পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\e মাঘ শৃঙ্খল @8岔 বলিল, “তুমি আমাকে কি বোঝাতে চাইছ আমি কিছুই বুঝব না। আমি কেবল একটি কথা বুঝি, তোমাকে প্রাণপণে আমি কামনা করি, তোমাকে না হলে আমার চলবে না ।" বীণ মনে মনে হাসিল, ভাবিল, মনের মানুষটি দুদিন চোখের আড়াল হতেই এত রাগ, এখনই নিজেকে চরম শাস্তি কিছু একটা না দিয়ে দিতে পারলে তোমার আর চলছে না। তোমাকে জানতে ত আমার আর বাকী নেই বন্ধু। কিন্তু মুখে কিছু বলিল না। অধোমুখে বসিয়া পায়ের আঙুলে কার্পেটের একটা ফুলকে নিপীড়িত করিতে লাগিল । অজয় কহিল, “তোমার পায়ের ঐ আঙুলগুলি থেকে ভোমার মাথার চুল পর্য্যস্ত এমন কিছু নেই যা আমার অকামযোগ্য, যা আমার চোখে অসুন্দর । তোমার হাসি, তোমার অশ্র, এ দুয়েরই মধ্যে আমার অস্তিত্বকে ষে কোনো মুহূৰ্ত্তে আমি ডুবিয়ে দিতে পারি। তোমার রোজকার জীবনযাত্রার এমন কোনো খুঁটি-নাটি নেই যা আমার কাছে অসীম রহস্তের মূল্যে মূল্যবান নয়। তোমার সব নিয়ে আমার মুগ্ধদৃষ্টিতে তুমি যে কি সুন্দর, তা তোমাকে বোঝাতে পারব না। এগুলো কি কিছুই নয়, ভালবাসাটাই সব ? আমার এই এত সত্য জীবন্ত কামনা, এর কোনো দাম নেই ? এর উপরে আমার যে আনন্দের স্বৰ্গ আমি তৈরি করতে পারি, পৃথিবীর আর কোন কল্যাণ, আর কোন স্বর্গ তার চেয়ে বড় ?” বীণা তবুও নিরুত্তর রহিল দেখিয়া একটু থামিয়া অজয় আবার কহিল, "জীবনের সকল সমস্তার একটা সহজ মীমাংস নিজেরই অজ্ঞাতে চিরকাল আমি করে এসেছি, সে হচ্ছে আমার নিজের প্রতি নিৰ্ম্মমতা। পৃথিবীর যেখানে যা-কিছু নিয়ে আমার বিরোধ বেধেছে, বিরোধ না করে আমি জয়ী হয়েছি। আমি যে ইচ্ছে করলেই হাত বাড়িয়ে না নিতে পারি এই গৰ্ব্ব দিয়ে নিজের জীবনের শূন্তত ভরিয়েছি। আজও আমি জানি, আমার জীবনের সমস্যা খুব সহজে মেটে, যদি তোমাকে আমি পরিপূর্ণ করে ত্যাগ করি। কিন্তু কেন আমি তা করব ? তোমাকে বাদ দিয়ে আমার জীবনে ভালবাসা বা আছে তা থাক না, তার সঙ্গে তোমাকে কোনো

  • Bణా-)\ు

না কোনো রকম করে আমি মিলিয়ে দেবই । সেই ত হবে আমার মনুষ্যত্বেল্প পরীক্ষা ? বীণা কহিল, “তোমার কোন কথার কতখানি মানে দাড়ায় তা তুমি ভেবে দেখছ না। আজ কোনো কারণে তুমি উত্তেজিত হয়ে এসেছ, এ আলোচনা আজ এই পর্যন্তই থাকুক।” . গভীর বেদনায় অজয়ের ঠোট দুইটা ভাঙিয়া আসিল। কহিল, “আমার মনে কোনো অন্যায় নেই, না জেনে অপরাধ করি যদি তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো । আমি জানি না, এ আশা আমার কেন কিছুতেই যায় না যে এ পৃথিবীতে একমাত্র তুমিই আমায় ঠিক বুঝবে, কোথাওঁ কিছু নিয়ে ভুল করবে না ।” বীণা একটু অনুতপ্ত হইল কহিল, “না, আমি ভুল করিনি, তুমি বল কি বলতে চাও, আমি শুনছি।” - প্রায় আধঘণ্টা ধরিয়া অজয় একটা কথাকেই নানা রকম করিয়া ঘুরাইয় ফিরাইয়া বলিতে চেষ্টা করিল। বলিল, ছুই হাজার বৎসর ধরিয়া এ দেশের মানুষ নিবৃত্তির মন্ত্র, বৈরাগ্যের মন্ত্র জপ করিয়াছে, তাহার ফলে চতুর্দিকে সভ্যতার এই কঙ্কালাবশেষ অস্থিচৰ্ম্মসার মূৰ্ত্তি। আমার জীবনে স্বরু করিতে চাই আমি তার বিপরীত সাধন। প্রাণপণে যাহা কামনা করি তাহা লাভ করিতেও প্রাণপণ করিতে চাই, তারপর ফলাফল কি হয় তাহ দেখিব। বলিল, “তোমাকে নিয়ে নিজেকে আমি ভুলব এ তুমি ইচ্ছে কর না, কিন্তু ষে-জীবনের মধ্যে আমাকে তুমি ফিরে পাঠাচ্ছ, তোমাকে না ভুললে সেখানেই বা নিজেকে পরিপূর্ণ করে আমি পাব কি করে ? তুমি আমাকে হার মানতে দিতে চাও না, কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দেওয়া সেও ত আমার হার মানা ? কেন হার মানব ? কেন তোমাকে ছেড়ে দেব ?” বীণা কহিল, “কি করবে ? সব দিক রক্ষা করা যায় না। তা যদি যেত, মানুষ মানুষ থাকৃত না, দেবতা হয়ে যেত। নিতান্ত রক্তমাংসের মানুষ বলেই তাকে কোথাও কোথাও কিছু ছাড়তে হয়, তোমাকেও হবে ।” অজয় কহিল, "এই কি সব ? বীণা কহিল, “আর যা আমার বল্বার তা সেইদিনই তোমায় বলেছি।” . . .