পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*8 ় প্রখাসনী ; দেশে ও ঘরবাড়ি নে একটা বিস্তীর্ণ নীল মহাসাগরের তীরে-কাঞ্চনজঙ্ঘার মাথার ওপর থেকে সে মহাসাগর কতদূর চলে গিয়েছে, আমাদের এদিকেও এসেচে, ভূটানের দিকে গিয়েচে, তার কুলকিনারা নেই ; যদি কাউকে দেখাতাম সে হয়ত বলত ও আকাশ ওই রকম দেখায়, জামায় বোকা বলত। কিন্তু আমি বেশ জানি যা দেখেচি তা মেঘ নয়, আকাশ নয়—সে সত্যিই সমুদ্র । আমি সমুদ্র কখনও দেখিনি তাই কি, সমুদ্র কি রকম তা আমি জানি। বাবার মুখে গল্প শুনে আমি যে রকম ধারণা করেছিলাম সমূত্রের, কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরকার সমুদ্রটা ঠিক সেই ধরণের। এর বছর দুই পরে মেমেরা আমাদের বাড়ি পড়াতে আসে, তারা দাদাকে একথানা ছবিওয়াল ইংরেজী গল্পের বই দিয়েছিল, বইখানার নাম রবিন্দন ক্রুশে– তাতে নীল সাগরের রঙীন ছবি দেখেই হঠাৎ আমার মনে পড়ে গেল এ আমি দেখেচি, জানি—আরও ছেলেবেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘার মাথার ওপর এক সন্ধ্যায় এই ধরণের সমুত্র আমি দেখেছিলাম—ফুলকিনারা নেই, অপার--- ভুটানের দিকে চলে গিয়েচে... মিস্ নর্টনকে এসব কথা বলবার আমার ইচ্ছে ছিল। অনেক দিন মিস নর্টন আমায় কাছে ডেকে আদর করেচে, আমার কানের পাশের চুল তুলে দিয়ে আমার মুখ দু-হাতের তেলোর মধ্যে নিয়ে কত কি মিষ্ট কথা বলেচে-হয়ত অনেক সময় তখন বুড়ী মেম ছাড়া ঘরের মধ্যে কেউ ছিল না— অনেক বার ভেবেচি এইবার বলব—কিন্তু বলি-বলি করেও আমার লে গোপন কথা মিস্ নর্টনকে বলা হয়নি। কথা বলা ত দূরের কথা আমি সে-সময়ে মিস্ নর্টনের মুখের দিকে লজ্জায় চাইতে পারতাম না—আমার মুখ লাল হয়ে উঠত, কপাল ঘেমে উঠত...সারা শরীরের সঙ্গে জিবও যেন অবশ হয়ে থাকৃত...চেষ্টা করেও আমি মুখ দিয়ে কথা বার করতে পারতাম না। অথচ আমার মনে হ’ত এখনও মনে হয় যদি কেউ আমার কথা বোঝে, তবে মিস্ নর্টনই বুঝবে। মাস দুই আগে জামাদের বাড়িতে এক নেপালী সন্ন্যাসী এসেছিল। পচাং বাগানের বড়বাৰু বাবার বন্ধু, তিনিই বাবার ঠিকানা দেওয়াতে সন্ন্যাসীটি সোনাদা ষ্টেশনে SO8O যাবার পথে আমাদের বাসায় আসে । সে একবেলা এখানে ছিল, যাবার সময় বাবা টাকা দিতে গিয়েছিলেন, সে নেয়নি। সন্ন্যাসী আমায় দেখেই কেমন একটু বিস্মিত হ’ল, কাছে ডেকে তার পাশে বসালে, আমার মুখের পানে বার-বার তীক্ষ দৃষ্টিতে চাইতে লাগল-আমি কেমন একটু অস্বস্তি বোধ করলাম, তখন সেখানে আর কেউ ছিল না। তারপর সে আমার হাত দেখলে, কপাল দেখলে, ঘাড়ে কি দাগ দেখলে। দেখা শেষ করে সে চুপ করে রইল, কিন্তু চলে যাবার সময় বাবাকে নেপালী ভাষায় বললে—তোমার এই ছেলে স্বলক্ষণযুক্ত, এ জন্মেছে কোথায় ? বাবা বললেন—এই চা-বাগানেই । সন্ন্যাসী আর কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিলেন, বাবা এগিয়ে গিয়ে জিগ্যেস করলেন-ওর হাত কেমন দেখলেন ?... সন্ন্যাসী কিছু জবাব দিলে না, ফিরলেও না চলে গেল। আমি কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম। আমি মাঝে মাঝে নির্জনে যে নানা অদ্ভুত জিনিষ দেখি, সন্ন্যাসী সেই সম্বন্ধেই বলেছিলেন । সে যে আর কেউই বুঝবে না, আমি তা জানতাম। সেইজন্তেই ত আজকাল কাউকে ও সব কথা বলিও নে । a পচাং চা-বাগানের কেরাণীবাবু ছিলেন বাঙালী। র্তার স্ত্রীকে আমরা মাসীমা বলে ডাকৃতাম। তিনি তার বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন রংপুরে, সোনাদা ষ্টেশন থেকে ফিরবার পথে মাসীমা আমাদের বাসায় মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। মা না খাইয়ে তাদের ছাড়লেন না, খেতে-দেতে বেলা দুপুর গড়িয়ে গেল। আমাদের বাসা থেকে পচাং বাগান তিন মাইল দূরে, ঘন জঙ্গলের মধ্যবর্তী সরু পথ বেয়ে যেতে হয়, মাঝে মাঝে চড়াই উৎরাই । আমি, সীতা ও দাদা তাদের সঙ্গে এগিয়ে দিতে গেলাম—পচাং পৌঁছতে বেলা তিনটে বাজল । আমরা তখনি চলে আসছিলাম, কিন্তু মালীম ছাড়লেন না, তিনি ময়দা মেখে পরোটা ভেজে, চা তৈরি করে আমাদের খাওয়ালেন ; রাত্রে থাকৃবার জন্তেও অনেক অনুরোধ করলেন, কিন্তু আমাদের ভয় হ’ল বাবাকে না বলে আসা হয়েচে । বাড়ি না ফিরলে বাবা আমাদেরও