পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উইলের খেয়াল জীবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় দেশ থেকে রবিবারে ফিরছিলাম কলকাতায়। সদ্ধার জার বেশ দেরি নেই, একটু আগে থেকেই প্লাটফর্মে আলো জেলেচে, শীতও খুব বেশী। এদিকে এমন একটা কাম্রাম উঠে বসেচি, যেখানে দ্বিতীয় ব্যক্তি নেই যার সঙ্গে একটু গল্পগুজব করি। আবার যার-তার সঙ্গে গল্প করেও আনন্দ হয় না । আমার দরের কোনো লোকের সঙ্গে গল্প করে কোনে মুখ পাইনে, কারণ তারা যে কথা বলবে সে আমার জানা । তারা আমারই জগতের লোক, আমার মতই লেখাপড়া তাদেরও, আমার মতই কেরাণীগিরি কি ইস্কুল মাষ্টারী করে, আমারই মত শনিবারে বাড়ি এসে আবার রবিবারে কলকাতায় ফেরে। তারা নতুন খবর আমায় কিছুই দ্বিতে পারবে না, সেই এক-ঘেয়ে কলকাতার মাছের দর, এমৃ. সি. সি'র খেলা, ইষ্ট বেঙ্গল সোসাইটির দোকানে শীতবস্ত্রের দাম, চণ্ডীদাস কি সাবিত্ৰী ফিলমের সমালোচনা—এসব শুনলে গা বমি-বমি করে । বরং বেগুনের ব্যাপারী, কি কন্যাদায়গ্রস্ত বৃদ্ধ পাড়াগেয়ে ভদ্রলোক, কি দোকানদার—এদের ঠিকমত বেছে নিতে পারলে, কথা বলে আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু ৰেছে নেওয়া বড় কঠিন—কন্যাদায়গ্রস্ত ভদ্রলোক ভেবে র্যার কাছে গিয়েছি, অনেক সময় দেখেছি তিনি ইনশিওরেন্সের দালাল । এক বসে বিড়ি খেতে খেতে প্লাটফর্শ্বের দিকে চেয়ে আছি, এমন সময় দেখি, আমার বাল্যবন্ধু শাস্তিরাম হাতে একটা ভারী বোচক ঝুলিয়ে কোন গাড়ীতে উঠবে ব্যস্তভাবে খুঁজে বেড়াচ্চে। আমি ডাকতেই এই ষে ’ বলে একগাল ছেলে আমার কামরার সাম্নে এসে দাড়িয়ে বললে— র্বোচকাটা একটুখানি ধর না ভাই কাইও লি – আমি তার বেঁচেকাটা হাত বাড়িয়ে গাড়ীতে তুলে নিলাম--পেছনে পেছনে শাস্তিরামও ইপিাতে হাপাতে উঠে জামার সামনের বেঞ্চিতে মুখোমুখি হয়ে বসলো। খানিকট ঠাও হয়ে জামার দিৰে হাত বাড়িয়ে বললে—বিড়ি আছে ? ۹ سه ۹ কিনতে ভুলে গেলাম তাড়াতাড়িতে। আর কমিনিট আছে ? পৌনে ছ’টা না রেলওয়ে ? আমি ছুটুচি সেই বাজার থেকে – আর ঐ ভারী র্বোচক ! প্রাণ একেবারে বেরিয়ে গিয়েচে । কলকাতায় বাস করা গিয়েচে ভাই, শনিবারে শনিবারে বাড়ি আসি ; বাগানের কলাটা, মূলোট যা পাই নিয়ে যাই এসে—সেখানে তো সবই—হ স্থ-বুঝলে না 7 দাডনকাঠিটা এস্তেক তাও নগদ পয়সা। প্রায় তিন-চার দিনের বাজার খরচ বেঁচে যায়। এই দাখো ওল, পুই শাক, কাচ লঙ্কা, পাটালি-দেখি দেশলাইট- - শাস্তিরামকে পেয়ে খুশী হলাম। শাস্তিরামের স্বভাবই হচ্চে একটু বেশী বক। কিন্তু তার বকুনি আমার শুনতে ভাল লাগে । সে বকুনির ফাকে ফঁাকে এমন সব পাড়াগাম্বের ঘটনার টুকরো ঢুকিয়ে দেয়, যা গল্প লেখায় চমৎকার-অতি চমৎকার উপাদান । ওর কাছে শোনা ঘটনা নিয়ে দু-একটা গল্প লিখেচিও এর আগে। মনে ভাবলাম, শান্তিরাম এসেচে, ভালই হয়েছে, একা চার ঘন্টার রাস্ত যাব, তাতে এই শীত। তা ছাড়া এই শীতে ওর মুখের গল্প জমূৰেও ভাল। হঠাৎ শান্তিরাম প্লাটফর্মের দিকে মুখ বাড়িয়ে ভাতে লাগল—অবনী ও অবনী, এই যে, এই গাড়ীতে এস– কোথায় যাবে ? গুটি তিন-চার ছেলে মেয়ে এবং পচিশ-ছাব্বিশ বছরের স্বাস্থ্যবতী ও স্বত্র একটি পাড়াগায়ের বে। আগে আগে, পিছনে একটি ফসর্ণ একহার চেহারার লোক,সবার পিছনে বাক্স-পেটরা মাথায় জন-দুই কুলী। লোকটি আমাদের কামরার কাছে এসে দাড়িয়ে হেসে বললে—এই যে দাদা, কলকাতা ফিরচেন আজই। আমি ? আমি একবার এদের নিয়ে যাচ্চি পাচারার ঠাকুরের থানে। মসলন্দপুর ষ্টেশনে নেমে যেতে হবে; বাস পাওয়া যায়। দলটি আমাদের গাড়ীর পাশ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে খালি একখানা ইন্টার কাম কামরা উঠল। - :