পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলিঙে খলিতে হাসির মধ্যে অকারণেই ক্ষেত্রনাথ রুখিয় উঠিলেন–কিন্তু আমি এই বলে দিলাম রাখাল, আমার কাছে যেন সিকি পয়সার প্রত্যাশা না করে । তোমাকে হুকুম দেওয়া রইল, উমানাথ হোক আর সে নিজেই হোক যদি এসে প্যানপান করে—পিকিপয়সার সাহায্য মা পায়। মিথ্যেবাদী হাড়বজ্ঞাত সব ! ব্যবহারটা কি রকম দেখলে ? টাকার অভাব হয়েছে...আগে যদি আসত আমার কাছে, এসে কেঁদে কেটে পড়ত, আমি কি ফেলে দিতে পারতাম, না দিইছি কোন দিন ? - রাগের বশে এ কথাটা মনে পড়িল না, জগদ্ধাত্রী সৰ্ব্বাগ্নে র্তাহাকেই পনর-বিশখান। চিঠি লিথিয়াছে। ক্রমে বেলা পড়িয়া আসিল । বাহিরবাড়ির সীমানায় ঘন সন্নিবিষ্ট তলত বাঁশের ঝাড়, তার ওদিকে রাস্ত, রাস্তার পরপারে সহায়রাম রায়ের সেই পোড়ে ভিটা বাড়ি । সেখানে আজকাল সরিষাক্ষেত ; হলুদ বরণ অজস্র ফুল ফুটিয়াছে। ক্রমে দু-একজন করিয়! লোক কমিতে আরম্ভ করিল। কি কথায় উঠিল বাতাবী লেবুর গল্প হইতে হইতে আধমুণে কৈলাস । এই কৈলাসটি কে, কোথায় তার জন্ম, সে খবর কেউ জানে না । গল্প আছে, আধ মণের কমে তার পেট ভরিত না । একবার কে ন রাজবাড়িতে তিনি অতিথি হন । বিকাল বেল সরকার মহাশয়ের কানে গেল, ব্রাহ্মণ তপন পর্যন্ত অভূক্ত। বুত্তান্ত কি ? অতিথিশালায় ছুটিয়া আসিয়া দেখেন, সিধায় যে আধ-সেরখানেক চাউল দেওয়া তুষ্টয়াছিল, কৈলাসচন্দ্র স্নানাদির পর সে-কপট মুখে ফেলিয়া এক ঢোক জল পাইয়া চপ করিয়া বসিয়া আছেন, আর কি করিবেন ? o সেকালের কথা কহিতে কহিতে অকস্মাং ক্ষেত্রনাথ উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিলেন—কি দিনকালই ছিল ! স্বর্গে গেছেন তারা, সে-সব মানুষও আর আসবে না–তেমন হাসিফুৰ্ত্তিও আর হবে না কোন দিন। একটা নিঃশ্বাস চাপিয়া বলিতে লাগিলেন—মনে হয় যেন কালকের কথা, স্পষ্ট চোখের উপর ভাসছে...কিন্তু কোথায় বা কে ? আরও ঘোর হইয়া আসিল । রাপাল কাগজপত্র তুলিয়া রাখিয়া বাহিরে জাসিয়া দাড়াইল। ক্ষেত্রনাথও আসিলেন। হঠাৎ যেন তাছার নজরে ঠেকিল, আবছা মতন একটা লোক

تبية وبية

3. অতিশয় মন্থর গমনে রাস্ত পার ইঙ্গ পরিবাক্ষেতে চুক্ষিস্থা পড়িল। - A. : —দেখ ত, দেথ ত, একবার রাখাল । অত দূর অবধি স্পষ্ট করিয়া ঠাহর হয় না, তবু যেটুকু নজরে পড়িল তাহাতেই ক্ষেত্রনাথ ক্ষিপ্ত হইয় উঠলেন। বলিলেন–নিশ্চয় বাইতি পাড়ার সৈরভী, বদমায়েসের ধাত্নী । ভেবেছে, অন্ধকারে বুড়ে দেখতে পাবে না কিছু— কঁাপিতে কঁাপিতে লাঠি লইয়া নিজেই নামিয়া পড়িলেন। সামনে উমানাথকে আসিতে দেখিয়া বলিলেন–ছুটে যাও, গিয়ে ঐ মাগীর চুলের মুঠে ধরে নিয়ে এস এখানে। তোলাচ্চি আমি সর্ষে ফুল। হিড়হিড় ক’রে টেনে নিয়ে এস– - উমানাথ বলিল—উনি জগদ্ধাত্ৰী দিদি। মঠবাড়ির মচ্ছৰ থেকে ফিরে এলেন এতক্ষণে— ক্ষেত্রনাথ আরও ক্রুদ্ধ হইয়৷ বললেন নবদ্বীপের মগোসাই এলেন । বের করে দিয়ে এসোগে । মাঘল ক’রে দখল নিয়ে তারপরে যেন আমার ক্ষেতে টোকে । - উমানাথ ইতস্তত: করিতে লাগিল। ক্ষেত্ৰনাথ কিছু কাল গুম হইয়া থাকিয়া বলিলেন-ঘরভেদী বিভীষণের পিছনে আছ, তা বুঝেছি। গালমন্দ না দিতে পার গিয়ে ভাল কথায় কি বলা যায় না—দিদি, যা তুলেছ তুলেছ—আর তুলো না ; এখন ফুল তুললে সর্ষের ফলন হবে না— উমানাথ কহিল, উনি সর্ষেফুল তুলছেন না । ভিটের উপর গিয়ে আছড়ে পড়লেন–র্কাদাকাটা করছেন না, কিছু না। দুপুর বেলাতেও ঐ রকম আর একবার দেখুন। আরও খানিক দাড়াইয়৷ উমানাথ আবার কহিল— আমি বললে কি যাবেন ? আপনি গিয়ে একবার দেখে আমুন। অর্থাৎ স্কুলকথা, তাহার দ্বারা এ-কাজ হইবে না । ক্ষেত্রনাথ তখন পামে পায়ে নিজেই চলিলেন। সরিষা-ক্ষেতের এক পাশে বড় একটি দেবদারু গাছ, তাহার গোড়ায় আসিয়া দেখিলেন—অনতিস্পষ্ট জ্যোংস্ক উঠিয়াছে, সেই আলোকে প্রথমটা নজরে আসিল না--তারপর দেখিলেন,—হলুদ-বরণ ফুলের মধ্যে সাদা কাপড়ে ঢাকা আবছা একটি মূৰ্ত্তি মাটির উপর একেবারে ডুবিয়া আছে। ক্ষণকাল চুপ থাকিয়া ক্ষেত্রনাথ মনে মনে অতিষ্ঠ হইয়া