পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Woe & —শুনেছি। সরকারপক্ষের উকীলের আর কোন জিজ্ঞাস্ত নাই। আসামীপক্ষের উকীল সাক্ষীকে জেরা করিতে ইচ্ছ। করেন না । দ্বিতীয় সাক্ষী এলোকেশী বাগিনী। মৃত তারাচরণ বাগদীর স্ত্রী। বয়স আঠারো বংসর। প্রশ্ন—এই আসামী কালীচরণ তোমার শ্বশুর ? 一教列日 o –আচ্ছ বাপু, তোমার স্বামীর সঙ্গে কি তোমার শ্বশুরের ঝগড়া ছিল ? --져 —কখনও ঝগড়া হত না ? —ঝগড়া হ’ত বইকি। কতদিন টাকাপয়স নিয়ে ঝগড়া হত। কিন্তু তাকে ঝগড়া থাকা বলে না । —কিসের টাকাপয়সা নিয়ে ঝগড় ? —খুনের, ডাকাতির । আমার শ্বশুর— আমার স্বামী মানুষ মারত। ডাকাতিও করত । —কেমন করে জানলে তুমি ? — বাড়িতে শাশুড়ীর কাছে শুনেছি, আমার স্বামীর কাছে শুনেছি, এদের বাপবেটার কথায়-বাৰ্ত্তায় বুঝেছি। আর কতদিন রক্তমাখা টাকা গয়না জলে ধুয়ে পরিষ্কার করেছি। —তোমার স্বামী তারাচরণকে কে খুন করেছে জান ? —জানি। আমার শ্বশুর খুন করেছে। আমি নিজে চোখে দেখেছি। বিচারক প্রশ্ন করেন-- তুমি নিজের চোখে খুন করা দেখেছ? . —-হঁ্যা হুজুর, সমস্ত দেখেছি । বিচারক আদেশ করেন— কি দেখেছ তুমি, আগাগোড়া বল দেখি । সরকারপক্ষের উকীলকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা বন্ধ করিতে আদেশ দেওয়া হইল। সাক্ষীর উক্তি — হুজুর, শ্রাবণ মাসের প্রথমেই আমি বাপের বাড়ি গিয়ে ছিলাম। শ্রাবণের সাতাশে আমার ছোট বোনের বিয়ে ছিল। আমার স্বামী পচিশে তারিখে সেই বিয়ের নিমন্ত্রণে এখানে আমার বাপের বাড়িতে আসে। আরও অনেক ミ>○8○ কুটুম্বসজ্জন এসেছিল। জাত বাঙ্গী আমরা হুজুর, সকলেই আমাদের লাঠিয়াল। আর ছোট জাতের আমোদে আহলাদে মদই হ’ল হুজুর প্রধান জিনিষ। বড় বড় জোয়ান সব দিবারাত্রি মদ থেয়েছে আর ঘাঁটি-খেলা খেলেছে। বিচারক প্রশ্ন করেন--ঘাটি-খেলা কি ? —হুজুর ডাকাতি করতে গিয়ে যেমন ভাবে লাঠি খেলে, গেরস্তের ঘর চড়াও ক'রে বাইরের লোককে আটকে রাখে, সেই খেলার নাম ঘাটিখেল । সেই খেল খেলতে খেলতে আমার স্বামীর সঙ্গে আমার দাদার ঝগড়া হয়। তিন তিন বার আমার স্বামী আমার দাদার ঘাটি ভেঙে দিয়ে বলেছিল--- এ ছেলেথেল ভাল লাগে না বাপু, যদি মরদ তোদের কেউ থাকে, তবে নিয়ে আয় । সেই নিয়ে ঝগড়া । মনের রাগে দাদা রাত্রে খাবার সময় আমার স্বামীর কুলের খোটা তুলে অপমান করে । আমার ননদ নীচ জাতের সঙ্গে বেরিয়ে চলে গিয়েছিল -- সেই নিয়ে কুলের খোটা। স্বামী আমার তথনই উঠে পড়ে সেখান থেকে চলে আসে । আমার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেনি হুজুর তাহলে তাকে আমি সেই অন্ধকার বাদল রাতে বেরুতে দিতাম না। আমি যখন খবর পেলাম তখন সে বেরিয়ে চলে গেছে । আমিও আর থাকতে পারলাম না- থাকতে ইচ্ছাও হ’ল না। যে মরদ স্বামীর জন্যে আমার সমবয়সীরা আমাকে হিসে করত তার অপমান আমার সহ হ’ল না। আর আমাকে সে যেমন ভালবাসত -- সাক্ষী এই স্থলে কাদিয়া ফেলে। কিছুক্ষণ পর আত্মসম্বরণ করিয়া আবার বলিল— অন্ধকার বাদল রাত্রি সেদিন-- কোলের মানুষ নজর হয় না এমনি অন্ধকার । পিছল পথে বার-বার পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। গ্রামের বাইরে এসে আমি চীংকার করে ডাকলাম-- ওগো ওগো । ঝিপ ঝিপকরে বৃষ্টির শব্দে আর বাতাসের গোঙানীতে সে শব্দ সে বোধ হয় শুনতে পায় নাই। শুনলে সে দাড়াত—নিশ্চয় দাড়াত হুজুর। তবে আমি তার গলা গুনতে পাচ্ছিলাম। বাতাসটা সামনে থেকে বইছিল। সে গান করতে করতে যাচ্ছিল, বাতাসে সে-গান পিছু দিকে বেশ ভেসে আসছিল। সাক্ষী আবার নীরব হইল।