পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দীর্ঘ আটটি বৎসরের মধ্যে যেমন অবসর মিলিয়াছে অমনই স্বজাত পলাইয় গেল ! বাক, নিষ্ঠুর স্বজাত । দিনকতক অবনীনাথ সেই ঘর হইতে বাহির হইলেন না, কাহারও সহিত কোন কথা কহিলেন না। স্বজাতার এই আকস্মিক অন্তৰ্দ্ধান তখনও কৌতুক বলিয়া তাহার মনে হইতেছিল। মনে হইতেছিল, পাশের ঘর হইতে এখনই সে ছুটিয়া আসিবে ; আসিয়াই চোখ টিপিয়া মৃদু হাসিয়া বলিবে, কেমন জব্দ । হা, জবা, জব্দ, খুব জবাই সে করিয়াছে ! আশ্চৰ্য্য কালের শক্তি । কয়েক দিন পরে অবনীনাথ সহজ মানুষের মতই বাহির হইলেন। পরিবর্তনের মধ্যে দেহের যৌবন প্রৌঢ়ত্বে আসিয়া উত্তীর্ণ হইয়াছে, গম্ভীর মুখের কথাগুলি সংক্ষিপ্ত এবং মধুর হাসিটির অন্তৰ্দ্ধান ঘটিমাছে । তা হউক, দীর্ঘ আটটি বৎসর পরে অবনীনাথকে পাইয়া বন্ধুরা খুব সমবেদনা জানাইল, নায়েব অমিলারা সম্রস্ত হইয়া উঠিল ; মহালে মহালে খবর গেল জমিদার আসিবেন । জমিদার সত্যই মহালে গিয়া জমিদারীর তত্ত্ব লইতে লাগিলেন এবং আশ্চর্য্যের বিষয় ফেচন্দনী মহালের দায়ে স্বজাতাকে হারাইতে হুইয়াছে, সেই চন্দনী মহালের অবাধ্য প্রজা দ্বারিককে তিনি এমন বশীভূত করিয়া ফেলিলেন যে, কোর্টের মামলার অকস্মাৎ নিম্পত্তি হইয়া গেল। এই দ্বারিকেরই ত্রয়োদশী কন্যা চাপাকে তিনি বিবাহ করিয়া ঘরে আনিলেন । “ম ছিলেন না, মাসি-পিসির দল বধু বরণ করিয়া ঘরে তুলিলেন। স্ত্রী-আচারের ক্রটি কোথাও হইল না, কেবল বাহিরে ভোজন-প্রত্যাশীর দল মনঃক্ষুণ্ণ হইল। না বাজন, না আলে, না জমিল কোলাহল। জমিদার হইয় এমন বিবাহ কি না-করিলে চলিত না ! চাপা প্রথমটা এত বড় বাড়ি দেখিয়া বিশ্বয়ে ফ্যাল ফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল। ঘরের যেন সংখ্যা নাই। যেমন বড়, তেমনই কি বিচিত্র সাজসজ্জা ! যত রাজ্যের মনিহারী দোকান স্বরের মধ্যে সাজানো। প্রকাও আলমারীর পাশে দিব্য লুকোচুরি খেলা জমে। জত বড় খাটখানায় হাতখানেক উচু গদির উপর গুইরা থাকিতেও যেন ভয়-ভয় করে। বড় একলা বোধ হয় । পাঁচ-ছয়টি খেলার সাখী জুটলে গরি উপর ছড়াছড়ি করিতে বেশ লাগে। উপরের বেলোয়াড়ী ঝাড়টা ? কাচের কত রকমই যে রঙ ! উহারা বলিতেছে, এসব তোমারই মা-দেখে গুনে নাও 1 মাগো ! এত জিনিষ নাকি দেখিয়ালওয়া যায় । ছবিতে, সোফায়, ঘড়িতে, গন্ধিটা চেয়ারে, পাথর-বসানো টেবিলে, দেয়াল-আরসিতে ঘরগুলি যেন যাদুঘর। শুধু ঘন্টা কেন, কয়েকটি দিন ধরিয়া দেখিলেও দেখার সাধ মেটে না । চাপা ইহারই মধ্যে দিশেহারা হইয়া যাইতেছে। এ বাড়িতে নাকি মানুষ বাস করিতে পারে । - ... " , বিবাহের কোন অনুষ্ঠানই বাদ দিবার উপায় “নাই। ফুলশয্যার আয়োজনও হইল । ফুলের গহনায় আগাগোড়া সাজিয় চাপা আর এক । জগতের মানুষ হইয়া গেল। একটু ফাক পাইয়াছে কি বড় আরসিটার সামনে দাড়াইম্বা হাত-মুখ ঘুরাইয়া এই অপরূপ সাজসজ্জা দুটি বিস্ময়-বিক্ষরিত নয়ন মেলিয়া দেখিতেছে। স্বগন্ধি পান খাইয়া ঠোঁট ছু-খানি কেমন লাল হইয়াছে, মাথায় । ফুলের মুকুট—যেন ধাত্রাদলের রাণীর মত । কিন্তু ভাল করিয়া দেখিবারই কি জো আছে । লোক পিছনে লাগিয়াই আছে । এ যায় ত ও আসে। ঘোমটা দিয়া বড়াই বুড়ীমত বসিয়া থাকা-কতক্ষণই বা পারা যায়! লোকজন চলিয়া গেলে অবসর মিলিল যখন—তখন ঘুমে চাপার চক্ষু চুলিতেছে। ফুলেভরা উচু খাটখানায় বসাইম্বা উহারা চলিয়া গেলে চাপা নামিয়৷ বড় আরসিটার সামনে দাড়াইতে পারিল না, সেই ৰিছানায়ই একটা পাশ-বালিশ মাথায় দিয়া ঘুমাইয়া পড়িল । নিয়ম রক্ষা করিতে অবনীনাথ আসিয়াছিলেন। ঘুমবিবর্শা বালিকার স্বপ্ত মুখের পানে চাহিয়া চক্ষুর দৃষ্টি অত্যন্ত কোমল হইয় উঠিয়াছিল; যে-কেহ দেখিলে বলিত, সে দৃষ্টি অশ্রুপতনের নিকটতম মুহূর্ভের। পূৰ্ব্বশ্বতি কিনা—কে জানে ? বেশীক্ষণ অবনীনাথ সে-দিকে চাহিতে পারেন নাই, সেটির উপর গুইয়া জীবনের এই স্মরণীয় রাত্রি কাটিয়া গেল। প্রভাতে ঘুম ভাঙিতেই সবিস্ময়ে দেখিলেন, বালিকা-বধু উঠিয়া আসিয়া আঁচল দিয়া তাহাকে বাতাস করিতেছে। চাপ তাহাকে চাহিতে দেখিয়া চাপ-গলায় হলিল, বড় ধেমেচ । কিনা—মোও—আমি বাতাস দিচ্ছি। এক জাতের মেয়ে আছে, অতি শৈশব হইতে বাজার