পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

geve কিন্তু মন্দিরার অম্বখ সারিল না। চার দিনের দিন স্বভদ্রই শেষ সম্বাদ লইয়া আসিল । বিমানের বিছানার উপর লুটাইয়া পড়িয়া কাদিয়া কহিল, “আমার চিকিৎসকলীলা এই পর্যন্ত। তোমা বলছি, ভালবাসতে পারা আমার স্বভাবে নেই তৰু ওকে আমি কি ভাল যে বাস্তাম ! কিন্তু আমার ভালবাসায় সে জোর কেন ছিল না যে, ওকে আমি দাবী করতে পারি, সকলকে দুহাতে সরিয়ে দিয়ে বলতে পারি, ও বাচুক মরুক আমি দেখব, কারুর কোনো কথায় আমার কিছুমাত্র এসে যাবে না। আমার আত্মাভিমানের কাছে এই ফুলের মত কচি মেয়েটাকে আমি বলি দিলাম।” তাহার পা হইতে জুতা খুলিয়া বিমান তাহাকে ভাল করিয়া শোয়াইয় দিল। একটু থামিয়া স্বভদ্র আবার কহিল, “তোমাকে আমার বলা রইল, আমার অনধিকারচর্চার যত কিছু তোড়াজোড়, বই খাতা শিশি বোতল যন্ত্রপাতি, সব একটা গরুর গাড়ীতে চাপিয়ে কোথাও একটা পুরনো জিনিষের দোকানে কাল ভোরেই ফেলে রেখে আসবে। ওগুলোকে আর না আমার চোখে দেখতে হয়।” মন্দিরার মৃত্যু অজয়ের জীবনে যে অশ্রুর প্লাবন বহিয়৷ আনিল, একমাত্র দুঃখিনী বীণার তলহীন অশ্রুবারিধির সঙ্গে তাহার হয়ত কতক তুলনা চলে। হৃদয়ের সব কয়টি রুদ্ধদ্বার একসঙ্গে সে খুলিয়া দিল, চতুর্দিক হইতে ঝড়ের হাওয়ার মত মন্দিরার জন্ত হাহাকার, বীণার জন্য হাহাকার বহিয়া আসিয়া আছাড়ি পিছাড়ি খাইমু ফিরিতে লাগিল। এবারে আর কোথাও কোনও আত্মপ্রবঞ্চনার আড়াল রহিল না। যাহার কাছে আৰ্ত্ত দেহমন লইয়া এতদিন কেবল সে আশ্রয়-কামনা করিয়া ছুটিয়া গিয়াছে, আজ সহসা তাহাকে আশ্রয় দিবার জন্ত, সকল দিক্ হইতে সমস্ত প্রকারে তাহার দেহুমন হইতে বেদনার শেষ চিহ্নটিও মুছিয়া লইবার জন্য তাঁহার হৃদয় ব্যাকুল হইল। তাহার সমস্ত অস্তিত্ব আলোড়িত করিয়া কেবল এই কথাই ধ্বনিত হইতে লাগিল, তুমি আমার কে তাহা আমি জানি না, তোমাকে ভালবাসি কি বাসি না সে তর্কের আজ আমার কাছে কোনও অর্থ নাই, তোমার দুঃখ আজ তোমা-অপেক্ষ আমার নিকট বড় হইয়াছে, আমার নিজের অপেক্ষ বড় হইয়াছে, এই দুঃখ হইতে কোনও দিকে এতটুকুও যদি তোমাকে আমি আড়াল না করিতে SOBO পারি আমি সৰ্ব্বতোভাবে ব্যর্থ হইব। এতদিনের মধ্যে একবারও গিয়া মন্দিরার খোজ লয় নাই, এই অনুশোচনা মৃত্যু-যন্ত্রণ অপেক্ষা অহার বেশী হইল। মনে পড়িল, মাতৃ-গৰ্ব্বে মন্দিরা একদিন তাহাকে নিজের সন্তানরূপে দাবী করিয়াছিল, কুতী সন্তানের উপযুক্ত ব্যবহারই সে করিয়াছে বটে ! শোকের প্রথম আবেগটা একটু কাটিয়া যাইবা মাত্রই অজয় বীণার সঙ্গে আসিম্বা দেখা করিল। মনে করিয়াছিল, বীণা তাহাকে দেখিয়া একেবারেই মুহমান হুইয়া ভাঙিয়া পড়িবে। কিন্তু তাহার কোনও ব্যবহারে কিছুমাত্র অস্থিরতা প্রকাশ পাইল না। অজয়কে নীরবে একটি চেয়ার দেখাইয়া দিয়া নিজে খোলা জানালায় একদৃষ্টে বাহিরের দিকে চাহিয়৷ সে স্তব্ধ হইয়া বসিল । বস্তৃক্ষণ নীরবে কাটিবার পর অজয় কহিল, “ক্ষমা চাইব না, কারণ জানি আমার অপরাধের ক্ষমা নেই। সমস্ত জীবন দিয়ে এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি সে-সুযোগ তুমি আমায় করে দাও, এই ভিক্ষ তোমার কাছে আমি চাইতে এসেছি।” বীণ নীরব রহিল দেখিয় সে আবার কহিল, “আমি জানি তোমাকে দেবার মত বাইরের বিচারে কিছুই আমার নেই, কিন্তু আমার কাছে অন্ততঃ আমার নিজেটার চেয়ে বেশী মূল্যবান আর কি আছে ? আমার শ্রেষ্ঠ যা দেবার তাই তোমাকে আমি দিতে চাইছি।” বীণার ঠোট-দুইটা একটু কঁাপিল, অজম্বের দিকে সে চাহিল না, চোখ-দুইটাকে অল্প একটু নামাইয়া কহিল, “ত হয় না ।” অজয় ব্যগ্রকণ্ঠে কহিল, “কেন হয় না ?” “সে আলোচনা আজকের মত থাক না ।” “না, থাকবে না, আমি আজই শুনতে চাই । তোমাকে এমন করে দুঃখ পেতে আর একদিনও আমি দেব না, যদি নদেওয়া আমার সাধ্যে থাকে।" বীণ। বলিল, “হয় না এইজন্যে যে তুমি আমার ভালবাস יין ה= অজয় বলিল, "এই পৃথিবীতে অন্ততঃ তোমার কাছে আমি আত্মগোপন করব না। হয়ত বাসি না। কিন্তু তোমাকে এত যে ভাল লাগে, তার দাম কি কিছু নয় ?”