পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ श्रृथण 6.8% স্বাজত্ব থাকুক কিন্তু এদেশের লোককে সামরিক শিক্ষা দিবার ভার লউন কৰ্ত্তারা । একটা জাতের অপৌরুষ হইতে সাম্রাজ্যের দাম ওঠা সম্ভব নয়। তাহার বিবেচনায়, এদেশের সামাজিক এবং অন্য সমস্ত প্রকার সমস্তার সমাধান বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা এবং তদানুষঙ্গিক discipline এবং অভেদনীতি। - স্বভদ্রকে সে দলে টানিবার চেষ্টা করিয়ছিল, সে বলিয়াছে, “কোনো সমস্যার কথা ভাবতে হলেই তোমরা ত্ৰিশ কোটী মানুষের termsএ ভাবে, তাই সমাধানও কিছু হয় না। আমার আশেপাশের পরিচিত মানুষগুলির সমস্যার কথাই আমি ঠিক মত ভাবতে পারি না, সাধ্যে ফুলিয়ে ওঠে না। সেইটে করতে পারি যদি, একটা জীবনের পক্ষে অতি বড় কাজ হবে। তার বেশী আর কিছু ভাববার আমার রুচি নেই, অবসরও নেই।” অজমও কাছেই ছিল, বিমান কহিল, “নিজের আশপাশের মানুষগুলোর ভাবনা তুমি যে খুব বেশী ভাবে তা মনে করবার ত কোনো কারণ নেই, তুমি কি স্থির করলে ? যাবে আমার সঙ্গে ?” অজন্তু যাইবে না । তাহার জীবনের লক্ষ্য আরও উদ্ধে নিবদ্ধ, উদ্দেশ্য বৃহৎ । কি সে উদ্দেশু তাঙ্গ সে জানে না, কিন্তু যে-জন্ত তাহাকে আত্মত্যাগের মূল্য দিতে বলা হইতেছে তাহা অপেক্ষ সেটা বৃহত্তর । দেশের জন্য প্রয়োজন হইলে আত্মবিসর্জন সেও একদিন করিবে, কিন্তু নিজেকে এত অল্পমুল্যে ছাড়িয়া দিতে সে চায় না। বিমান বলিল, “হ্যা, তোমার এত সাধের জীবন, তাকে নিয়ে এ রকম ফেলাছড়া করতে বলা আমারই অস্কায় হয়েছে।” অজয় কহিল, "ঠাট্ট তুমি করতে পার, কিন্তু তোমাকে আমি এও বলছি, সত্যকেও নিৰ্ব্বিচারে মেনে নেওয়া যে মিথ্যাচার আমাদের দেশ সেটা ভুলেছে, আমাদের অধোগতির মূলে এ জিনিষটাও বড় কম নেই। জীবনের একদিকে নিৰ্ব্বিsার স্বীকৃতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে অন্য সব জায়গায় নির্বিচার স্বীকৃতি আমাদের সহজ হয়েছে। বিধি-বিধান শাসন অনুশাসনের সঙ্গে সঙ্গে বন্যা দুর্ভিক্ষ অজ্ঞন মহামারী দাসত্ব এসমস্তকেও অবলীলায় আমরা সমে যাচ্ছি। সত্যকে পরীক্ষা করে বাজিয়ে নেবার মধ্যে যে পৌরুষ, স্বাস্থ্যসম্পন্নত, আমাদের মধ্যে তার মারাত্মকৰূকম অভাব আর তারই ফলে দেশব্যাপী বুদ্ধির জড়ত, চেতনার জড়ত, হৃৎবৃত্তির জড়তা । Disciplineএর দোহাই দিয়ে সেই জড়তাকে তোমরা আরও বাড়াবে।” আপাদমস্তক খন্দরমণ্ডিত বিমান নূতন কেনা একটা বহরমপুরী বাঁশের লাঠি কাধে করিয়া বাহির হইয়া গেল, কিন্তু তিরস্কার করিয়া, তর্ক করিয়া, শ্লেষ করিয়া ধে সাড়া সে অজয়ের মনে জাগাইয়া রাখিয়া গেল, তাহা চিরকাল জাগিয়া থাকিবার মত। কয়েকদিন ধরিয়া ক্রমাগত নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া যখন হাফ ধরিয়া গেল তখন অজয় ভাবিল, বীণাও আর এক-রকম করিয়া এই ত্যাগের মন্ত্রেই আমাকে দীক্ষিত্ত করিতে চাহিয়াছিল। তা বেশ, ছাড়িতেই যদি হয়, সব ছাড়িব । নিজেকে বিসর্জন দিতে গিয়া অন্য কিছুও হাতে রাখিব না। কাহারও ভালমন্দে আমি নাই, অপরের পাপের ভার আমি লইব না। আমি আমার যুজনের কেহ নহি, পরিবারের কেহ নহি, ভারতবর্ষেরও আমি কেহ নহি । বাহিরের বহুকোটি সৌরমণ্ডল সম্বলিত আকাশের অসীমত, অনাদ্যস্তকাল ব্যাপিয়া এই বিশ্বস্বষ্টির সার্থকতা হইতে সার্থকতায় বিজয়-অভিযান, ইহার মধ্যে কোথায় আমার স্থান, ইহাদের সঙ্গে কি লইয়া আমার যোগ তাহা আমি খুজিয়া বাহির করিব। আমার জন্য থাকুক, আকাশ বাতাস পৃথিবী, চন্দ্র স্বৰ্য্য তারা, অসীমতা অসীমতার দেবতা এবং আমার মধ্যে র্তাহার পরমতম রূপ । আমার মধ্যে আমার চিরকালের সর্বাত্তম যে শ্রেয়, জীবনের শ্রেষ্ঠ মুখেরও বিনিময়ে তাহাকেই আমি লাভ করিব । নিজের যে রহস্তরূপ তাহার আজীবনের সমস্ত সঞ্চিত উপলব্ধিকে বারম্বার আলোড়িত বিপৰ্য্যস্ত করিয়া দিয়া যাইত, তাহার দিবসের আলোককে অর্থহীন করিত, রাত্রির বিশ্রামকে অপহরণ করিত, আজ তাহাকেই অবলম্বন করিয়া সে ভাবিতে লাগিল, আমি যে আমি, আমি একান্ত ভাবেই এত অভিনব, যে আমার সমস্ত আমি ছাড়া আর । কাহারও পক্ষে সমাধান করা সম্ভবই নহে। এক মুহূর্তে তাহার আজীবনের সাধন, তাহার পুথিখতাপত্র, তাহার আশৈশবের সঞ্চিত দেহমন-আত্মার সমস্ত আয়োজন, তাহার সমস্ত ভবিষ্যৎজীবনকল্পনা কি বিপুল ব্যর্থতায় পৰ্য্যবসিত হইয়া গেল