(?& ং প্রবাসী ; বাদশাহী সড়ক। এ রাস্তায় কোন পথিক কোন দিন জলের জনা চিন্ত করে নি। ক্রোশ অন্তর দীঘি আর ডাক অন্তর মসজিদ এ-পথের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত নিৰ্ম্মিত হয়েছিল। দীঘিগুলি এখনও আছে— বাধা দিয়া রজতবাবু প্রশ্ন করিলেন–কিন্তু ডাক-অন্তর মসজিদটা কি ব্যাপার ? —ডাক-অন্তর মসজিদের অর্থ হচ্ছে এক মসজিদের আজানের শব্দ যত দূর পর্যন্ত যাবে তত দূর বাদ দিয়ে আর একটি মসজিদ তৈরি হয়েছিল। এক মসজিদের আজান-ধ্বনি অপর এক মসজিদ থেকে শোনা যেত । এক দিন ভাবুন—দেশ-দেশান্তরব্যাপী সুদীর্ঘ এই পথখানির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত একসঙ্গে আজান-ধ্বনি ধ্বনিত হয়ে উঠত। ওই—ওই দেখুন পাশের ওই যে ইটের শুপ—ওই একটি মসজিদ ছিল। আর প্রতি ক্রোশে একটি দীঘি আছে। তাই বলছিলাম এ-রাস্তায় কেউ কখনও জলের ভাবনা ভাবে নি । রমেন্দ্রবাবু কহিলেন-বাদশাহী সড়ক যখন তখন কোন বাদশাহের কীৰ্ত্তি নিশ্চয় । কিন্তু কোন বাদশাহের কীৰ্ত্তি মশাই ? - —ঠিক বুঝতে পারা যায় না। ঐতিহাসিকেরা বলতে পারেন। তবে এ-বিষয়ে সুন্দর একটি কিংবদন্তী এদেশে প্রচলিত আছে। শোনা যায় না-কি কোন বাদশাহ বা নবাব দিগ্বিজয়ে গিয়ে ফেরবার মুখে এক সিদ্ধ-ফকীরের দর্শন পান। সেই ফকীর তার অদৃষ্ট গণনা করে বলেন, রাজধানী পৌঁছেই তুমি মারা যাবে। বাদশাহ ফকীরকে ধরলেন-এর প্রতিকার করে দিতে হবে। ফকীর হেসে বললেন-প্রতিকার ? মৃত্যুর গতি রোধ করা কি আমার ক্ষমতা ? বাদশাহও ছাড়েন না । তখন ফকীর বললেন- তুমি এক কাজ কর, তুমি এখান থেকে এক রাজপথ তৈরি করতে করতে যাও তোমার রাজধানী পধ্যস্ত। তার পাশে পাশে ক্রোশ-অস্তর দীঘি আর ডাক . অন্তর মসজিদ তৈরি কর । স্বরেশবাবু নীরব হইলেন। রজতবাবু ব্যগ্রভাবে প্রশ্ন করিয়া উঠিলেন—তারপর মশাই, তারপর ? . سس است. SOBO বাদশাহ রাজধানী পৌঁছেই মার। গেলেন। কিন্তু কত দিন তিনি বাঁচলেন অনুমান করুন। এই পথ, এই সব দীঘি, এতগুলি মসজিদ তৈরি করতে যত দিন লাগে তত দিন তিনি বেঁচেছিলেন । রজতবাৰু বললেন-হাম্বাগ-বাদশাহটি একটি ইডিট ছিলেন বলতে হবে। তিনি ত পথটা শেষ না করলেই পারতেন —আজও পৰ্য্যন্ত তিনি বেঁচে থাকতে পারতেন । রমেন্দ্রবাবু গাড়ী হইতে নামিবার উদ্যোগ করিয়া কহিলেন— দাড়ান মশাই –এ পথের ধুলো আমি খানিকটে নিয়ে যাব, আর মসজিদের একখানা ইট। স্বরেশবাবু কহিলেন--আর একটা কথা শুনে তারপর । পথ ত ফুরিয়ে যায় নি আপনার। রজতবাবু তাগাদ দিলেন--সেট। আবার কি ? —এদেশে একটা প্রবচন আছে—সেটার সঙ্গে আপনার পরিচয় থাকা সম্ভব। পুলিস রিপোটে সেটা আছে— রমেন্দ্রবাবু অসহিষ্ণু হইয়া বলিলেন—চুলোয় যাক মশাই পুলিস রিপোর্ট। কথাটা বলুন ত আপনি । -- তাড়া দেবেন না মশাই। গল্পের রস নষ্ট হবে। কথাটা হচ্ছে "আখড়াইয়ের দীঘির মাটি, বাহাদুরপুরের লাঠি, কুলীর ঘাটি । এই তিনের যোগাযোগে এখানে শত শত নরহত্যা হয়ে গেছে । রাত্রে এ-পথে পথিক চলত না ভয়ে । বাহাদুরপুর বিখ্যাত লাঠিয়ালের বাস। কুলীর ঘাটিতে তারা রাত্রে এই পথের ওপর নরহত্যা করত। আর সেই সব মৃতদেহ গোপনে সমাহিত করত আখড়াইয়ের দীঘির গর্ভে । রজতবাবু বলিয়া উঠিলেন ও, তাই না কি ? এই সেই জায়গা | স্বরেশবাবু উত্তর দিলেন- ভার কাছাকাছি এসেছি আমরা । রজতবাবু কহিলেন– এখনও পূজোর আগে এখানে চৌকীদার রাখবার ব্যবস্থা আছে। - — আর তার দরকার নেই বোধ হয়। এখন এর শাসন মেনে নিয়েছে। - রমেন্দ্রবাবুর গাড়ীখানি এই সময় একটা গর্ভে পড়িয়া লাফাইয়া উঠিয়া পড়িয়া গেল। রমেন্ত্রবাবু লাফ দিয়া কোনরূপে আত্মরক্ষা করিলেন। সকলেই গাড়ী হইতে নামিয়
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।