পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফলন্তন ভূমিকম্প $3 আদেী নাই। এই দুই অংশের মধ্যে কোন কোন স্থানে কেন্দ্রস্থল পরিলক্ষিত হয় বটে। ভূকম্প-বিজ্ঞান চর্চার ফলে বিগত কয়েক বৎসরের মধ্যে জানা গিয়াছে, বৰ্ত্তমানে ভূমণ্ডলের উপরে দুইটি রেখায় ভূমিকম্প সাধারণত হইয়া থাকে। একটি রেখা নিউজিল্যাণ্ডের সন্নিকট দক্ষিণ-প্রশান্তমহাসাগরে আরম্ভ হইয়া উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হইতে হইতে পূৰ্ব্ব চীনে উপস্থিত হয়। তথা হইতে উত্তর-পূৰ্ব্বমুখী হইয়া জাপান ও কামস্কটকার মধ্য দিয়া বেরিং-প্রণালী অতিক্রম করে এবং উত্তর-আমেরিকার পশ্চিম দিকস্থ পৰ্ব্বতশ্রেণী বাহিয়া দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে গিয়া শেষ হয়। অন্য রেখাটি ইহারই একটি শাখা। ইহা ঈষ্ট ইণ্ডিজে ( স্বমাত্রা, জাভা অঞ্চলে ) আরম্ভ হইয়া বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিয়া ব্ৰহ্মদেশ, আসাম, হিমালয়, তিব্বত, তুর্কীস্তান, পারস্ত, তুরস্ক ও বন্ধান উপদ্বীপ হইয়া ইটালী স্পেন ও পর্তুগালে পৌঁছে। অতঃপর ইহা দক্ষিণ-পশ্চিমবাহিনী হয় এবং অতলাস্তিক মহাসাগর পার হইয়া আমেরিকার ভিতর দিয়া মেক্সীকোতে প্রথম রেখার সঙ্গে মিলিত হয়। এই দুইটি রেখা ছাড়াও চীন মাঞ্চুরিয়া এবং মধ্য-আফ্রিকায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল আছে। ভারত-মহাসাগরের পশ্চিমভাগে, দক্ষিণঅতলাস্তিক ও উত্তর-মহাসাগরেও ইহার কেন্দ্রস্থল পাওয়া शंध्र । পুরাণে ভূমিকম্পের কারণ সম্বন্ধে নানা কৌতুকপ্রদ কাহিনী বর্ণিত আছে। বস্কন্ধরা বাম্বকীর মস্তকে, কচ্ছপের পৃষ্ঠে বা দানব-বিশেষের স্বন্ধে অবস্থিত। ইহারা যখন বিশ্রাম লাভের জন্য অঙ্গসঙ্কোচ করে তখনই ধরিত্রী কঁাপিম্বা উঠে। এ যুগে ইহা আর কেহই বিশ্বাস করিবে না। স্বতরাং ভূমিকম্পের কারণ নির্দেশে বিজ্ঞান কতদূর অগ্রসর হইয়াছে তাহাই এখানে বিবেচ্য। পৃথিবী-গর্তে এক রূপ গ্যাস আছে, ইহা রাসায়নিক কারণে উপরে উঠবার উপক্রম করিলেই ভূমিকম্প হয়-ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে এই মতবাদ প্রচলিত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এ মতবাদ বদলাইয়া যায় ; তখন আবার প্রচারিত হয় যে, বৈদ্যুতিক কারণেই ভূমিকম্প সংঘটিত হইয়া থাকে। কোন কোন স্থানে ভূমিকম্পের সঙ্গে সঙ্গে অ্যুীরণের জন্তই এই সকল ধারণা হইয়া থাকিবে। কিন্তু পরে দেখা গেল অ্যুঙ্গীরণ না হইয়াও অনেক সময় ভীষণ ভূকম্পন হয়। দুষ্টান্ড, হিমালয়ে আগ্নেয়গিরি নাই অথচ ঐ অঞ্চলে গত কয়েক বৎসরে কতকগুলি বড় বড় ভূমিকম্পের উদ্ভব হইয়াছে। অধিকন্তু, যেসব অঞ্চলে আগ্নেয় (volcanic) ভূমিকম্পের উৎপত্তি হইয়াছে সে সকল স্থলেও ভূপৃষ্ঠের অতি সামান্য অংশ হইতেই অফুর্গীরণ হইয়াছে। কাজেই প্রশ্ন উঠে, ভূপৃষ্ঠের স্তরের কোন অংশ স্থানচ্যুত হওয়ার জন্য এরূপ ভূমিকম্প হয় কি-না। এই প্রশ্নের সমাধানের জন্ত ভূতত্ত্ববিদের সাহায্য প্রয়োজন হইল। .দেখা গেল, পৃথিবীর যে-সব অঞ্চলের পর্বতাদি অপেক্ষাকৃত অল্পদিনের এবং যাহাঁদের গঠনকার্য এখনও শেষ হয় নাই, সেই সব অঞ্চলে সাধারণতঃ ভূমিকম্প হইয়া থাকে। এই সকল অঞ্চলে পৃথিবীর স্তর খাড়া, এবং এইজন্ত হঠাৎ পতনশীল। ভূগর্তে শিলাখণ্ডের পতন হইলে, পৰ্ব্বতের চাপে ভূপৃষ্ঠের কতক ধ্বসিয়া গেলে অথবা পাহাড়ের উপর পাহাড় খসিয়া পড়িলে ভূপৃষ্ঠে বিপর্যায় উপস্থিত হয়। স্বতরাং ভূকম্প-বিজ্ঞানে পৰ্ব্বতের অবস্থিতির কোণ বিশেষভাবে বিবেচ্য । এখন দেখা যাইতেছে—ভূপৃষ্ঠের স্থিতিস্থাপকতার সঙ্গে ভূমিকম্পের অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ। এইরূপ ভূমিকম্পের উৎপত্তি ভূপৃষ্ঠের গঠন মূলক (tectonic)। কতকগুলি আগ্নেয় ভূমিকম্পও এই একই কারণে উদ্ভূত। উপরোক্ত মূল কারণ ছাড়াও ভূমিকম্পের কয়েকটি আনুষঙ্গিক উত্তেজক কারণের উল্লেখ করা যাইতে পারে, যথা—১ । সমুদ্র-তরঙ্গের চাপ, ২ । বায়ুমণ্ডলের চাপ (সাইক্লোনাদির সময়ে যেরূপ চাপ হয়), ৩ । তাপের চাপ ( শীত এবং উষ্ণ তরঙ্গের চাপ), ৪ । উচ্চে অধিভকায় প্লাবন এবং সমতলভূমিতে সঙ্গে সঙ্গে জলের অবসরণ অথবা পৰ্ব্বতোপরি অত্যধিক তুষার-সংগ্রহ এবং ৫ । দূরবর্তী ভূকম্পনজনিত চাপ । আবহাওয়ার পরিবর্তন অথবা উক্ত অন্তান্ত কারণ ভূমিকম্পের উৎপত্তির সহায়ক হইতে পারে। কিন্তু যতদিন ইহাদের কার্ধ্যকারিভা সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা না হয় তত দিন ইহাদের সম্বন্ধে জোর করিয়া কিছুই বলা যায় না। তবে চন্দ্রের কলার হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে ভূমিকম্পের উৎপত্তির যে কোন সম্বন্ধ নাই বৈজ্ঞানিকগণ ইহা স্থির করিয়াছেন । ভূমিকম্পের দিক ও শক্তি নিরূপণের জন্ত একটি যন্ত্র আবিষ্কৃত