পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জগদ্ধাত্রী হাল্লিতে হাসিতে বলিল—ত বই কি ! আমার হাতের লেখার খাত, আমি চিনি নি। একটু থামি বলিল— আজকে মেয়েরা নাচতে নাচতে ইস্কুলে যায়, আর আমাদের সময়-ও বাবা. বলত, লেখাপড়া শিখলে মেম্বে বিধবা হবে। সার্বভৌমের মেয়েও বিধবা হয়ে এক বছর বেঁচে ছিলেন । - - ক্ষেত্ৰনাথ ইতিমধ্যে কোন সময়ে পিছনে আসিয় দাড়াইম ছিলেন। তাহার দিকে তাকাইয়া বলিল-পাটুদ, মনে পড়ে এই খাত। আর শিশুবোধক তুমি চুরি করে এনে দিয়েছিলে ।...সকালবেল উনি তিন-চার ছত্ৰ ক'রে লিগে দিয়ে যেতেন-পাঠশালে সমস্ত দিন ধরে যত মার পেতেন, বাড়ি এসে তার শোধ তুলতেন আমার উপর—সমস্ত দিন ধরে সেই ভয়ে দাগ বুলিয়ে রাখতে হত। কত কীৰ্ত্তিই করা গেছে ! পুথিপত্র নামাইম সিন্দুক ক্রমশঃ খালি হইতে লাগিল। মাঝের তক্তা ভাঙিয়া গিয়াছে, সমস্ত জোড় আলগা হুইয় গিয়াছে, তলাটাও একদম নাই। হৃদয়ের প্রতিশোধের উষ্ণতাও ক্রমশঃ শীতল হইয়া আসিল। টাকা দিয়া এই বস্তু কিনিয়া বাড়ির পথেই ত অৰ্দ্ধেক গুড় হইয়। যাইবে। মুখে বলিল ইস, একদম গিয়েছে। জগদ্ধাত্রী বুঝিল, ইহা কায়দায় ফেলাইয়া দাম কমাইবার চেষ্টা। উদ্বিগ্ন ভাবে কহিল—নেবে না নাকি ? ন-ই যদি নেবে এই টান-হেঁচড়ার কি দরকার ছিল ? হৃদয় বলিতে লাগিল—নেব না বলছে কে ? কিন্তু আগে ত জানতাম না, এই দশা। দশ টাক আমি দিতে পারব না । উমানাথ বলিল-আমি রাখব দিদি, আমি দশ টাকা দেব। সরুন, পুথিপত্তর তুলে ফেলি, গানের খাত তুলে ফেলি—বলিয়া সহায়রামের গানের খাত কপালে ঠেকাইয়া সে সিন্দুকে তুলিল। বলিতে লাগিল—বরাতক্রমে ঘরে এসেছে এমন সিন্দুক ত জীবন থাকতে ছাড়ছি নে। দশ টাক চান—যা চান, দেওয়া যাবে। সর হৃদয়, তোমার পিছনে আরও কি কি সব রয়েছে ... সমস্ত সাঙ্গাইয়া তুলিয়া উমানাথ সিন্দুকের ডালা বন্ধ করিল । ক্ষেত্রনাথের দিকে তাকাইয়া দেখিল, তিনি নিঃশব্দে હ્યું છે.સ્વાઝી ; S3BO দাড়াইয়া আছেন। তারপর জগদ্ধাত্রীর হাতের দিকে নজর পড়িতে বলিল-ওটা আবার কি বাইরে রাখলেন, আপনাদের সেই হাতের লেখার খাতা ? জগদ্ধাত্রী হাসিয়া বলিল-এটা বিক্ৰী করব না, নিয়ে যাব। তারপর বলিল-টাকাটা কালকে চাই উমানাথ, খুব সকালে রওনা হয়ে যাব। আজ বিকেলের দিকে একটা গরুর গাড়ী ঠিক করে রেখো, হৃদয় । হৃদয় বিরক্ত কণ্ঠে বলিল--আমি পারব না। ক'দিন ধরে এই করে করে কিছু কাজকৰ্ম্ম হচ্ছে না। আজ আমার আদায়ে বেরুতে হবে। আপনি আর কাউকে বলুন । সকলের পিছনে ক্ষেত্রনাথ নিৰ্ব্বাক পাথরের মত দাড়াইয়। এতক্ষণ কি ভাবিতেছিলেন তিনিই জানেন, এইবার কথা কহিয়া উঠিলেন। বলিলেন - গাড়ী আমি ঠিক করে দেব। আর এত বেলায় হৃদয়ের বাড়ি অদূর নাই গেলে জগদ্ধাত্রী। কাল এখান থেকেই এমনি চলে যেও । হৃদয় বরঞ্চ এক সময় কাউকে দিয়ে তোমার জিনিষপত্তোর যা আছে পাঠিয়ে দেবে । —ত দেব-বলিয়া একটু ব্যঙ্গ ভর হাসি হাসিয়া বলিলঅঢেল জিনিষপত্তোর । ফুটো ঘটি আর থান দুই কঁথা—দেব পাঠিয়ে বিকেল বেলা । সকলে চলিয় গেল, রহিল কেবল ক্ষেত্রনাথ ও জগদ্ধাত্রী। ক্ষেত্রনাথ বলিল-জগে, দিয়ে দে আমার আলী টাক, আমি তোর জিনিষপত্তোর বাপের ভিটে- সমস্ত ছেড়ে দিচ্ছি। আমি ত বঁচি তা হলে । জগদ্ধাত্রী হাসিল । —না পারিস টাকা দিস এর পর । সত্যি তুই চাস ? জগদ্ধাত্রী চুপ করিয়া রহিল। তারপর বলিল—তুমি মাঝে মাঝে দু-এক টাক পাঠিয়ে দিও। জায়গ-জমি ত পেটে খাওয়া যায় না । পরদিন খুব ভোরে গরুর গাড়ী আসিয়া দাড়াইল। মেজবউ ছোটবউ অনেক আগেই উঠিয়াছে। বলিল-ভূলে যাবেন না মা, আসবেন আবার । আঁচলের প্রান্তে চোখ মুছিয়া জগদ্ধাত্রী বলিল—সোনার রাজ্যি ভোদের মা, ছেড়ে যেতে মন কি চায় ? - *