পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ ৰোকা । (S్చe মেওয়া ফলিবেই ফলিবে। যোগেশের বিবাহ হইয়াছিল . যথাকলেই, অর্থাৎ বখাকালের অনেক পূৰ্ব্বে, কিন্তু স্ত্রী একটু বেশী জাদুরে মেয়ে, মা ছাড়িয়া বেশী দিন থাকিতে পারে না। নিজের ভিটায় থাকিতে যোগেশের তৰু দুই-একবার বউ আন ঘটিয়া উঠিয়াছিল, এখানে আসার পর তাহাও হয় না। সংশাশুড়ীর ঘর, মা মেয়েকে পাঠাইতে চায় না, যোগেশেরও জেদ করিতে ভরসা হয় না, কি জানি যদিই অষয়-অনাদরে বউ চটিয়া যায়। এই একটি মানুষকে যোগেশ সত্যসত্যই ভিয় করে । বউ রাধারাণী নিজে না আমুক, উঠতে বসিতে স্বামীকে ডাকিয়া পাঠায়। যোগেশ দু-বার যায় ত চার বার যায় না । টাকাকড়ি সব সময় হাতে থাকে না, আর বেশীদিন রামনিধিকে চোখের আড়াল করিতে ভরসা হয় না, কি জানি পিসী তাহাকে কোন কুবুদ্ধি দিয়া তালিম করিম রাখিবে । এখন তবু এতদূর হইয়াছে যে, পিসীকে লুকাইয়া টাকাটা-সিকাটা প্রায়ই যোগেশকে সে আনিয়া দেয়। তাহাকে লেখাপড়া শিখাইবার ছলে যোগেশ অনেকক্ষণ করিয়া নিজের কাছে আটকাইয় রাখে। একটা হাৰ্ম্মোনিয়ম কিনাইবার চেষ্টায় আছে, দোকানদার বলিয়াছে পুরাদমে যদি বিক্ৰী করিতে পারে তাহা হইলে লভ্যাংশের অৰ্দ্ধেক সে যোগেশকে ছাড়িয়া দিবে। রামনিধিদের বাড়ি কলিকাতারই একটা শহরতলীতে। এখানে খোলার ঘর, টিনের ঘরই বেশী, পাকাবাড়ি দু-চারখানা মাত্র, তাও পুরাকালের । মাঠ, পুকুর, বন, বাদাড় এখনও এদিকে ভুলভ নয়। এমন কি, সন্ধ্যাকালে শেয়ালের ডাকও শোনা যায় । জমিজমাও দেশে যথেষ্ট আছে, তবে শরীর ভাল থাকে না বলিয়া গ্রামের বাড়িতে পিসী ভাইপো কেহই থাকিতে চায় না। জমি সব বিলি করা আছে, পিসীমা বছরে দুই বার গিয়া আদায়-উজ্জ্বল বিধিমতে করিয়া আসেন। যোগেশের ইচ্ছা তাহাকে একাজে মাঝে মাঝে পাঠান হয়, তবে তাহার বিমাতা এখন পর্যন্ত তাহাকে আমল দেয় নাই। দিন কাটা চলিয়াছে, রামনিধিরও বয়স বাড়িয়া চলিয়াছে । পিঙ্গীমা একদিন কথায় কথায় বলিলেন, “বুড়ো মান্থব, কৰে আছি কৰে নেই। খোকার বিয়ে দিয়ে গেলে নিশ্চিত হতে পারতাম।” রামনিধি এবং যোগেশ তখন খাইতে বসিয়াছিল। রামনিধির কানে কথাটা ভালই লাগিল, তবে লজ্জায় মাখাটাও একটু নীচু হইয়া গেল। যোগেশ বলিল, “এরই মধ্যে বিয়ে কি মা ? বয়স ত মাত্র ষোল না সতেরে, আর বিদ্যে যা সে কথা আর বলে কাজ নেই। ডুবুরি নামালেও পেটে ক অক্ষর মিলবে না।” - মা বলিলেন, “তা হোক বাছ, ওর অত বাছবিচার করলে চলবে না । বয়স কম, তা আর হয়েছে কি ? তেমনি মানানসই ছোটখাট দেখে বউ আনব। আর বিতে এর চেয়ে বেশী ওর কোনো দিনই হবে না; দরকারই বাকি ? ওর ত রোজগার করে খেতে হবে না? ওর পয়সাতেই কত লোকে বসে খাবে।” যোগেশ রাগে আর কথা বলিল না, কারণ মায়ের কথাগুলির ভিতর তাহার সম্বন্ধে খোচা ছিল যথেষ্ট । কিন্তু তাহার ভাবনা ধরিয়া গেল। বিবাহ যদি রামনিধির হয়ই, তাহা হইলে এখন হইতে যোগেশের যথেষ্ট সাবধান হওয়া দরকার। পিলীম যে-রকম যুত্বে ভাইপোর বিষয়সম্পত্তি আগলাইতেছেন, বউ আসিয়া যে তাহার চেয়ে সে-বিষয়ে যত্ন কিছু কম করিবেন, তাহা বোধ হয় না। এক যদি দেখিয়া-গুনিয়া বোকাসোক মেয়ে একটি আনিয়া দেওয়া যায়, তাহা হইলে কাজের খানিক স্ববিধা হয় বটে। দিন দুই পরে একখানা চিঠি হাতে করিয়া যোগেশ ভাড়ার-ঘরের সামনে আসিয়া দাড়াইল। জিজ্ঞাসা করিল, “মা খুব ব্যস্ত না-কি ? একটা কথা ছিল ।” মা কতকগুলা চাল-ডাল বাড়িয়া বাছিয়া হাড়িতে এবং টিনেতে ভৰ্ত্তি করিতেছিলেন। বলিলেন, “এইগুলো তুলে নিচ্ছি। তা কি কথা ওখানেই দাড়িয়ে বল না।” যোগেশ বলিল, “সেদিন খোকার বিয়ের কথা বলছিলে না ? একটি ভাল মেয়ে সদ্ধানে আছে, বল ত কথা পাড়ি ।” তাহার বিমাতা বিশেষ উৎসাহ প্রকাশ করিলেন না। জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাদের মেয়ে ? কোথাকার " যোগেশ বলিল, “এই কাছাকাছির মধ্যেই আর কি ; সম্পর্কে আমার শালী হয়, বউয়ের মামাতে-বোন। দেখতেগুনতে বেশ ভাল, খোকার সঙ্গে ঠিক মানবে। চালাকচতুর আছে, ঘর-সংসার বুৰেন্থৰে চালিয়ে নিতে পারবে।” ।