পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আস্থা অজয় ঘটতে চাহিয়া’ছল, এবারে স্বভত্রই তাহাকে বাধা দিল, কহিল, “আমাশা সারবার মুখে হঠাৎ নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেপা দিয়েছে, তোমার বুকের অবস্থা এমনিতেই ত ভাল নয়, এই সময় ছোয়াচ লাগলে অল্লেতেই বিপদ বাধতে পারে।” অতএব অজয় যায় না, কিন্তু অপর-সকলের অপেক্ষ মন্দিরার কল্যাণ-কুমিন। সে বেশী জোরের সঙ্গে করে। প্রার্থনা করে, কাদে। সুভদ্রকে নানা বিষয়ে উপদেশ দেয়, সৰ্ব্বদা সমস্ত দিকে তাহার মনকে সচেতন করিয়া রাখিবার চেষ্টা করে । সেই সঙ্গে নিজের মনকে বোঝায়, সে যে যাইতেছে না, বীণা ডাহার এই অপরাধকে ক্ষমা করিবে না। হয়ত তাহার , জীবনের জট ছাড়াইবার ইহাই এক উপলক্ষ্য হইবে । সে ষে কত অযোগ্য তাহা বুঝিতে পারিয়া বীণা তাহাকে ভুলিয়৷ গিয় বঁচিবে । তাহার অনুস্থতায় বীণা প্রাণপাত করিয়া তাহার সেবা করিষ্কাণ্ডিল, আজ বীণার এই ঘোরতর বিপদের দিনে তাহার পাশে গিয়া যে সে দাড়াইল না, নিজের সেই অকৃতজ্ঞভার অপরাধকে এইরূপ নানা ছলনায় সে তুলিতে লাগিল । স্বভদ্র কোনওদিন সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরিয়া আসে, তাহার ফিরিয়া আসিতে কোনওদিন বা গভীর রাত্রি হইয়া যায়। শেষের দিকে সবদিন রাত্রিতেও তাহার ফিরিয়া আসিবার অবসর হয় না । যখন আসে, ক্রমাগত ছটফট করিয়া কাটায়। শেলুফ, হইতে একটার পর একটা বই পাড়িয়া আনে, পাতার পর পাতা উল্টায়, কোনওটাতে মনোনিবেশ করিতে পারে না । তাহাকে এত চঞ্চল কেহ কথনও দেখে নাই। একদিন বিমানকে বলিল, “ভাই, তুমি গিয়ে ওঁদের বল, ওঁরা কেউ একজন ভাল ডাক্তার ডেকে আমুন, আমার ওপর নির্ভর করতে বারণ ক'রে এসো ।” ধিমান বিরক্তিতে মুখ বাকাইয়া বলিল, “বলতে হয় তুমি নিজেই গিয়ে বল না।” স্বভদ্র বলিল, “কিছুতেই নিজের মুখ দিয়ে কথাটা বেরবে না। প্রাণ ধ'রে ওর চিকিৎসার ভার আর কারও হাতে আমি দিতে পারব না। আমি জানি, আমি প্রায় নিশ্চয় ক’রে জানি, ওকে সারিয়ে দিতে পারব। কিন্তু মরা বঁাচ ভগবানের হাত। যদি কিছু হয়, পৃথিবীকে কেমন ক’রে আমি মুখ দেখাব ?” शृचण ¢«»ፃ বিমান বলিল, “তা যদি মনে কর তাহলে চিকিৎসার ভার নিজের হাতে না রাখাই ভাল। . পাশ-করা ডাক্তার অতি বড় মারাত্মক ভুল করলেও তাকে সহজে কেউ কিছু বলতে ভরসা পায় না, কিন্তু বলবার ছুতে পেলে তোমাকে কেউ রেয়াত করবে না, সেটা গোড়াগুড়ি জেনে রাখাই ভাল।” e পরদিন ভোরে সুভদ্র ভয়ে ভয়ে কথাটা বীণার কাছেও পাড়িল। বীণা বলিল, “এই কি আপনার এসমস্ত বাজে সেণ্টিমেন্টের সময় ? আমার মেয়ের ভালমদের দায় আমার একলার, আর কারুর নয়। আপনার চিকিৎসাই চলবে ।” কিন্তু স্বভদ্র একবার তাহার মনে সংশয় ধরাইয়া দিয়াই বিপদ করিল। চিকিৎসকের নিজের উপর যদি নিজের শ্রদ্ধা না থাকে, অপরের পক্ষে সে-শ্রদ্ধাকে বেশীদিন বঁাচাইয়৷ রাখা কঠিন হয়। বিকালে মন্দিরার অবস্থা দেখিয়া ভয়ে বীণার হাত-পা আড়ষ্ট হইয়া আসিল । শুষ্ককণ্ঠে স্বভদ্রকে আসিয়া কহিল, “আপনি কি সত্যিই মনে করেন, শেষ রক্ষা করতে পারবেন না ?” স্বভদ্র বলিল, “আমার কতটুকুই বা শক্তি, অভিজ্ঞতাই আর কতদিনের, যে জোর করে কিছু বলব। তবে যতটা সহজ হবে ভেবেছিলাম তা হচ্ছে না দেখতে পাচ্ছি। যদি আর কাউকে ডেকে দেখাতে চান, আমি বাধা দেব না।” হেমবালার তরফ হইতে, নরেন্দ্রনারায়ণের তরফ হইতে চিকিৎসা-পরিবর্তনের তাগিদ ছিল। বীণাই এতদিন দৃঢ়তার সঙ্গে সকলের সকল কথার প্রতিবাদ করিয়া আপিন্ধাছে। আজ স্বভদ্র নিজেই তাহার সেই জোর অপহরণ করিয়া লইয়াছে, আর একমুহূৰ্ত্ত অপেক্ষ না করিয়া সে কম্পিতপদে হৃষীকেশের মহলের দিকে চলিয়া গেল । রাত্রিতে বাড়ী ফিরিয়া স্বভদ্র বিমানের কাছে প্রায় কাদিয়া পড়িল, “বলিল, ভাই বৃথাই এতদিন এত মেহনত করলাম। যে-সময়টা সব-চেয়ে বেশী আমি ওর কাজে আসতাম তখনই তার কাছে আমি ধাকৃতে পারলাম না।” বিমান সব কথা শুনিয়া কহিল, “দোষটা যখন সম্পূর্ণ তোমার তখন তা নিয়ে নাকে কেঁদে আর কি হবে ? তুমি যাদের কাছে থাকতে পার না, এমনও ত অনেকেরই অম্বধ শেষ অবধি সেরে যায়, আশা করা ধাকু ওরটাও যাবে।”