পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢8३ নিয়েছ, আমার আনন্দ কেড়ে নিয়েছ, তুমি আমাকে বলবে না কেন ?” নরেন্দ্রনারায়ণ দুজনেরই অলক্ষ্যে কখন দরজার বাহিরে আসিয়া দাড়াইয়াছিলেন, একটুখানি কাশিম আস্তে দরজা ঠেলিয়া ঘরে ঢুকিলেন। ঐন্দ্রিল ছিটুকাইয়া মায়ের হইতে খানিকটা দূরে সরিয়া গিয়া কিছুক্ষণ নীরবে অপেক্ষা করিল, তারপর দ্রুতপদে বাহির হইয়া একেবারে ছাতে চলিয়৷ গেল । হেমবালার প্রকৃতিস্থতা ফিরিয়া আসা পর্য্যন্ত নরেন্দ্র নীরবে অপেক্ষা করিলেন, তারপর নিজেই একটা আসন লই বসিয়া কছিলেন, “আমি সবই গুনেছি। ও যখন এত ক’রে জানতে চাইছে তখন ওকে সব জানতে দেওয়াই আমাদের উচিত হবে ।” হেমবালা তীব্রস্বরে কহিলেন, “তাহলে তুমি এবং তোমার মেয়ে, দুজনেরই সঙ্গে আমার সম্পর্ক চিরকালের মত চুক্বে তা বলে রাখছি।” নরেন্দ্র কহিলেন, “তবু ওকে বলতেই হবে । সেদিন এবিষয়ে তোমার সঙ্গে যখন কথা হ’ল, মনে করেছিলাম, যে-কোনো মূল্য দিয়ে হোক, তোমাকে ফিরে নিয়ে যেতে পারলেই আমি স্বর্থী হব । কিন্তু এই ক'দিন মেয়ের অবস্থা দেখে দেখে আমার মন একেবারেই ভেঙে গিয়েছে, তারপর আজকের এই ব্যাপার। আমি এখন বুঝতে পারছি, ওকে কাদিয়ে ফেলে রেখে গিয়ে তোমাকে নিয়েও আমি স্বর্থী হতে পারব না। তুমি ত স্বখ দুঃখ এ দুয়েরই বাইরে, কিন্তু আমার কথা আমি বলছি, ওর দুঃখের পাশে নিজের কোনো মুখভোগই আমার কিছু নয়। আমাদের ত ঐ একটি বই আর নেই, ওকে পর করে দিয়ে তারপর বেঁচে থাকৃবার আমাদের কি অর্থ থাকবে ?” হেমবালা কথার স্বরে শ্লেষ ভরিয়া কহিলেন, “নিজের কীৰ্ত্তিকাহিনী সব ওকে বললেই মেয়ে এক মুহূর্তে খুব আপন হয়ে উঠবে, এই আশা কি তুমি করছ ?” নরেন্দ্ৰ কহিলেন, “তা করছি না। মানুষ পর হোক, আপন হোক, সেট তত বড় কথা নয়, সম্পর্কট সভ্য হওয়াই । আসল। অস্তুতঃ ওর মনে কিছু একটা যে হয়েছে সে বিষয়ে ত আর সন্দেহ নেই ? কল্পনায় আমার অপরাধকে হয়ত সে SO8O অনেকখানি বেশী বাড়িয়ে ভাবছে। নিজের দিক ষ্ট্ৰেবেও তাকে আমার সব বলা প্রয়োজন। না বললে কোনোদিন আমাকে ও ক্ষমা করবে না, তা নিশ্চিত । অপরাধ যা তা ত থাকবেই, তার ওপর সত্যগোপনের অপরাধ আর-একটা বাড়বে। যদি সব বলি, হয়ত সব বুঝে ক্ষমা শেষ পৰ্য্যন্ত সে আমাকে কবৃতেও পারে। পারবার সম্ভাবনা যখন আছে, তখন সে-সুযোগ আমি ছাড়ব না। তাছাড়া ওকে মানুষ করে তুলেছি যখন, মানুষের মত ব্যবহার তার সঙ্গে করব এবং সেই রকম ব্যবহার প্রত্যাশাও করব ।” হেমবালা লিখিবার চৌকিটার উপর মাথা গুজিয়া আকুল কান্নায় ভাঙিয়া পড়িতে লাগিলেন, বলিলেন, "মামুষের মত ব্যবহার আমারই কেবল এ পৃধিবীতে কোথাও পাওনা নয়। ভগবান জানেন, আমার যা দুঃখ তার কোথাও তুলনা নেই।” নরেন্দ্র তাহার মাথায় ধীরে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিলেন, আজ হেমবালা বাধা দিলেন না। নরেন্দ্র কহিলেন, “আমি জানি। আমি সত্য কথাই বলছি। তোমার ধে কি দুঃখ তা আমি জানি। এই কথাটাই তোমাকে আমি বলতে চাই, যে দুঃখ আমি তোমাকে দিয়েছি তা দূর করবার ক্ষমতাও একমাত্র আমারই আছে, পৃথিবীর আর কারও তা নেই। সেইটে বুঝে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবার আমার ষে স্থায্য অধিকার তা তুমি আমাকে দাও। ইলুকে সব বলে সে প্রায়শ্চিত্ত স্বর হোক ৷” হেমবালা কোনও কথা কহিলেন না, প্রাণপণে নিজেকে সংযত করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। একটু থামিয়৷ নরেন্দ্র আবার কহিলেন, “তাছাড়া একটা দিকৃ তুমি একেবারেই দেখছ না। যে অপরাধ আমার একলার, মেয়ের কাছে দুজনেই কেন তার জন্তে অপরাধী হয়ে থাকবে ? সব বলবার ফলে আমি যদি ওকে চিরকালের মতই হারাই, তুমি আবার ওকে সম্পূর্ণ করে ফিরে পাবে, আর সেইটেই হবে সব চেয়ে বড় লাভ " একতলার পিছনের দিকে একটা বড় ঘরে নরেন্দ্রনারায়ণের বাস নির্দিষ্ট হইয়াছিল। সেইদিনই সন্ধ্যায় ঐন্দ্রিলাকে একাকী সেই ঘরে ডাকিয়া লইয়া নরেন্দ্র বলিবার স্বাহ সমস্তই তাঁহাকে বলিলেন, নিজের অপত্যকে যেমন করিয়া সব বলা যায় ।