পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆlyషి বলিলেন, “তোমার মেজ দেওরের ছেলে রণেন্দ্র ।” রণেন্দ্র প্ৰণামের অভিনয় মাত্র করিয়াই ভীড়ের ভিতর ঢুকিয় গেল। বয়সে বড় মেয়ে, বীপের বাড়ি বেশী দিন থাকিতে পাইল না। জোড় ভাণ্ডিতে গিয়া দুই চারি দিন থাকিয়া আবার স্বামীর ঘর করিতে চলিয়া আসিল । আর একদিন শুধু বাপের বাড়ি গেল, সে পিতার মৃত্যুদিনে। বড় সাধের মেয়ে তাহার স্বেচ্ছায় ষে কেমন করিয়া জীবনব্যাপী তুষানলে দাং বরণ করিয়া লইল তাহ ভাল করিয়া না বুঝিমাই সৌভাগ্যক্রমে কৃষ্ণদয়াল পৃথিবী ত্যাগ করিলেন। রাজেন্দ্রাণী পিতাকে শেষ দেখা দিয়াই চলিয়া আসিয়াছিল। একলা মানুষের ঘর, একদিনও সংসার ফেলিয়া কোথাও থাকা চলে না। ইহারই জন্য তাহার স্বামী দেখিয়া-শুনিয়া বড়সড় শিক্ষিত মেয়ে বিবাহ করিয়াছেন, যাহাতে আসিয়াই গৃহিণীর আসন গ্রহণ করিতে তাহার কিছুমাত্র অন্ধবিধা না হয়। চতুর্থীর দিন সে খুব ঘটা করিয়া পিতৃশ্ৰাদ্ধ করিল। আগের রাত্রে সারা রাত মাটিতে পড়িয়া কাদিয়া তাহার অশ্রুর স্রোত শুকাইয়া ফেলিল। পরদিন তাহার পাথরের মূৰ্ত্তির মত চেহারা দেখিয়া সকলে আড়ালে বলাবলি করিল, ‘ধন্তি মেয়ে বাবা । চোখে এক ফোট জল নেই। মেয়েমানুষের এমন পাষাণ হতে নেই।” সারাদিন খাওয়া-দাওয়ার কাকোলাহল চলিল, বিকালে একটু মন্দ পড়িল। রাজেন্দ্রাণী তাহার শম্বন-কক্ষের প্রশস্ত বারানায় একলা বসিয়া ছিল, তাহার স্বামী নীচে আত্মীয়কুটুম্বের আপ্যামনে ব্যস্ত। হঠাৎ রণেন্দ্র সোজা উপরে উঠিয়া আসিল। রাজেন্দ্রাণীর সম্মুখে দাড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তোমাকে এত দিনের মধ্যে একদিনও একলা পাইনি। জিজ্ঞাসা করি, এতখানির কিছু দরকার ছিল কি ? আমাকে অবজ্ঞা করে ভুলে যেতেও ত পারতে ?” রাজেন্দ্রাণী স্বামীর ঘরে আসিয়া এই বোধ হয় প্রথম হাসিল, বলিল, “আপনারই কাছে দুটাে জিনিষ শিখেছি, এক-পিতৃমাতৃ আজ্ঞা একেবারেই অলঙ্ঘনীয়, আর এক— টাকার বড় জিনিষ জগতে কিছু নেই।” । রণেন্দ্র চুপ করিম রছিল, তাহার পর বলিল, “আমার অপরাধে তুমি আমাদের সমস্ত পরিবারটার উপরে শোধ ভূলবে? জানই গু জ্যাঠামশায়ই আমাদের ভরসা।” ఏర8O রাজেন্দ্রাণী বলিল, “আমার নিজের স্বার্থ দেখতে হবে ত?” রণেন্দ্ৰ বুঝিল, আর বাক্যব্যয় বৃথা। তাহার বিশ্বাসঘাতকতার যথার্থ মূৰ্ত্তি আজ সে দেখিতে পাইল। যে ছিল ফুলের মত কোমল, ভোরের আলোর মত নিৰ্ম্মল, সে-ই আজ পাষাণের মত কঠিন, সৰ্পের মত কুর হইয়া দাড়াইয়াছে, রণেদেরই পাপে। রণেদের সাধ্য নাই আর এই পাথরকে মানুষ করিবার । সে ধীরে ধীরে নামিয়া গেল । রাজেন্দ্রাণী এবং তাহার বাবার সাংসারিক জ্ঞান একেবারেই নাই বলিয়া রাধারণী আক্ষেপ করিতেন। কিন্তু তিনিও এবার স্বীকার করিলেন যে, রাজু তাহাকেও হার মানায় । বছর ঘুরিতে-না-ঘুরিতে কেমন করিয়া বৃদ্ধ স্বামীকে ভুলাইয় র্তাহার ধনসম্পত্তির অখণ্ড অধীশ্বরী যে সে হইয়া বসিল, তাহা শুধু ভগবানই জানেন। আশ্রিত আত্মীয়বর্গ একেবারে বঞ্চিত হইয়া অভিশাপে ও গালাগালিতে আকাশ ফাটাইতে লাগিল, তাহার কিছুই সে কানে তুলিল না। রাধারাণী মাঝে মাঝে শিহরিয়া উঠিতে লাগিলেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার খুজিয়া পাইলেন না। মেয়ে তাহার সঙ্গে সকল সম্পর্কই তুলিয়া দিয়াছিল। কয়েকটা বৎসর কাটিয়া গেল ! তাহার পর বিধবা রাধারাণী কাদিতে কাদিতে আর একবার মেয়েকে বাড়ি লইয়া আসিলেন । সেও তাহার বেশ ধরিয়াছে, কিন্তু তাহার চোখে আজও জল নাই। মাকে বরং বুঝাইয়া বলিল, “অনর্থক র্কাদ কেন বল ত ? মানুষের যাবার সমন্ধ হ'লে সে যাবে না ?” রাধারাণী অবাক হইয়া বলিলেন, “ই রে, তোর বুক কি পাথর দিয়ে গড় ? হাজার হোক স্বামী, ক’বছর ঘর করেছিল, তার জন্যেও চোখে জল নেই?" রাজেন্দ্রাণী মুখটা বাকাইয়া অন্য ধরে চলিয়া গেল । মায়ের কাছে থাকিতে আর তাহার প্রাণ চায় না। এ বাড়ির এখন আর সে কেহ নয়। কিন্তু থাকিবে কোথায় ? নিজের প্রসাদতুল্য বাড়ি শ্মশান হইয়া পড়িয়া আছে, কিন্তু একাকিনী সেখানে সে থাকিবে কেমন করিয়া ? ঐশ্বর্ষের অন্ত নাই, কিন্তু কোন কাজে তাহ আজ আর লাগিবে ? তাহার পথত এখন সীমাহীন মরুভূমির ভিতর দিয়া ? রাজেঞ্জাণী ক্রমেই যেন জমিয়া পাষাণ হইয় ঘাইতে লাগিল। রাধারাণী তাহাকে বুঝাইতে লাগিলেন, “ওরে