পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরখপুরে প্রবাসী-বঙ্গ-সাহিত্য-সম্মেলন স্ত্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রবাসী-বঙ্গ-সাহিত্য-সম্মেলন সম্বন্ধে “প্রবাসীতে” আগে কয়েক বার লেখা হইয়াছে, পরেও লেখা হইবে। যাহাদের ভাষা এক, তাহারা যেখানেই থাকুক, তাহাদের পরস্পরের সহিত যোগ রক্ষা করা আবশ্বক। তাহারা যদি বৃহত্তর লোকসমষ্টির অঙ্গীভূত থাকে, যেমন বাঙ্গালীর বৃহত্তর ভারতীয় মহাজাতির অঙ্গীভূত, তাহা হইলেও তাঁহাদের নিজেদের মধ্যে সংহতি আবশ্যক। ইহার প্রয়োজন আরও বেশী করিয়া অনুভূত হয়, যদি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতর এই লোকসমষ্টি কোন প্রকারে অস্তুবিধাগ্রস্ত হয়। সেইরূপ অসুবিধা যে অধুন বাঙালীদের ঘটিমাছে, তাহ বিশেষ করিয়া বলা অনাবশ্যক । সমগ্রভারতীয় মহাজাতির সাধারণ যে-সব অস্ববিধা আছে, বাঙালীদের তাহাত আছেই। তদতিরিক্ত কতকগুলি স্বাস্থ্যসম্বন্ধীয়, রাজনৈতিক ও আর্থিক অস্ববিধ বাঙালীদের ঘটিয়াছে। এই জন্য বাঙালীদের ঐক্য খুব বেশী হওয়া দরকার। বলা বাহুল্য, এই ঐক্যের উদ্দেশ্য অন্য কাহারও অনিষ্টসাধন নহে—ইহা কেবল মাত্র আপনাদের কল্যাণসাধন এবং অপর সকলেরও কল্যাণসাধনের নিমিত্ত আবশ্যক। ভারতবর্ষের কোন প্রদেশের কোন জাতিই সমগ্রভারতীয় মহাজাতির অন্তভূর্ত অন্যান্য জাতি হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ কল্যাণের পথে অগ্রসর হইতে পারে না। প্রত্যেক জাতিরই সমগ্র মহাজাতির অন্তান্ত অংশের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কৃষ্টি হইতে কিছু শিখিবার, কিছু অনুপ্রাণনা লাভ করিবার জাছে। আমরা বাঙালীর বঙ্গে থাকিয়াও এই প্রকার কিছু শিখিতে ও অনুপ্রাণনা লাভ করিতে পারি ; আবার যে-সব বাঙালী বঙ্গের বাহিরে বাস করেন, তাহদের মারফতেও শিক্ষা ও অনুপ্রাণনা পাইতে পারি। ভারতীয় মহাজাতির অঙ্ক সব অংশকে আমাদের যাহা দিবার আছে, তাহাও আমরা কিছু সাক্ষাৎভাবে, কিছু বঙ্গের বাহিরের বাঙালীদের হাত দিয়া দিতে পারি। প্রবাসী-বঙ্গ-সাহিত্য-সম্মেলনের দ্বারা যদি কেবলমাত্র নানা প্রদেশের বাঙালীদের আলাপ-পরিচয় ও সম্ভীৰ-বুদ্ধির সুযোগ হইত,তাহা হইলেও তাহ কম লাভ হইত না। কিন্তু তাতিরিক্ত অন্ত লাভও আছে। এই সম্মেলনে যে-সব অভিভাষণ ও প্রবন্ধাদি পঠিত হয়, তাহ এইরুপ অন্যান্য সভার অভিভাষণাদি অপেক্ষ উৎকর্ষে হীন নহে। ইহাতে আলোচনাও যোগ্যতার সহিত হইয় থাকে। সুতরাং নৃতন নূতন স্থান দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে নানাবিষয়ক জ্ঞানলাভের এবং চিন্তার উন্মেষের স্বযোগও সম্মেলনে হয়। যদি সমুদয় অভিভাষণ ও উৎকৃষ্ট প্রবন্ধাদি একত্র ছাপিতে পারিতাম, তাহা হইলে আমাদের কথার যথার্থতা সহজেই উপলব্ধ হইত। কিন্তু তাহা করিতে পারা যাইবে না। আমি অভিভাষণগুলি হইতে কেবল কোন কোন অংশ উদ্ধৃত করিব । তাহাও যে সকল স্থলে উংকৃষ্টতম অংশ, তাহা নহে । যাহা হউক, তাহ হইতে যদি ইহা বুঝিবার স্ববিধা হয়, ষে, বাঙালী যেখানেই থাকুন, সেখানেই বঙ্গের মানসিক পরিবেষ্টন কতকটা বিদ্যমান আছে, সেখানেই ছোট ছোট বঙ্গ বিরাজিত আছে, তাহা হইলে তাহাও কম লাভ নহে। জার্মানদের একটি কবিতা আছে যাহা, "জামানদের পিতৃভূমি কোথায় ? তাহা কি প্রশিক্ষা ? তাহ কি সোয়াবেন?” এইরূপ প্রশ্নের উত্তরস্বরূপ। উত্তর কতকটা এই মৰ্ম্মের যে, যেখানেই অধিবাসীদের মাতৃভাষা জামান, সেই স্থানই জামানী। আমরা জামানদের মত শক্তিমান ও জ্ঞানবান জাতি নহি–ভবিষ্যতে হয়ত হইতে পারি। কিন্তু আমরা যাহাই হই, আমরাও বলিতে পারি, যেখানেই কোন বাঙালী বাস করে ও বাংলা ভাষায় কথা বলে, তাহাই বাঙালীর পিতৃভূমিস্বরূপ ও বৃহত্তর বঙ্গের অংশ। ভারতবর্ষের কোন প্রদেশেরই সব অধিবাসীর মাতৃভাষা এক নহে, ভিন্ন ভিন্ন ছোট বড় অংশের মাতৃভাষা ভিন্ন ভিন্ন । এই জন্ত তাহারাও যে-যে প্রদেশে বাস করে তাহা তাহাদের পিতৃভূমিস্বরূপ এবং বৃহত্তর গুজরাট, বৃহত্তর উড়িষ্যা, বৃহত্তর বিহার ইত্যাদির অংশ। এই প্রকারে ভারতবর্ষের সব ংশ সব ভারতীয়ের পিতৃভূমি। উদ্বোধন সঙ্গীতের পর গোরখপুরে সম্মেলনের কাজ আরম্ভ