পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ ঠত হয় - ^ গহন দিয়াই ক্ষান্ত নয়, পিসীমা কাপড়েচোপড়ে, আসবাবপত্রে বধূর ঘরে একেবারে স্রোত বহাইয়া দিতেছেন। এ সবই একান্ত বাজে খরচ, কারণ টাকার রূপে থাকিলে যাহা কোনোও দিন-ব| যোগেশের হাতে পড়িতে পারিত, গহনা বা কাপড়ে রূপান্তরিত হইলে চিরদিনের মত তাহ তাহার হাতছাড়া হইয়া যাইবে । - পিসীমা এই সময়ে রামনিধির বিবাহ দিয়া ভালই করিয়াছিলেন, কারণ এখন হইতেই ধীরে ধীরে তাহার শরীর ভাঙিতে আরম্ভ করিল। যোগেশের মনে একদিকে যেমন একটু আশার সঞ্চার হইল, আর একদিকে আশঙ্কাও হইতে লাগিল যে, বুড়ী যোগেশের সৰ্ব্বনাশের পূরা ব্যবস্থা না করিয়া মরিবে না। দেশের জমিজমাম্বন্ধ বিক্রয় করিয়া দিয়া পিসীম কলিকাতায় আর একখানা বড় বাড়ি করিবার ব্যবস্থা করিতেছেন দেখিয়া তাহার বুক আরও দমিয়া গেল । সে বাড়ি আবার হুইবে নHকি বউয়ের নামে। পূজা আসিয়া পড়িল। পিসীমার হঠাৎ সখ হইল, ঘরে মাদুর্গাকে আনিতে হইবে । যোগেশ মুখ গোজ করিয়া বলিল, “কখনও ত বাড়িতে পূজো হয় নি, এখন আবার অত টাকা খরচ করা কেন? এখন নিধে সংসারী হয়েছে, একটু বুঝেস্বঝে চলতে হবে না ?” নিখের পিলীমা বলিলেন, “কতই আর খরচ ? ওতে আমার খোক, ফতুর হয়ে যাবে না। ঘরে বউ এসেছে, এই ত এবার ক্রিয়াকর্মের সময়। আমার চিরদিনের সাধ, এতদিন পারিনি, এবার জানব ।” রাধাৱাণী দেবরের বিবাহে আসে নাই, তাহাতে কথা উঠিয়াছে, এবারে পূজার নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করিতে পারিল না। আসিয়া উপস্থিত হইল। রামনিধির বধূর সাজপোষাকের বিবরণ স্বামীর কাছে চিঠিতেই পাইয়াছিল, পাছে তাহার কাছে একেবারে মুখরক্ষা না হয়, এই জন্য চাহিয়া-চিন্তিয়া গহনাকাপড় বেশ কিছু জোগাড় করিয়াই জানিল । যোগেশ একলা মানুষ, যে-ঘরে থাকিত সে-ঘরখানা কিছু ছোট। এতদিন সেটা তাহার অত চোখে পড়ে নাই, বউ আসিয়া চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয় দিল। বলিল, “ব’লে বলে ভূতের ব্যাগার যে খাটছ, কিলের জন্যে ? চাকরবাকরকেও ত লোঙ্কে এর চেয়ে ভাল ঘর দেয়।” ৰোকা (Sళి যোগেশ বলিল, “অস্থির হয়ে লাভ কি ? সবুরে মেওয়া ফলে। বড় ঘর ত দুখানি মোটে, একটিতে বুড়ী থাকে আর একটি নূতন বউ দখল করেছেন, কা'কে ঘর ছেড়ে দিতে বলব ?” রাধারাণী বলিল, “পাত-চাপ কপাল বটে ছুড়ির। একেবারে আঁস্তাকুড় থেকে রাজসিংহাসনে উঠে বসল। আর আমাদের দশ দেখ না, চিরকাল বাপের গলগ্রহ হয়েই কেটেগেল।” যোগেশ শুধু বলিল, “দেখাই যাক।” রাধারাণী বলিল, “দেখৰে তুমি আমি যমের বাড়ি গেলে পর। স্বশীল-বউয়ের জন্তে নাকি পূজোর উপহার আসছে ইরের গহনা । আমি কেন যে এখানে মরক্তে এলাম।” যোগেশ পাশ ফিরিয়া শুইল । ঘুম তাহার হুইল না, কিন্তু পত্নীর সহিত বাক্যালাপে আর সে সময় নষ্ট: করিল না। যথোচিত ধুমধাম করিয়াই পূজা হুইয়া গেল। স্বশীলাবউয়ের নূতন এবং পুরাতন গহনা লইয়া মন্তব্যও ঘরে বাহিরে" কম হইল না। রাধারাণী রামনিধিকে খোটা দিয়া বলিল, “বলি ঠাকুরপো, সোনা হীরে কি একলা তোমার স্বন্দরী বউই পরবে ? আর একটা বউয়ের কাল অঙ্গে দু-একখানা কিউঠতে পারে না ?” রামনিধি লজ্জিত হইয়া বলিল, “আমি কি দিয়েছি ? ওসব পিসীমার দেওয়া।” রাধারাণী বলিল, “তার মানে তোমারই দেওয়া। টাকা ত. পিসীমা নিজের ঘর থেকে দিচ্ছেন না।” রামনিধি খানিকক্ষণ দাড়াইয়া কি ভাবিল, তাহার পর “আচ্ছা দেখি,’ বলিয়া চলিয়া গেল। বিজয়ার দিন সত্যই সে এক ছড়া সোনার হার আনিয়া রাধারাণীর হাতে দিয়া তাহাকে প্ৰণাম করিল। রাধারাণী বিস্ময়ের ভাণ করিয়া বলিল, “ওম একি কাও, ঠাকুরপো, আমি ঠাট্টা করে বললাম, তুমি সত্যি ভাবলে না-কি ?” রামনিধি বলিল, “ত আমি কি ক’রে জানব যে ঠাট্টা ? পিসীমাকে বলে তোমার জন্তে কিনে জানলাম।”