে রাত্রেও সে এ-পথ দিয়া যাতায়াত করিতে পারে। মালা আগে যেমন প্রায়ই তাহাদের বাড়ি আসিত, এখন আর তেমন আসে না। একা তো কোনদিনই আসে না। বলিলে বলে, মা ভারি রাগ করেন। বলেন,— দিন-দিন মেয়ের যত বয়েস হচ্ছে তত বুদ্ধি কমচে । * বিজু গুনিয়া আর কিছু বলে না। মনে মনে ভাবে, সত্যই তো মানুষের দিন-দিন বয়স যত বাড়িতে থাকে, বুদ্ধিও ঠিক সেই পরিমাণে কমিতে থাকে । কাজেই বাধ্য হইয়া মালাদের বাড়ি গিয়া মালার খোজখবর লইয়া আসিতে হয়। আবার দিদির কুশল-সংবাদও তাহাকে জানাইয়া আসিতে হয় । কিন্তু এই যাতায়াতও এখন তাহার আর ভাল লাগে না । কেন-না, তাহার মনে । হয়, দশ জনে তাহাকে এখন আর পূর্কের সেই সমাদর ও বিশ্বাসের চক্ষে দেখে না। শুধু তাহার মনে হয়, কোবনের & E-T-il S) S)359 নির্জন নিঃসঙ্গ নিরালাপথ এখনও সেই পূর্কের মতই তাহাকে সমাদরের চক্ষে দেখে, প্রয়োজন হইলে পূর্বের মতই ভয় দেখায়, আবার পূর্কের মত গন্ধ-বিধুর করিয়াও তোলে। সে-ই শুধু এ জগতে আজিও বদলায় নাই। আবার একদিন মালারও সম্বন্ধ আসিল, ফিরিয়াও গেল । আবার আসিল । একদিন শেষে পাকাপাকি হইয়া গেল । বিবাহের দিন স্থির হইল । মালাদের বাড়ি হইতে মানিকে আনার চেষ্টা হুইয়াছিল। কিন্তু মানির শ্বাশুড়ী জানাইয়াছিলেন যে, বধুমাতার সন্তানসম্ভাবনা, কাজেই হল্লার মধ্যে তাহাকে না-পাঠানই যুক্তিযুক্ত। মানি তাই আসিতে পারে নাই। মালার বিবাহোপলক্ষে বিজু দিন রাত খাটিয়া খাটিয়া ক্লাস্ত হইয়া পড়িল। এতদূর ক্লান্ত হইয়া পড়িআছিল যে, বিবাহের রাত্রে নিমন্ত্রিতদের যখন সে পরিবেশন করিতেছিল তখন তাহার পা কঁাপিতেছিল। তাহার কেবলই মনে হইতেছিল যে, আর বেশীক্ষণ হয়ত সে পরিবেশন করিতে পরিবে না। কাৰ্য্যতও তাহাই হইল। নিমন্ত্রিতদের হাকডাকে তাড়াতাড়ি করিয়া পোলাওয়ের বালতি লইয়া উঠান পার হইতে গিয়া সে ধড়াস করিয়া পড়িয়া গেল। "দেখ, দেখ’ করিয়া লোকজন ছুটিয়া আসিল । ভিড় জমিয়া গেল। তেমন লাগে নাই সত্য, কিন্তু মাথাটা তাহার তখনও ঝিম্ ঝিম্‌ করিতেছিল। তাহাকে কয়েক জনে মিলিয়া একটা ঘরে তুলিয়া শোয়াইয় দিয়া আবার তাহদের নিজের নিজের কাজে চলিয় গেল । - তখন আসিল মালা। মালা নববধূর বেশে সজ্জিত, তাহাকে তখন অপরূপ দেখাইতেছে। মালার দিকে চোখ তুলিয়া বিজু চমকাইয়া উঠিল। মালাকে এ-বেশে যে এত অপরূপ দেখাইবে তাহা সে স্বপ্নেও কোন দিন ভাবিতে পারে নাই। মালা তাহার কানের অতি কাছে মুখ লইয়া অতি আস্তে বলিল,—খুব যা হোক কেলেঙ্কারী করলে বটে বিজু। এ আর কোন দিন আমি ভুলতে পারবে না। মানিদিকে লিখে সব জানিয়ে দেব তোমার কীৰ্ত্তি। কিণ্ড বেশী লাগেনি তো কোথাও? --