سوه খুলিৱা দেখেন নাই, খুলিলে হয়ত দেখিতেন—ছাইভস্ম নয়, তাল তাল সোনা ফলিয়া আছে । সহায়রামের গানের ছুটি ছত্র উমানাথের মনে ভাসিয়া বেড়াইতে লাগিল— সিন্মুকের মধ্যে সোনার বৃক্ষ, বৃক্ষে ফলে সোনা, জাকাশের টার দিৰ রে পেড়ে (ও বীপ) সিন্মুক খুলিব না।... নিজের ঘরে আসিয়া উমানাথ দেখিল, তরঙ্গিনী দুয়ার ভেজাইলা অঘোরে ঘুমাইতেছে। একটা জানাল খুলিয়৷ দিতেই টাটকা বুনো ফুলের গন্ধ আর সঙ্গে সঙ্গে সিন্দুকের পালার কথাগুলি একটির পর একটি যেন বাহিরের ঘন অন্ধকারের মধ্য হইতে ভাসিয়া আসিতে লাগিল। কত রাত্রি অবধি যে আপনার মনে গুণ-গুণ করিতে করিতে অবশেষে এক সময় ঘুমাইয়া পড়িল ; ঢাক-দেওয়া খাবার পড়িয়া রহিল, शोंeग्न श्हेंल नां । দেবীদাস রায় সম্পর্কে জগদ্ধাত্রীর ঠাকুরদাদা— সহায়রাম রায়ের কি রকমের খুড়া হইত। বাপ ছিলেন দশকৰ্ম্মান্বিত ব্রাহ্মণ, দু-দশ ঘর যজমানের কল্যাণে কায়ক্লেশে সংসার চলিত। কিন্তু দেবীদাস ওপথেই গেল না, দিনরাত কেবল কুস্তি লড়িয়া লাঠি ভাজিয়া ছোটলোকের ছেলেদের সঙ্গে বেড়াইত । মজা টের পাইল বাপের জীবন-অস্তে। বয়স তাহার তখন কুড়ি-বাইশ। নিত্যকৰ্ম্মপদ্ধতি খুলিয়া অবাধ্য স্মরণশক্তিকে বশে আনিবার রীতিমত প্রয়োজন পড়িয়া গেল। ঠিক এই সময়ে এক যজমান-বাড়ি কি একটা ব্যাপারে যৎপরোনাস্তি অপদস্থ হইয়া আসিয়া মনের ঘৃণাম দেবীদাস নিরুদ্দেশ হইয়া যায় ; লোকে বলিত-নবদ্বীপের কোন টোলে পড়িতে গিয়াছে। পড়াশুনা কতদূর কি হইয়াছিল জানা নাই ; মাস ছয়েকের মধ্যেই একদিন সকাল বেলা দেখা গেল, দেবীদাস ফিরিয়া আসিতেছে—সঙ্গে দু’খানা গরুর গাড়ী। একটা হইতে নামিল, বেশ গোলগাল-গড়ন হাসিমুখ একটি বধূ, অন্তটি হইতে নামান হুইল ঐ বিশালকায় সিন্দুক । মেয়ের আড়ি পাতিতে গিয়া দেখিয়াছে, নববধূ গভীর রাত্রি পর্যন্ত প্রদীপের সামনে তালপাতার পুথি লইয়া নিবিষ্ট মনে বসিয়া থাকিত আর দেবীদাস খাটের অপর প্রাস্তে অনেকটা দূরে অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া ঘুমাইত কি, কি করিত কে \ , ∨}, Sово জানে ? মোটের উপর বোঝা যাইত, সরস্বতী-সম্পর্কিত ব্যাপারগুলাকে তখনও দেবীদাস সসন্ত্রমে পাশ কাটাইয়া চলে । - তারপর কেমন করিয়া বলিতে পারি না বধূর সঙ্গে ভাব জমিয়া আসিল। এক একদিন রাত্রে টিপিটপি ঘরে ঢুকিয় দেবীদাস অধ্যয়নরতা বধূর যৌবনস্নিগ্ধ তদগত মুখের দিৰুে প্রলুব্ধ চোখে ক্ষণকাল চাহিয়া রহিত। তবু সম্বিং হয় না দেখিয়া একটানে বালিশ বিছানা বধু ও পুথিমৃদ্ধ খাটখানি জানলার দিকে হুড়মুড় করিয়া টানিয়া লইত, বধু চমকিয় সলজ্জভাবে তাড়াতাড়ি বই বন্ধ করিম উঠিয়া দাড়াইত, মুখে ঈষৎ বিরক্তির ছায়। তখনই সে ভাব সামলাইয় একটু হাসিয়া বলিত-অমনি করতে হয় ? এসে সাড়া দেও নি কেন ? দেবীদাস হাসিমুখে চাহিয়া থাকে। বধু বলিত—খাটু সমেত টেনে নিলে, তোমার গায়ে জোর ত খুব— দেবীদাস সগৰ্ব্বে পেশীবহুল সুপুষ্ট হাত দুখানা নাড়িয়া বলিত—ভারী ত এতে আর জোরটা কি লাগে ? আচ্ছা ঐ সিন্দুকটাও চাপিয়ে দেও থাটের উপর। তারপর যেমন বসেছিলে তেমনি থাকে । দেখো-- আবার হাসিন্ধু বলিত– এ বসে বসে কেবল তালপাত নাড় নয় । বিস্ময়ে বধুর চোগ কপালে উঠিত –সত্যি পার ? দেখ—বলিয় দেবদাস বধুটিকে ছোট্ট একটি তুলার পুটুলীর মতো শূন্তে তুলিয়া ধরিত। তারপর লুফিয়া টানিয়া বুকের মধ্যে আনিতে গেলে বধু কঁপিয়া চেচাইয় উঠে। তাহাকে মাটিতে নামাইয়া দিয়া হাসিম দেবীদাস বলে— ভয় পেয়েছ বড্ড ? তারপর সদয় কণ্ঠে বলে—আর ভয় দেব না । একদিন দুপুর রাত্রে দু-জনে ঘুমাইয়া আছে। খুট-খুট শব্দ হইতেছে। বধু জাগিয়া উঠিয়া ভয়ে স্বামীর বুকের মধ্যে লুকাইল। ফিসফিস্ করিয়া কহিল—শুনছ ? দেবীদাসেরও ঘুম ভাঙিয়াছে। আস্তে আস্তে উঠিয় বসিল। বলিল—চোরে সিদ্ধ কাটছে বোধ হয়। কিছু ভয় নেই, তুমি আমায় ছাড় ত একটু, লঙ্কি ।
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।