পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ଯ مو8@ এত বয়স ধরিয়া কত মহাপুরুষের জীবনীই ত সে পৰ্য্যালোচনা করিয়াছে, কত মহাকীৰ্ত্তি, কত অপরূপ আত্মত্যাগ, কত অভিনব আবিক্রিয়া, কত ভবিষ্যদ্বাণী, কত অনুপ্রেণন, কিন্তু তাহার অস্তিত্বের একবারে অন্তরতম স্থানে এই ষে অন্ধকার, সেখানকার জন্য একটি ক্ষীণ দীপবৰ্ত্তিকাও কোথাও হইতে সে আহরণ করিতে পারিল না। ’ বাহিরে অন্ধকারে ঘন হুইয়া আসিতেছিল, জীবনের প্রবাহ তখনও কলিকাতার পথে প্রখর হইয়া বহিতেছে । চতুর্দিকৃটাকে সহসা তাহার অনাত্মীয়-সঙ্গমের মত অসন্থ অস্বস্তিকর বলিয়া বোধ হইল। জীবনের স্ববিপুল সমস্ত গুৰুমাত্র নিজের আয়তনের বিশালতাতেই তাহার মধ্যেকার ক্ষপ্ত সাহসকে জাগ্ৰত করিয়া তুলিতেছিল। বেদনায় অবসন্নচৈতন্ত মানুষ যেমন করিম অবলীলায় আসন্ন-মৃত্যুর সম্মুখীন হয়, তেমনই ভাবে নিজের মধ্যেকার এই রহস্যময় অন্ধকারের সঙ্গে সে পরিচয় করিবে স্থির করিল। উঠিয়া গিয়া দরজা-জানালী বদ্ধ করিয়া দিয়া ঘরের অন্ধকারকে আরও জমাট করিয়া লইল, তারপর বালিশে মুখ গুজিয়া গুইম আৰ্ত্ত হৃদয়ের সমস্ত শক্তিতে প্রাণপণে এই প্রশ্নটিকে স্বাকড়িয়া ধরিয়া রহিল, আমি কে, আমি কি, আমার সঙ্গে কেমন করিষ আমার পরিচয় ঘটিবে, সে-পরিচয়ের পরিণাম কি হইবে ? পরের দিন বিমানের সঙ্গে দেখা হইতেই অজয় তাহাকে সংবাদ দিল, সে সংসার পরিত্যাগ করিবে । বিমান কহিল, “সংসার কোথায় ধে-পরিত্যাগ করবে ? সংসার কর আগে ।” অsয় কহিল, “ছদিকৃ সামলানো যায় না, তুমিই একদিন একথা আমায় বলেছিলে । জীবনকে কায়মনোবাক্যে আকৃড়ে ধরবার পথটাই একমাত্র পথ একদিন ভেবেছিলাম, কিন্তু মোহ বড় বেশী, কিছুতে ওদিকে মনটাকে লণ্ডয়াতে পারিনি, কেবল ভেবেছি, আমি ব্যর্থ হব, আমার মধ্যে বহুযুগের ভারতবর্ষের সাধনা ব্যর্থ হবে । আজি বুঝেছি, অন্ততঃ আর একটা পথও আছে, এবং এই স্কুটো পথ কোথায় এক হয়ে মিলেছে যতদিন না জানতে পারব, ততদিন ভারতবর্ষের কৃচ্ছসাধনার পথ, নিবৃত্তির সাধনার পথই আমারও পথ। আত্মার কারবারে so, È Sට්(Bෆ. নেমে সাংসারিক হিসাবের খাতায় ততদিন অন্ততঃ লাভক্ষর্তির জমাখরচ লিখব না।” সন্ন্যাদাপ্রমের বদলে তাহার জন্য রাচীর আশ্রমবাস ব্যবস্থা করিয়া দিয়া বিমান উত্তেজনার মুখে বঁাশের লাঠিটাকে ঘুরাইয়াই বাহির হইয়া গেল । অজয় দেবতাকে ডাকিয় কহিল, কেবল তোমার কাছে আমার এই কথাটা নিবেদন করা থাকুক, একটি মানুষকে অন্ততঃ সত্যসত্যই আমি ভালবাসি। আমার কাছে তুমি যেমন সত্য, তোমার অসীমত যেমন সত্য, ঐন্দ্রিলাও ঠিক ততখানি সত্য। এই দুইটি জিনিষকেও আমি কিছুতেই মিলাইয়া দিতে পারিতেছি না। কিন্তু জীবনে কোনশু দুইটি জিনিষকেই একসঙ্গে করিয়া মিলাইতে পারিব না, এই অপযশ কি চিরকালের জন্য আমার ললাটে লেখা আছে ? তুমি অনুমতি কর, শেষ একবার দুই চোখের দৃষ্টি ভরিয়া তাহাকে দেখিয়া লইয়া চিরবিদায় হইয়া আসি । তারপর চিরকাল আত্মা এবং বস্তু এই উভয়ের বিরোধের অনেক উপরে তোমাদের উভয়কেই আমি ধরিয়া রাখিব । কলিকাতা ছাড়িয়া আসিবার দিন বীণা কহিল, “এই তাহলে শেষ ?” অজয় কহিল,"এখন অবধি ত তাই ভাবছি।” অনেকক্ষণ নীরবে কাটিল । অজমের চোখে অশ্রুজল, বীণাও কাদিতেছি। তৰু দুইজনেই মুছ হাসিয়া পরস্পরকে বিদায় দিল । হাসিতে মিনতি ভরিয়া বীণা বলিল, “আবার দেখা হবে বন্ধু s” অজয় কহিল, "দেখা হবে না এমন কথা জোর করে বলব কি করে ?” ইহারই দিন দশ-বারে পরে বিমান একদিন অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া ওয়েলিংটন স্কোয়ারের বাড়িতে আসিয়া ঢুকিল । স্বভদ্র স্নান করিতে যাইতেছিল, তাহার পথরোধ করিয়া দাড়াইয়া কহিল, “গুনেছ খবর ?” - স্বভত্র বলিল, “কোন খবর বললে গুনেছি কিনা বলতে পারি।”