পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—তোমরা শোনো মালী, আমি শুনে শুনে হুজ হয়ে গিয়েচি। ঘরে ঠাকুর রমেচেন, আর এই সব অনাচার কি ক'রে বরদাস্ত করি বল তো তুমি ? আমার কোনও ছেলেমেয়ে ওরকম করবে ? অত বড় ধাড়ী ছেলে হ’ল, মুড়ির বাটতে জল ঢাললে ধে শকৃড়ী হয় সে ও জানে না। শুনবে কোথা থেকে, মেলেচ্ছে খিরিষ্টানের মধ্যে এত কাল কাটিয়ে এসেচে, ভাল শিক্ষে দিয়েচে কে ? হিছর বাড়িতে কি এসব পোষায় ? বল তো তুমি— বুড়ী বললে –ওর মা জানে ন তা ও জানৰে কোথা থেকে ? সেদিন ওর মা করেচে কি, পুকুর ঘাটে তো বড় নৈবিদার বারকোশখানা ধুতে নিয়ে গিয়েচে–ষেদিন ঠাকুর এলেন ( বুড়ী উদ্দেশে স্থ-হাত জোড় করে নমস্কার করলে ) তার পরের দিন—আমি দাড়িয়ে ঘাটে, কাপড় কেচে যখন উঠলি তখন ধোয় বারকোশখানা আর একবার জলে ড়বে—না ডুবিয়েই অমূনি উঠিয়ে নিয়ে যাচ্চে। আমি দেখে বলি, ও কি কাও বউ ? ভাগ্যিস দেখে ফেললাম তাই তো— মায়ের দোষ দেওয়াতেই হোক, বা আমাকে আগের ওই সব কথা বলাতেই হোকৃ, আমার রাগ হ’ল। তা ছাড়া আমার মন বললে এতে কোন দোষ হয়নি— মুড়ির বাটতে জল ঢালার দরুণে মুড়ির বাট অপবিত্র হবে কেন ? মা বারকেশ খুয়ে জলের ধারে রেখে স্নান সেরে উঠে যদি সে বারকোশ নিয়ে এসে থাকেন, তাতে ম৷ কোন জঙ্কায় কাজ করেন নি । বললাম, “ওতে কি দোষ জ্যাঠাইম, মুড়িও খাবার জিনিষ, জলও খাবার জিনিষ—দুটোতে মেশালে খারাপ হৰে কেন, ছুতে থাবেই বা না কেন ? জ্যাঠাইম অগ্নিমূৰ্ত্তি হয়ে উঠলেন। “তোর কাছে শাস্তৱ গুনতে আলিনি, ফাজিল ছোড়া কোথাকার—তোরা তো খিরিষ্টান, ছিন্থর আচারব্যাভায় তোরা জানিল কি, তোর মই বা জানে কি ? ওইটুকু ছেলে গাল টিপলে দ্বধ বেয়ো, উনি আবার আমাৰ শাস্তর বোঝাতে আসেন। শিখবি কোথেকে, তোর যা তোদের কি কিছু শিখিয়েচে, না কিছু জানে? পয়ল রোজগার করেচে জার হাভে উড়িয়েচে তোয় বাবা-মদ খেয়ে খিপ্লিষ্টানি কোরে—* স্বাসীষ বললেন, “মোলোও সেই রকম। যেমন’বেক্ষ কাঞ্চল, তেমন-তেমন ক্ষিতৃ। দশেখন্মে দেখলে সবাই, Sово য়ে কন্মের যে শাস্তি—ঘর থেকে মড়া বেরোয় না, ও পাড়ার হরিদাস না এলে পড়লে ঘরের মধ্যে পড়ে থাকতো—” বাবার মৃত্যুর সম্পর্কে এ কথা বলাতে আমার রাগ হ’ল। র্তার মরণের পরে এখন তার কথা ভেবে আমার বড় কষ্ট হয়, যদিও সে কথা কাউকে বলিনে। বললাম, “ভাল মরণ আর মন মরণ নিয়ে বাহাদুরী কি মাসীম ? এই তো মাঘ মাসে ওই তেঁতুলতলায় যাদের বাড়ি, ওই বাড়ির সেই বুড়ে গাজুলী-মশায় মারা গেলেন, তিনি তো খুব ভালমানুষ ছিলেন সবাই বলে, পুকুরের ঘাটে এক বেলা দাড়িয়ে দাড়িয়ে আহ্নিক করতেন, তবে তিনি পেনসন আনতে গিয়ে ও-রকম ক’রে সেখানে মারা গেলেন কেন ? সেখানে কে তার মুখে জল দিয়েচে, কে মড়া ছুমেচে, কোথায় ছিল ছেলেমেয়ে, ও-রকম হ’ল কেন ?” আমার বোকামি, আমি ভেবেছিলাম ঠিকমত যুক্তি দেখিয়ে মাসাঁমাকে তর্কে হারাবে, কিন্তু মাষ্টীমার ধরণের ঝগড়ায় মজবুত পাড়াগায়ের মেয়ে যে অত সহজে হার মেনে নেবেন, এ ধারণা করাই আমার ভুল হয়েছিল। মাসীমা যুক্তির পথে গেলেন না । “মরুক বুড়ে গাঙ্গুলি, তবুও খবর পেয়ে তার ছেলেজামাই গিয়ে তাকে এনে গঙ্গাধ দিয়েছিল, তোর বাবার মত দোগেছের মাঠে ডোবার জলে আখপোড়া করে ফেলে রেখে আসেনি। আমি সব জানি, জামায় ঘাটাস নে, অনেক আদ্যি নাড়ির কথা বেরিয়ে যাবে। কাঠ জোটেনি, খেজুরের ভাল দিয়ে পুড়িয়েছিল, সব শুনিচি জামি। দোগেছের মাঠে সন্দের পর লোকে যায় না, সবাই বলে এখন ও ভূত হয়ে—” কথা সবই সত্যি, শেষেরটুকু ছাড়া। ঐটুকুর ওপরই জোর দিয়ে বললাম—“মিথ্যে কথা, বাবা কখখনো—” ভারপর যুক্তির অকাট্যত প্রমাণ করবার জন্তে এমন একটা কথা ৰ’লে ফেললাম ষা কখনো কারুর কাছে বলিনি বt খুব রেগে মরীয় না হয়ে উঠলে বলতামও না এদের কাছে। বললাম, “জানেন, আমি ভূত দেখতে পাই, অনেক দেখেচি, বাৰকে তা হলে নিশ্চয়ই আমি দেখতে পেতাম, জানেন ? ক্ষী-বাগানে থাকতে আমি কত-” এই পৰ্যন্ত বলেই চুপ করে গেলাম। মালীৰ খিলখিল