পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

雷8科 ় প্রবাসনা ; ఏం85 এমনিতেই যে আমার কি হচ্ছে তা আমিই জানি, কেন সেটাকে আরও কঠিন করে দিচ্ছ ?” সে শান্ত হইলে বীণ কহিল, “আমি কেবল দেখা করতেই আসিনি। তখন বলা উচিত কি না ঠিক করতে না পেরে ৰলিনি, বলতে এলাম, স্বভদ্রবাবু তোকে পৌছতে যাচ্ছেন, অজয় ত ব্যাপারটা ভুল বুঝবে না ?” ঐন্দ্রিলা কহিল, “আর সবাই ভুল বুঝলে যতটা ক্ষতি তার চেয়ে বেশী কি ক্ষতি তাতে হবে ?” বীণা কহিল, “এই শেষবার তোকে বলছি, তুই ভুল করিস নি। ও তোকে ভালবাসে ।” ঐন্দ্রিলা কহিল, "এ নিয়ে যাবার মুখে তোমার সঙ্গে আজ তর্ক করতে ইচ্ছে করছে না, তৰু বলছি ভুল তুমিই করছ। আসল কথ, এই ভালবাসাবাসি ব্যাপারটার উপরেই আমার ঘেন্না ধ’রে গেছে, আমি তোমাকে সত্যিই বলছি। এই যে জিনিষটাকে অন্ধকারে গাঢাকা দিয়ে থাকতে হয়, এই যাকে নিম্নে সংশয়-সমস্তার শেষ থাকে না ...মানুষকে কেন ভালবাসতে হবে, জীবনে তার সত্যিকারের প্রয়োজন কতটুকু, কি সেই প্রয়োজন মিটাবার শ্রেষ্ঠ উপায়, কতটুকু তার ভাল কতটুকু মন্দ, সে-প্রয়োজন মেটাবার পথে সমাজের বিধানই বা কতটুকু মান্য কতটুকু নয়, যেঞ্জন্যেই হোক এই সব প্রশ্ন আজ আমার জীবনে এসে পড়েছে। যদি এ জিনিষটাকে বাদ দিয়ে চলতে পারি, আমার অন্তৰ্য্যামী জানেন তাই চলতেই আমি চেষ্টা করব । যদি না পারি, শেষ পৰ্যন্ত চেষ্টা যদি বিফলই হয়, আমার মনে এই-সমস্ত দ্বন্দ্ব যতদিন না মিটবে ততদিন অন্ততঃ আমি এ-পৃথিবীর বাইরের মানুষ। আমার ভালমন্দ বুঝবার বয়স হয়েছে, আশৈশব একমাত্র সত্যকে আমি কামনা করেছি, সত্য যা ভাল ক’রে তাকে জেনে একমাত্র সেই পথ ধরে আমি চলতে চাই, আমাকে কেউ তোমরা বাধা দেবে না ।” পথে আসিতে সমস্ত পৃথিবীর কি কুংসিত ক্লেদলিপ্ত চেহারা। ভব্যতার বহিরাবরণের অভ্যস্তরে লোকালয়ে লোকালয়ে গুহে গৃহে দিন হইতে দিনাস্তরে কি জঘন্ত কদৰ্য্যতার পুনরাবৃত্তি। বাহিরে ইহার সঙ্গে মানুষের বিরোধের শেষ নাই, কিন্তু অস্তিত্ত্বর কোন একটা গভীরতম জায়গায় প্রতি মানুষ ইহার সঙ্গে কায়মনোবাক্যে সন্ধি করিয়া রাখিয়াছে। সমস্ত পৃথিবী জুড়িয়া এই নিরঙ্গ মিথ্যাচারই পর্ব কি কুৎসিত। ক্লাস্তিতে চোখে তন্দ্র জড়াইয়া আসিয়াছিল, আধ-ঘুম আধ-জাগরণে হঠাৎ ঐন্দ্রিলার সমস্ত বুকটা হাহাকার করিয়া উঠিল। যে-পিতাকে সে ফেলিয়া আসিয়াছে র্তাহার জন্য নষ, যে-পিতাকে সে হারাইয়াছে র্তাহার জন্থ । দুই হাতে বুকটাকে চাপিয়া ধরিয়া সে উঠিয়া বসিল । ক্রমে তক্তার ঘোরেই ভাবিতে লাগিল, যে-জিনিষটাকে কদৰ্য্য মনে করিতেছি, হয় ত কদৰ্য্যতাই তাহার সমস্তটা রূপ আসলে নয়। আমার যে পিতাকে আশৈশব আমি ও নিজাম, হয়ত সত্যকারের কোনও কদৰ্য্যত তাহার স্বভাবে সম্ভব নয়। হয়ত তাহার ব্যবহারের সপক্ষে যুক্তি সত্যসত্যই কিছু আছে। কিন্তু কি সে যুক্তি তাহা কে আমাকে বলিয়া দিবে ? কতদিনে তাহ আমি জানিতে পাইব ? নৈহাটিতে স্বভদ্র তাহার গাড়ীর জানালায় আসিয়া তাহার খবর লইল, বালয় গেল, “আপনি বসে থাকৃবেন না, নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোন।—গোয়ালন্দে গাড়ী পৌছলে আমি এসে আপনার ঘুম ভাঙাব।” কিন্তু তাহার ঘুম আসিল না। আর-একটি মানুষের মুখ ক্রমাগত মনে পড়িতে লাগিল, সে মুখ অজয়ের বুঝিতে পারিল, কত সহজে আজিকার এই দিনটি চির-বিদায়ের দিন হইতে পারে। সে ভারতবর্ষের নারী, পিতামাতার আশ্রয় তাহার টুটিয়াছে, ইহার পর কোথায় কোন মহা অন্ধকারে চিরকালের জন্য তাহার বাস নির্দিষ্ট হইয়া আছে কে জানে ? জীবনের নিকট হইতে এখনই তাহাকে কোনও কারণে বিদায় লইয়া যাইতে হয় যদি, ত তাহ লঃ ম! তাহার মনে কোনও ক্ষোভই অবশু থাকিবে না, কিন্তু অনস্তকাল ধরিয়া আর কোথাও সেই গভীর দৃষ্টি, সেই গৰ্ব্বোন্নত কিন্তু চিঙ্কাছাক্ষাচ্ছন্ন কপাল, কাল অগ্নিশিখার মত কেশরাশি, স্বকুমার মাসিকার নীচে এক সঙ্গে দৃঢ়তা ও কারুণ্যে মণ্ডিত দুষ্টটি ঠোঁট, সৰ্ব্বোপরি । বিদ্যুৎগর্ত সেই কণ্ঠস্বর তাহার জন্য কোথাও অপেক্ষা করিয়া থাকিবে না ভাবিতে তাহার হাসি পাইল । স্বভদ্র ঐন্দ্রিলাকে পৌছাইম্বা ফিরিয়া আসিবার আগেই অজয় আবার একবার স্বীণার কাছে, জাসিয়া ধরুন দিল ।