পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• স্বাস্থ্য শিক্ষা সমবায় ফসলের সম্বন্ধে সংবাদ (চ) আবহাওয়ার অবস্থা (ছ) বাজার-দর ইত্যাদি বক্তৃতা, প্রদর্শনী, সিনেমা-চিত্র, বেতার প্রভৃতির সাহায্যে সে উদ্দেশ্রসিদ্ধির পথ সুগম করা যায়, তাহ বলাই বাহুল্য। কিন্তু পল্পীজীবন সুগঠিত করিতে হইলে সৰ্ব্বাগ্রে স্বাবলম্বী হইতে হইবে। মহাজনের ঋণজাল হইতে কৃষককে মুক্তি দিয়া তাম্বার নিরাশ হৃদয়ে আশার সঞ্চার করা যেমন প্রয়োজন, যাহাতে তাহার সেই আশা পূর্ণ হয়, তাহার উপায় করাও তেমনই প্রয়োজন। এই জন্য কৃষির ও অন্যান্য শিল্পের উন্নতিসাধনোপায় করিতেই হইবে পল্লীপ্রাণ ভারতবর্ষের পল্লীগ্রামগুলি শিল্পের জন্য কিরূপ প্রসিদ্ধ ছিল, তাহা সৰ্ব্বজনবিদিত। যখন প্লিনী দুঃখ করিয়া বলিয়াছিলেন, ভারতবর্ষ তাহার পণ্যের বিনিময়ে রোমক সাম্রাজ্য হইতে প্রতিবৎসর বহু অর্থ লইয়া যায়, তখন হইতে শত বৎসর পূর্ব পর্যন্ত ভারতের শিল্পীরা কেবল ধে দেশের লোকের ব্যবহার্য্য দ্রব্য উৎপন্ন করিত, তাহাই নহে ; পরস্তু তাহাদিগের উৎপন্ন পণ্য বিদেশেও রপ্তানী হইত। শতবর্ষ পূৰ্ব্বে মাদ্রাজের গভর্ণর স্তর টমাস মনরো মত প্রকাশ করিয়াছিলেন, এদেশে অল্প কাল মধ্যে বিলাতী মালের অধিক ব্যবহার-সম্ভাবনা নাই। তিনি লিথিয়াছিলেন :– “যে পণ্য কোন দেশ আপনি অল্পব্যয়ে উৎকৃষ্টরূপ প্রস্তুত করিতে পারে, তাহা সে দেশ কখনই অন্য দেশের নিকট হইতে গ্রহণ করে না। ভারতবাসীর যে-সকল দ্রব্য ব্যবহার করে প্রায় সে-সকলই ভারতবর্ষে স্বল্পব্যয়ে উৎকৃষ্টরূপে প্রস্তুত হয় । কাপাস ও রেশমের কাপড়, চামড়', কাগজ, সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যবহার্য্য লৌহের ও পিতলের বাসন, কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় যন্থাদি এই সকলের অন্তভূক্ত। ভারতবাসীরা যে পশমী কাপড় প্রস্তুত করে তাহ মোট হইলেও তাহার মুল্য অল্প, আর তাহাদিগের উৎকৃষ্ট কম্বল যুরোপে প্রস্তুত ঐ গ্রব্য অপেক্ষা অধিক গরম ও দীর্ঘকালস্থায়ী। (*) (१ोंf (s) (8) পুনর্গঠন 6. එ ෂ মনরে যে-সব পণ্যের উল্লেখ করিয়াছিলেন, সে সকলের মধ্যে কতকগুলির জন্য বঙ্গদেশ প্রসিদ্ধ ছিল; যথা— কাপাস বস্ত্র, রেশমী কাপড়, পিতলের ও র্কাসার বাসন ও কম্বল। ঢাকার সূক্ষ্ম বস্ত্রের কথা ছাড়িয়া দিলেও বলা যায়, বাংলায় অন্যান্য কাপড় যে পরিমাণে উৎপন্ন হইত, তাহাতে বাঙালীর প্রয়োজনাতিরিক্ত কাপড় বিদেশে বিক্রয় কর চলিত। ১৫৭৭ খৃষ্টাব্দে শেখ ভীক নামক মালদহের একজন ব্যবসায়ী তিন জাহাজ মালদহী কাপড় পারস্তোপসাগরের পথে রুযিয়ায় প্রেরণ করিয়াছিলেন। - মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ ও বিষ্ণুপুরের রেশমী কাপড় একদিন বাংলায় ও বাংলার বাহিরে আদৃত ছিল। বহরমপুর ( খাগড়া ), দাইহাট, নবদ্বীপ, বাঁকুড়, বরিশাল প্রভৃতি স্থানের কাসার ও পিতলের বাসন বাংলার ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হইত। একটি শিল্প যখন সমৃদ্ধ হইয় উঠে, তখন তাহার আহ্বযঙ্গিক শিল্পেরও উদ্ভব ও শ্ৰীবুদ্ধি হয়। আজ আমরা ফরস্কাবাদ ও লক্ষ্মেী শহরের ছাপাকাপড় দেখিয়া যখন তাহার শিল্পাচাতুর্য্যের প্রশংসা করি, তখন আমাদের মনে করা উচিত, বাংলায় রেশমী কাপড় ছাপাইবার জন্য যে রঞ্জনশিল্প সমৃদ্ধিলাভ করিয়াছিল, তাহ বাংলার গৌরবের কারণ বলিলেও অত্যুক্তি হয় না । বাংলায় যে কাগজ ব্যবহৃত হুইত, তাহাও বাংলার নানা স্থানে প্রস্তুত হইত। চামড়া সম্বন্ধেও সেই কথা বলা যায়। বাঁকুড়ায় মোটা ও জঙ্গীপুরে (মুর্শিদাবাদ) উৎকৃষ্ট কম্বল প্রস্তুত হইত। শত বৎসরে অবস্থা কিরূপ পরিবর্তিত হইয়াছে ! এই পরিবর্তনের ফলে পল্লীগ্রামের শ্ৰীনাশ অবশুম্ভাবী। এখন কৃষিই পল্লীগ্রামের লোকের একমাত্র অবলম্বন হইয়৷ দাড়াইয়াছে। কৃষির অবস্থাও শোচনীয়। কৃষির অবস্থা শোচনীয় হইবার সঙ্গে সঙ্গে অনিবাৰ্য্য কারণে কৃষকের অবস্থাও শোচনীয় হইয়াছে ; এত শোচনীয় হইয়াছে যে, অনন্তোপায় হুইয়া স্তর জন এণ্ডাসন বলিয়াছেন, অতঃপর কৃষকের ঋণ কতকটা বাদ দিয়া মিটাইয়া ফেলিতে হুইবে । এইরূপে সে ঋণ মিটাইতে হইলে যে টাকার প্রয়োজন হইবে, তাহার ব্যবস্থা