কাতিব আগাইয়া আসিলেন। গাড়ীখানা তুলিয় রমেন্দ্রবাৰু বলিলেন—ঘন্ত্র বিকল । এখন ইনিই আমার ঘাড়ে চেপে যাবার মতলব করেছেন। একথান চাকা ধাক্কায় বেঁকে টাল খেয়ে গেছে। আমাদের হাতের মেরামতের বাইরে। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনাইয় উঠতেছিল। রজতবাবু অস্পষ্ট সম্মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন -এ যে মহা বিপদ হ’ল স্বরেশ বাৰু? --কি করা যায় ? হাসিয়া স্বরেশবাবু বলিলেন পথপার্থে বিশ্রাম। মালপত্র নিয়ে পেছনের গোযান না এলে ত উপায় বিশেষ দেখছি নে । আপনাকে বিপদের হেতু ভাবিত্র। রমেন্দ্রবাবু একটু অপ্রস্তুত হইয়া পড়িয়াছিলেন। তিনি তখনও গাড়ীখান! লইয়া মেরামতের চেষ্টা করিতেছিলেন। রজতবাবু কহিলেন --ঘাড়ে তুলুন মশায় বাহনকে । তবু একটা বিশ্রামের উপযুক্ত স্থান দেখে নেওয়া যাক । বাইসিক্লে ঝুলান ব্যাগ হইতে টর্চটী বাহির করিয়া স্বরেশবাবু সেটার চাবি টিপিলেন । তীব্র আলোক-রেখায় সম্মুখের প্রান্তর আলোকিত হইয়। উঠিল। অদূরে একটা মাটির উচু ভূপ দেখিয় স্বরেশবাবু কহিলেন এই যে সম্মুখেই বোধ হয় আখড়াইয়ের দীঘি। চলুন ওরই বাধাধাটে বসা যাবে। রজতবাবু বলিলেন–র্হ্য, অতীত যুগের কত শত হতভাগ্য পথিকের প্রেতাত্মার সঙ্গে সুখদুঃখের কথাবার্তা অতি উত্তমই হবে । এতক্ষণে হাসিয়া রমেন্দ্রবাবু কথা কহিলেন —আর বাহাদুরপুরের দু-একথান লাঠির সঙ্গে যদি সাক্ষাৎ হয় সে উত্তমের পরে অযোগ্য মধ্যম হবে না। কি বলেন ? কোমরে বাধা পিস্তলটায় হাত দিয় রজতবাবু কহিলেন— তাতে রাজী আছি । 誉 笋 용 প্রকাও দীঘিটা অন্ধকারের মধ্যে ডুবিয়া আছে। শুধু আকাশের তারার প্রতিবিশ্বে জলতলটুকু অনুভব করা যাইতেছিল। চারি পাড় বেড়িম্বা বন্য লতাজালে আচ্ছন্ন বড় বড় গাছগুলিকে বিকট দৈত্যের মত মনে হুইতেছিল। চারদিক অন্ধকারে থম থম করিতেছে। 切* आषड़ाईटब्रब्र शैचि Pዛ দীঘিটার দীর্ঘ দিকের মধ্যস্থলে সে আমলের প্রকাও বাঁধাঘাট। প্রথমেই স্নপ্রশস্ত চত্বর। তাহারই কোল হইতে সিড়ি নামিয়া গিয়াছে জলগর্ভে। সিড়ির দুই পার্শ্বে দুইটি রাণী। একদিকের রাণ ভাঙিয়া পাশেরই একটা মুগভীর , খাতের মধ্যে নামিয়া গিয়াছে । ঘাটের চত্বরটির ঠিক মধ্যস্থলে তিন জনে আশ্রয় লইয়াছিলেন। এক পাশে সাইক্ল তিনখানা পড়িয়া আছে । ছোট একখানা সতরঞ্চি রণেন্দ্রবাবুর গাড়ীর পিছনে গুটান ছিল সেইখান পাতিয়া.রমেন্ত্রবাবু বসিয়াছিলেন। পাশেই মুরেশবাবু আকাশের দিকে চাহিয়া শুইয়া আছেন। রজতবাবু শুধু চত্বরটায় ঘুরিয়া ঘুরিয়৷ বেড়াইতেছিলেন। স্বরেশবাবু বলিলেন--সাবধানে পারচারী করবেন রজতবাবু। অন্যমনস্কে থাদের ভেতরে গিয়ে পড়বেন না যেন । দেখেছেন ত খাদটা ? হাতের টর্চটা টিপিয় রজতবাবু বলিলেন-দেখেছি । আলোক-ধারাটা সেই গভীর গৰ্ত্তে তিনি নিক্ষেপ করিলেন । মৃগভীর খাদটার গর্ভদেশটা আলোকপাতে যেন হিংস্ৰ হাসি হাসিয়া উঠিল। রজতবাবু কহিলেন—উ, এর মধ্যে পড়লে আর নিস্তার নেই। ভাঙ রাণাটার ইটের ওপর পড়লে হাড় চুর হয়ে যাবে। তিনি এদিকে সরিয়া আসিয়া নিরাপদ দূরত্ব বজায় করিলেন । আলোক নিবিবার পর অন্ধকারটা যেন নিবিড়তর হইয়া উঠিল। ওদিকে পশ্চিম দিকৃপ্রান্তে মধ্যে মধ্যে বিদ্যুদীপ্তি চকিত হইয় উঠতেছিল। স্বরেশবাবু নীরবতা ভঙ্গ করিয়া কহিলেন কে কি ভাবছেন বলুন ত? রমেন্দ্রবাবু বাধা দিয়া বলিলেন—ওদিকে কি যেন একটা ঘুরে বেড়াচ্ছে ব’ল বোধ হচ্ছে। কি বলুন ত ? সঙ্গে সঙ্গে দুইটা টর্চের শিখা দীঘির বুক উজ্জল করিয়া তুলিল। রজতবাবু কহিলেন-কই ? রমেন্দ্রবাবু কহিলেন-ওপাড়ে ঠিক জলের ধারে । লম্ব মত--মামুষের মত কি ঘুরে বেড়াচ্ছিল বোধ হ’ল। সুরেশবাবু হাসিয়া বলিলেন— দীঘির গর্তের কোন অশাস্ত প্রেতাত্মা হয়ত। কিংবা বাহাদুরপুরের লাঠিয়াল কেউ। রজতবাবু কছিলেন—সে হ’লে ত মন্দ হয় না, একটা স্থ্যাডভেঞ্চার হয়, সময় কাটে। কিন্তু তার চেয়েও ভয়ঙ্কর
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।