পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেৰীক্ষাঙ্গ রায়ের সিন্দুক ক্ষেত্রনাথ আসিম্বা ডাকিলেন - শোমো । তাহাকে একান্তে ডাকিয়া পাচটি টাকা হাতে দিলেন। বলিলেন–সিন্দুকের দাম । জগদ্ধাত্রী আশ্চৰ্য্য হইয় বলিল এ কি ? দশ টাকার কথা ছিল ষে। উমানাথ কোথায় ? — মঠবাড়িতে কীৰ্ত্তন শুনতে গেছল, রাত্তিরে আর ত ফেরে নি। তার কথায় কি হবে ? দরদপ্তরের সে জানে কি ? নেহাৎ বলে ফেলেছে বলেই, নইলে ভাঙা সিন্দুক কি কাজে লাগবে ? ইচ্ছে হ’লে তোমার জিনিষ নিয়ে যেতে পার । জগদ্ধাত্রী ভাবিতে লাগিল । ক্ষেত্রনাথ প্রশ্ন করিল—কি বল ? নিয়ে যাবে ? ঐ রকম বেকায়দা জিনিষ গরুর গাড়ীতে যাবে বলে বোধ হয় না, অন্ত রকম ব্যবস্থা করতে হবে। জগদ্ধাত্রী বলিল - দাও, তোমার যা খুশী । আসা-যাওয়ার : ভাড়া গেল চার --হাতে থাকল এক টাকা । তাই ভাল। বলিয়৷ ফ্রান হাসিয়া হাত পাতিল । ক্ষেত্রনাথ টাকা দিয়া দাতন করিতে করিতে একটু ওদিকে যাইতে ছোটবোঁ পুনশ্চ আগাইয়া আসিয়৷ সসঙ্কোচে বলিল— ম। ছোব আপনাকে ? জগদ্ধাত্রী হাসিয়া বলিল মুচির মেয়ে নাকি তুষ্ট যে ছু লে জাত যাবে ? নত হইয়। সে জগদ্ধাত্রীর পায়ে প্রণাম করিল। বলিল— সঞ্চালবেল নেম্নে-টেয়ে নিয়েছেন কি-না তাঈ বলছিলাম । আপনার পায়ের ধুলে নি একটু যাবার বেলা— জগদ্ধাত্রী ছোট মেয়ের মত তাহাকে জড়াহয়৷ কোলে তুলিয়া লইল। অশ্র আর বাধা মানিল না, ঝরঝর করিয়া গাল বহিয়া ঝরিতে লাগিল। ছোটবেীর চিবুকে আঙুল ছোয়াইয়া আঙুলের অগ্রভাগ চুম্বন করিয়া বলিল রাজরাণী মা তুই আমার—পোড়াকপালীর পায়ে হাত তুই কেন দিবি মা ? আচ্ছ, চল্লাম এবার । তোর খুড়শাশুড়ী এখনও ঘুমুচ্ছেন বুঝি। নিতাই কোথায় রে — ঘুমুচ্ছে ? -ལས་ཊོ──ཡ আচ্ছ, চাম ও পটু-ক্ষেত্রনাথ মুখ ফিরাইয়া অকাইতে জগদ্ধাত্রী বলিল—আচ্ছ, মেলার ঐ রেলগাড়ীটার দাম ঠিক ঠিক কত নেবে বল ত— ক্ষেত্রনাথ বলিলেন—বললে ত পাচসিক্ষে। এক টাকার কম দেবে কি ? . . . . – এই টাকাটা দিয়ে নিতুকে ওটা কিনে দণ্ড।-বলিয়৷ আঁচলের প্রান্ত হইতে ক্ষেত্রনাথের দেওয়া পাচ টাকার একটি টাক বাহির করিয়া দিল। আবার হাসিয়া বলিল — গরুর গাড়ীর চার আর রেলের গাড়ীর গেল এক। লাভে রইল আমার এই খাতাথান-তৰু বাপের বাড়ির একটা জিনিষ — জীর্ণ মটকার থানের আঁচলে সেই কীটদষ্ট বহু পুরাতন দাগাবুলানো হাতের লেখার খাতাথান যত্ন করিয়া জড়াইয়া লইমা জগদ্ধাত্রী গাড়ীতে গিয়া বসিল । ক্যাচ-র্কোচ শব্দ করিয়া আৰ্ত্তনাদ করিতে করিতে অসমান গ্রাম রাস্তার উপর দিয়া গরুর গাড়ী চলিয়াছে। চলিতে চলিতে হঠাৎ কি রকমে গরুর কাধের ফস খুলিয়া গিয়া গাড়ী একটুখানি থামিল। অল্পদূরেই সহায়রাম রায়ের পরিত্যক্ত ভিটার উপর শিশির-স্নাত হলুদ-বরণ সরিষা-ফুলের সমুদ্র। প্রভাতের শাস্ত নিস্তব্ধ গ্রাম। চণ্ডীমণ্ডপের দাওয়ায় দাড়াইয় দাড়াইয় ক্ষেত্রনাথ দেখিতেছিলেন। হঠাৎ কি মনে হইল, বাক্স হইতে আরও পাচটি টাকা লইলেন। এক মুহূৰ্ত্ত ইতস্ততঃ করিলেন, তারপর গাড়ীর পিছে পিছে এক রকম ছুটিয়া গিয়া ডাকিয়৷ থামাইয়া টাকা কয়টি জগদ্ধাত্রীর হাতে দিলেন । --এই নাও । হ’ল ত ? ঘর সারতে হয়, যা করতে হয়, কর গিয়ে –আমি আর কিছু জানি নে। যেন একজন কাহার উপর বড় অভিমান করিয়া বিদায় হইয়া যাইতেছে— নিজের মান বজায় রাখিতে হইবে, তাহাকেও ঠাও করিতে হইবে এমনি একটা ভাব। , ক্ষেত্রনাথ বলিতে লাগিলেন— ভায় আমার বেশ মানুষ । দশ টাকা হুকুম করে নিজে ত গা ঢাকা দিয়েছেন, এখন মর শাল তুই টাকার জোগাড় করে। জগদ্ধাত্রী অবাক বিস্ময়ে চাহিয়া রহিল দেখিয়া গাড়োয়ানের উপর হাক দিলেন-চালা, চালা-বেলা বাড়ছে না ? থেমে রইলি কেন ? কিন্তু উমানাথ যে ইচ্ছা করিয়া গা-ঢাকা দিয়াছিল তাতৃ, নহে । সকালে জগদ্ধাত্রী চলিয়া যাইবে, তৎপূর্বেই তাহার বাড়ি ফিরিবার একান্ত সম্বর ছিল। কিন্তু মঠবাড়িতে বালক-সঙ্কীৰ্ত্তন আসিয়াছে, অনেকক্ষণ অবধি চুপ করিয়া লে: