পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের রেশিও সমস্যা । ঐঅনাথগোপাল সেন রেশিও প্রশ্ন লইয়া ভারতব্যাপী একটা বড় বহিয়া গেল । এত প্রচও তার আকর্ষণ যে, কবি-সম্রাট রবীন্দ্রনাথ হইতে বিজ্ঞানাচাৰ্য প্রফুল্লচন্দ্র পর্যন্ত টাল সামলাইতে পারেন নাই। আর আমরা অনেকেই ভালমন্দ বিশেষ কিছু বুঝিতে না পারিয়া পরস্পরের মুখ-চাওয়াচাওয়ি করিয়াছি। শাস্ত্রের কচ কচি নীরব হইয়া আসিয়াছে, ঝড়ের বেগ কমিয়া গিয়াছে ; স্বতরাং সাধারণের পক্ষে ধীর ভাবে বিষয়টি বুঝিবার সময় উপস্থিত হইয়াছে। সেইজন্যই এই প্রবন্ধের অবতারণা । প্রারম্ভে রেট অব এক্সচেঞ্জ বা বিনিময়ের হার এই কথাটার অর্থ বুঝিতে চেষ্টা করা যাক। বিভিন্ন দেশের মূত্রার ওজন নির্দিষ্ট করা হইলেও এক এক দেশের মুত্রার ওজন এক এক রকম। এই ওজনের পার্থক্যের দরুণ ইহাদের মূল্যের যে তারতম্য, রেট অব এক্সচেঞ্জ তাহাই গণিতের সাহায্যে নির্দেশ করিয়া দেয় মাত্র। ইহাকেই সংক্ষেপে ‘রেশিও" বলা হয় । পৃথিবীব্যাপী মুদ্রাবিভ্ৰাট ঘটিবার পূর্ব পর্যন্ত একটি বিলাতি স্বর্ণমুদ্রা ফ্রান্সের ২৫-২২টি, জাৰ্ম্মানীর ২০:৪৬টি এবং আমেরিকার ৪৮৬টি স্বর্ণমুদ্রার সমতুল্য ছিল। একই ধাতুর বিভিন্ন মুদ্রামধ্যে বিনিময়ের হার নিদ্ধারণ করা খুবই সহজ। কিন্তু এক দেশের মুদ্র স্বর্ণনিৰ্ম্মিত, অপর দেশের মুদ্র রৌপ্যনিৰ্ম্মিত হইলে উভয় ধাতুর আপেক্ষিক মূল্যের অ-স্থিরতা হেতু উহাদের মধ্যে বিনিময়ের হার নিরূপণ করা কঠিন হইয়া পড়ে। ইংলণ্ডের স্বর্ণমুদ্রা ও ভারতের রৌপ্যমুদ্রার মধ্যে সম্বন্ধ নির্ণয় সেইজন্তই চিরকাল দুরূহতার স্বষ্টি করিম জাসিয়াছে। বর্তমান জান্দোলন সেই বহু পুরাতন কলহেরই একটা নবপর্যায় মাত্র। ভারতের লেন-দেন প্রধানতঃ ইংলণ্ডের সহিত ; তথাপি কেন যে ইংরেজ সরকার ভারতে স্বর্ণমুদ্রার পরিবর্তে রৌপ্যমুত্র প্রচলন করিয়া উভয় দেশের আর্থিক সম্পর্কের মধ্যে এই নিদারুণ অনির্দিষ্টতা বা ভেদের স্বটি به حساب-ما করিলেন তাহা বোঝা কঠিন । যাহা হউক, সেই আলোচনা বর্তমান প্রবন্ধের বিষয় নহে; এই সম্বন্ধে আমি অন্তরঞ্জ বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছি। এক্ষণে মূল বিষয়ে প্রত্যাবর্তন করা যাক্ । - কোন দেশের বাণিজ্যই আর এখন শুধু সেই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নহে ; গোটা জুনিয়ার সহিত এখন আমাদের কারবার। সেইজন্যই পরস্পরের দেনা-পাওনা স্থির করিবার জন্য বিভিন্ন দেশের মুদ্রামধ্যে বিনিময়ের হার নির্দিষ্ট রাখা একান্ত আবশ্বক। এতকাল ছিলও তাই। বিগত মহাযুদ্ধের অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে ইউরোপের দেশসমূহ স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হওয়ায় এই নির্দিষ্ট হারের নড়াচড় হইয়া যায়। পরে শাস্তিস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণমুদ্রা প্রতিষ্ঠিত হইলে স্বাভাবিক অবস্থা পুনরায় ফিরিয়া আসে। কিন্তু কিছুকাল মধ্যেই যুদ্ধের পরবর্তী কুফল ধীরে ধীরে ফলিতে স্বরু করে এবং ইংলও হৃতসৰ্ব্বস্ব হুইবার অবস্থায় পড়িয়া ১৯৩১ সালে পুনরায় স্বর্ণমান পরিত্যাগ করে । সঙ্গে সঙ্গে জাপান, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়, নিউজিলাও প্রভৃতি অন্যান্য দেশও আত্মরক্ষার জন্য স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হয়। তদবধি পৃথিবীব্যাপী এই মুদ্রাবিভ্রাটের পাল চলিয়াছে, ইহার শেষ কোথায় কি ভাবে কেহ বলিতে পারে না । স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিয়া নিজ দেশের দেনা পরিশোধের জন্য স্বর্ণমুদ্রা দিবার দায় হইতে গবৰ্ণমেণ্ট রক্ষা পাইলেন, কেবল বিদেশের দেন পরিশোধ করিবার বেলাই স্বর্ণমুদ্রা বা স্বর্ণথানের প্রয়োজন থাকিল। স্বর্ণমুদ্রার স্থান যখন কাগজের নোট অধিকার করিল, তখন মুত্রায় ধাতুমূল্য দ্বারা বিভিন্ন দেশমধ্যে বিনিময়ের হার নির্ধারণের যে সহজ উপায়টি ছিল তাহা নষ্ট হইয়া গেল এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দেনাপাওনা

  • প্রবাসীর কাৰ্ত্তিক সংখ্যার প্রকাশিত "ভারতে স্থানীতি" প্ৰয়ৰ ফ্রষ্টব্য। '