পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

を●● গিয়াছিল। কিন্তু মাঝখানের এতগুলি দিন ব্যাপিয়া এত যে ঘটনা-পরম্পর, এত স্বখদুঃখ, আঘাত-বেদনা, মান-অভিমান, জয়-পরাজয় তাহার জীবনের উপর দিয়া বহিয়া চলিয়া গেল, তাহার মধ্যেকার আসল মানুষটাকে তাহার কোন জায়গায় স্পর্শ করিয়া গেল ? সঞ্চয়ের ভাণ্ডারে মৃত্যকারের সম্পদ কোথায় তাহার কি জমা হইয়াছে ? লাভ-লোকসানের হিসাব যদি করিতেই হয়, নিজের মধ্যে কোন জায়গায় সে চাহিবে, কোন বিচারের মাপকাঠি দিয়া দেনা-পাওনার পরিমাপ করিবে ? তুচ্ছতাকেই যাহারা চরমতম করিয়া জানে, জীবন তাহাদিগকে তুচ্ছতার সম্পদ দিয়াই ধনবান করে । ছোট স্বখদুঃখ আনন্দ-বেদনা লইয়াই জীবন তাহদের কাছে সত্যের অন্ততঃ একটা পরিপূর্ণ রূপ লইয়া দেখা দেয়। কিন্তু পৃথিবীতে তাহার মত হতভাগ্য আর কে আছে, যাহার নিকট তুচ্ছতা তুচ্ছতা বলিয়া ধরা পড়িয়াছে, অথচ প্রবের সন্ধানে অন্য কোনও দিকে তাকাইবার সাহসও যাহার নাই ? স্থির করিল এইবার তাকাইবে । আর নিজের নিকট হইতে পলাইয় বেড়াইবে না। যদি দুঃখ পাইতে হয়, সে দুঃখ তাহার জীবনে সত্য হইবে, মোহগ্রস্তের যে সুখ তাহা লইয়া সে সুখী হইবে না। মনে পড়িল পাপের সঙ্গে কলুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়াও একদা নিজেকে সে পাইতে গিয়াছিল, কিন্তু তাহার মধ্যেকার আসল মানুষটা সেদিনও তাহার সঙ্গে ছিল না বলিয়া সে পরিচয় ঘটিয়াও তাহার ঘটে নাই । তাহার পর তাহার জীবনে আর যাহ-কিছুই আসিমাছে, সে-সমস্তও ঠিক তেমনই ভাবেই ব্যর্থ হইয়াছে। সে আনন্দ করিয়াছে, কিন্তু তাহা যেন তাহার নিজের আনন্দ নহে, দুঃখ করিয়াছে কিন্তু সে যেন নিজেকে ছলনা করিয়া দুঃখ দেওয়া, অভিমান করিয়াছে কিন্তু তাহার মধ্যে কে যেন তাহাই লইয়া লুকাইয়া হাসিয়ছে। বীণ-ঐশ্রিলাকে লইয়৷ এই যে এত বেদন পাইতেছে, সহসা মনে হইল এক যেন তাহার সত্যবেদন নহে। ঐন্দ্রিলাকে ভালবাস, বীণাকে ভাল লাগা, এই উভয়েরই মধ্যে কোথায় যেন অতি গভীর আত্মপ্রবঞ্চন অলক্ষ্যে মিশিয়া রহিয়াছে। নিজেকে পরিপূর্ণ করিয়া জানে না বলিয়৷ কিছুতেই এই আত্মপ্রবঞ্চনার আড়াল ঘুচিতেছে না, বীণা এবং ঐন্দ্রিল "উভয়েই তাহার জীবনে ব্যর্থ হইতেছে। S398O হঁ্য, ব্যর্থ হইতেছে। এতদিন ধরিয়া হৃদয়কে রক্তাক্ত করিয়া সে যে ভালবাসিল, সে ভালবাস তাহার নিজের বা অপরের কোনও কাজেই ত লাগে নাই। তাহার এ ভালবাসাকে অবলম্বন করিয়া পৃথিবীতে কোথাও কাহারও জন্য কোনও কল্যাণের স্বর্গ রচিত হয় নাই। তাহার ভালবাসার মধ্যে কল্যাণের রূপ সাত্মনীর রূপ কোথায় প্রচ্ছন্ন আছে সে পরিচয় না পাইলে ইহাকেই বা শ্রদ্ধার অর্ঘ্য দিয়া কেমন করিয়৷ অন্তরের মধ্যে সে গ্রহণ করিবে ? মমতাময়ী বীণ, মূৰ্ত্তিমতী করুণ-রূপিণী বীণ, দৃঢ়হাতে তাহার আলিঙ্গনপাশ যে সেদিন আলগা করিয়া দিয়া গিয়াছিল, সে ত ঠিকই করিয়াছিল। মিথ্যাকে মিথ্যা বলিয়া চিনিতে তাহার মুহূর্তের বেশী দেরি লাগে নাই । অজয়ের স্পৰ্দ্ধা । কেবল নিজেকে ফাকি দিয়াই সে, তৃপ্ত হয় নাই, নিরপরাধ বীণাকে ও ফকির জালে জড়াইতে গিয়াছিল। অরশু সেইসঙ্গে ইহাও সে জানে, বীণাকে অদেয় সত্যসত্যই কিছু তাহার নাই, অস্ততঃ দিবার মত ধন এমন কিছু আছে যাহা দিয়া দিতে পারিলে জীবনধারণ সার্থক হয়। কিন্তু সে কি জিনিষ যাহ। সে দিতে পারে, কিরূপেই বা সবদিক্ রক্ষা করিয়া তাহা দেওয়ার মত করিয়া দেওয়া যায়, যতদিন তাহা না বুঝিতে পরিবে, ততদিন বীণার সম্মুখে গিয়া দাড়াইবার অধিকারও তাহার আর রছিল না। নিজে হইতে বীণ। আর আসিবে না, কেহ বলিয়া না দিলেও অজয় তাহ নিশ্চয় করিয়াই জানে। এমনই করিয়া সবদিকৃ হইতে সমস্ত রকমে যখন তাহার জীবনের একেবারে ভিত্তিমূলে ভাঙন ধরিয়াছে তখন বিমান একদিন সন্ধ্যভ্রমণ সমাধা করিয়া আসিয়া সংবাদ দিল, মন্দির মরণাপন্ন অস্বস্থ, হেমবালার দাসী শ্ৰীক্ষেত্র হইতে তীর্থ করিয়া ফিরিয়া আসিয় তাহাকে মহাপ্রসাদ খাইতে দিয়াছিল, তাহ। হইতে বিষম বিপত্তির স্বত্রপাত হইয়াছে। অজয়ের জর তখন গত কয়েকদিনের তুলনায় অনেক কম, বিমানকে তাহার ভার বুঝাইয়া দিয়া স্বভদ্র পড়ি কি মরি বালিগঞ্জে ছুটিমা গেল । তারপর কয়েকদিন ধরিয়া মন্দিরকে লইয়া যমে-মানুষে লড়ালড়ি। স্বভদ্র চিকিৎসার ভার লইয়াছে, হৃষীকেশ তাহাতে বাধা দেন নাই । কিন্তু অজয় সারিয়া উঠিয়া ভাত পথ্য করিল, তখনও মন্দিরাকে লইয়া দুশ্চিন্তার বিরাম নাই ।