পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GP8s Sово, জানো না, জীবনব্যাপী কি দুঃখভোগের মধ্যে তুমি আমায় ফিরে পাঠাচ্ছ। দুঃখ পাওয়া মানুষের সব চেয়ে বড় পাপ, এই সত্যকে বহু দিনের বহু অশ্রুপাজের বিনিময়ে আমি লাভ করেছিলাম—* বীণা বলিল, “অত ত জানি না, তবে আমার মনে হয়, ছখকে অতিক্রম করবার জন্যে যে দুঃখ পেতে হয়, ভালবেসে যে দুঃখ পেতে হয় তা পাপ নয়। দুঃখ যে আমরা পাই না সেই ত বিপদ, তার সঙ্গে অতি সহজে সন্ধি ক'রে তাকে ভুলে থাকি। যাকে পাপ বলে বুঝেছ, তার সঙ্গে সদ্ধি করতে তোমাকে আমি দেব না।” অজয় তবু একবার শেষ চেষ্টা করিয়া কহিল, “হয়ত ভালবাসি না বলেছি, কিন্তু একথাও তোমার জানা দরকার, ভালবাস কাকে বলে তাও খুব ভাল করে আমি জানি না। এমনও হতে পারে, যাদের ভালবেসেছি ভাবছি, তাদের সত্যিই ভালবাসিনি, তোমাকে যা দিতে পেরেছি, দিয়েছি, সেইটেই সত্যিকারের ভালবাসা । এ ত আমি দেখেছি, অন্যদের কাছে কেবলই নিজকে বড় করি, একমাত্র তোমার কাছে এসে নিজকে ভুলে গিয়ে নিজেকে অতিক্রম করা আমার সহজ হয়। দেশকে ভালবাসি মনে করি, কিন্তু সত্যই কি ভালবাসি ? দেশের দুর্গতি, হাজার দিকে তার হাজার রকম লাঞ্ছনা অবমাননা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করবার আগে আমার আত্মাভিমানকে ঘা দেয়। আমি যে এই দেশের মানুষ, সেঅবমাননা তাই আমার গায়ে এসে লাগে, এরই নাম আমার দেশপ্রীতি। মানুষগুলি আমার কাছে কিছু না, আমার আত্মভিমানটাই আসলে বড় ।” বীণা বলিল, “অনিশ্চয়তা এ সমস্ত ব্যাপারে তোমার মনে খানিকট আছেই তা আসি বিশ্বাসেই করি। নিজের মধ্যে নিজেকে খুজে পেতে এখনও তোমার দেরি আছে। সেও ত বিপদ কম নয় ? তোমার মধ্যেই তুমি যখন নেই, কার ঘর আমি করব ? বিস্তু কথাটা তা নয়। নিজেকে ভুলে যেতে পারাটাই কি খুব বড় কথ: মানুষকে নিজের মধ্যে ফিরে পাঠাবার ক্ষমতা এক ভালবাসারই আছে, আর সেই ত তার মূল্য ।” ঐঞ্জিার পরীক্ষা হইয়া গেল। যা করিয়া সে পরীক্ষা দিল, সে কেবল তাহার অন্তর্ধ্যামাই জানেন । শোকছামাছন্ন গৃহ, অশ্রুবাম্পে ভারাক্রান্ত গৃহের বাতাস, প্রতিদিনের প্রিয় জীবনযাত্রায় সহসা বিধাতার অকরুণ হাতের স্পর্শে কি মৰ্ম্মান্তিক কৃতঘ্নতার রূপ। এমন অবস্থায় জীবনধারণের জন্য অবশ্যকৰ্ত্তব্য কাজগুলিই কেমন যেন অর্থহীন, অন্তঃসারশূন্য বলিয়া বোধ হয়, প্রোফেসারের দেওয়া নোট, বিজাতীয় ভাষাতত্ত্ব, বহু নামতিথি সম্বলিত সেই ভাষার ইতিহাস, দুৰ্ব্বোধ্য ব্যাকরণ, এগুলি ত এখন পাগলের প্রলাপেরই নামান্তর । ঐন্দ্রিলার চিত্তবিক্ষেপ ঘটাইতে চাহে নাই বলিয়া বীণা এই ক'দিন সাধ্যমত তাহার নিকট হইতে দূরে থাকিতে চেষ্টা করিয়াছে, কিন্তু দূরে থাকিবার জো কি ? এবাড়ীতে এমন দ্বিতীয় প্রাণী আর ত কেহ নাই যাহার কোলে মাথা রাখিয়া কাদিয়া সে মনের ভার লাঘব করিতে পারে ? স্বলতারাও সম্প্রতি কলিকাতার বাহিরে গিয়াছেন। অশ্রুর স্রোত উদ্বেল হইয়। উঠিলেই ছুটিয়া ঐন্দ্রিলার কাছে তাহাকে আসিতে হইয়াছে। দুই বোনে কোনও কথা হয় নাই, সাত্মনার্থে বলিবার মত কোনও কথা ঐন্দ্রিলা খুজিয়া পায় নাই, দুইজনে গভীর সমবেদনায় পাশাপাশি বসিয়া নীরবেই অশ্রীবর্ষণ করিমুছে । হৃষীকেশ নিজের পুস্তকের রাশির মধ্যে আরও যেন ডুবিয়া গিয়াছেন, বাড়ীতে অতিথি রহিয়াচ্চে, অতিথির প্রতি অমনোযোগ বশতঃ সাধারণ সৌজন্যের কোথাও অভাব ঘটিতেছে কি না, সে-বিষয়েও তাহার ক্ৰক্ষেপ মাত্র নাই । বীণা-ঐন্দ্রিলার সঙ্গে দিনান্তে একবার মাত্র তাহার দেখা হয়, দুইজনকে একই ধরণের অতি সাধারণ কুশল-প্রশ্ন করিয়া, নীরবে তাহদের চিবুকে মাথায় হাত বুলাইয়। তিনি নিজের মহলে ফিরিয়া আসেন: কন্যাকে পর করিয়া দেওয়ার ফলে ভ্রাতুষ্পপুত্রীকেও হেমবালা তেমন করিয়া কাছে টানিতে পারেন ন, এবাড়ী হইতে র্তাহার প্রতিষ্ঠার আসন একেবারেই টলিয়া গিয়াছে। মন্দিরা তাহাকেও কিছু কম আঘাত দিয়া যায় নাই, কিন্তু বাহিবে তাহার কোনও প্রকাশ নাই, দিবারাত্র নিজের ঘরটিতে একলাই তিনি কাটান, ভক্তিতত্ত্ব বিষয়ক বইটি দ্বিতীয়বার পড়া চলিতেছে। তাহার মনের কোথায় যে কি অভিমান, যেন মন্দিরার জন্ত প্রকাশুে অশ্রুবিসর্জনেরও তিনি অধিকারী নছেন। ঐজিলা মায়ের এই ব্যবহার