পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سیاموچه জামাকে, দাদাকে, সীতাকেও পড়াতে । জ্যাঠাইমা বললেন, তাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ছিল নাকি তোদের ? আমি বাহাদুরী করে বললাম- তারা এসে চ খেত আমাদের বাড়ি । আমাদের বিস্কুট দিত কেক্‌ দিত খেতে তাদের ওখানে গেলে—চা খাওয়াতেী— ' জ্যাঠাইম টান টানা স্বরে বললেন—মাগো মা ! কি হবে, আমাদের ঘরে দোরে ত যখন তখন উঠচে, হি ছুর ঘরের জাতজন্ম আর রইল না। আমি তখন বুঝতে পারিনি কেন জ্যাঠাইমা এ রকম বলছেন। কিন্তু শুধু এ-কথা নয় - আমি ছেলেমানুষ, অনেক কথাই তখন জানতাম না। জানতাম না যে এই বাড়িতে আমার বাবার অংশটুকু অনেক দিন বিক্রী হয়ে গিয়েচে, এখন যে এদো ঘরে আমরা আছি, সে-ঘরে কোনো স্থাযা অধিকার আমাদের নেই—ঞ্জাতি জ্যাঠামশাইরা অশ্রদ্ধা ও অবজ্ঞার সঙ্গে থাকৃতে দিয়েচেন মাত্র। জানতাম না যে, আমার বাবা বৰ্ত্তমানে অর্থহীন, অমুস্থ ও চাকুরিহীন, সরিকের বাড়িতে আশ্রয়প্রাধী। আরও জানতাম না যে, বাবা বিদেশে থাকেন, ইংরেজী জানেন ও ভাল চাকুরি করেন বলে এদের চিরদিন ছিল হিসে জাজ এ-অবস্থায় হাতের মুঠোর মধ্যে পেয়ে র্তারা যে এত দিনের সঞ্চিত গায়ের ঝাল মেটাতে ব্যগ্র হয়ে উঠবেন সেটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত। চাকুরির অবস্থায় মাকে নিয়ে বাবা কয়েক বার এখানে এসে চাল দেখিয়ে গিয়েছিলেন, এরা সে কথা ভোলেনি। ছেলেমানুষ বলেই এত কথা তখন বুঝতাম না । আমরা কখনও দোতলা বাড়ি দেখিনি—গায়ে ঘুরে ঘুরে দোতলা কোঠা বাড়ি দেখতে আমাদের ভারি ভাল লাগতে, বিশেষ করে সীতার । সীতা আজ এলে হয়ত বলে—কাল ষেও আমার সঙ্গে দাদা, ও-পাড়ার বাড়ুৰ্য্যে-বাড়ি কত বড় দেখে এসো-দোতলার ওপরে আবার একটা ছোট ঘর, সত্যি দাদা । আমাদের গ্রামে খুব লোকের বাস- এক এক পাড়াতেই যাট-সত্তর ঘর ব্রাহ্মণ। এত ঘন বসতি কখনও দেখিনি— কেমন নতুনতর মনে হয়, কিন্তু ভাল লাগে না। এতে যেন মন হাত পা ছড়াবার জায়গা পায় না, সদাই কেমন অস্বস্তি বোধ হয়- রাস্তায় ৰেজা ধুলে, পুরনো নোনাধরা ইটের বৃড়িই অধিকাংশ, বিশেষ কোনো ঐ ছাদ নেই, পথের ধারে স্থপ্রবাসী ;} ఏ08ం মাঝে মাঝে গাছপাল, সে-সব গাছপালা আমি চিনিনে, নামও জানিনে, কেবল চিনি কচুগাছ ও লালবিছুটি । এদের হিমালয়ে দেখেছি বলে নয়, কচুর ডাটার তরকারী এখানে এসে খেয়েছি বলে। আর আমার খুড়তুতো ভাই বিত্ত একদিন সীতাকে বিছুটির পাতা দেখিয়ে বলেছিল,—এর পাতা তুলে গায়ে ঘতে পারিস ?...বেচারী সীতা জানতো না কিছু, সে বাহাদুরী দেখিয়ে একমুঠো পাতা তুলে বঁrহাতে আচ্ছা ক'রে ঘসেছিল—ভারপর আর যায় কোথা ... এ-সব জায়গা আমার চোখে অত্যন্ত কুত্ৰ মনে হয়, মন ভরে ওঠে এমন একটা দৃপ্ত এর কোনো দিকেই নেই— ঝর্ণা নেই, বরফে-মোড়া পৰ্ব্বত-পাহাড় নেই—আরও কত কি নেই। সীতারও তাই, একদিন সে চুপি চুপি বললে— এখানে থাকৃতে তোমার ইচ্ছে হয় দাদা? আমায় যদি এখুনি কেউ বলে চা-বাগানে চলে, আমি বেঁচে যাই। আর একটা কথা শোনো দাদা—জ্যাঠাইমা কি খুড়ীমার ঘরে অত ঘেও না যেন । ওরা আমাদের দেখতে পারে না। ওদের বিছানায় গিয়ে বসেছিলে কেন দুপু বেল ? তুমি উঠে গেলে কাকীমা তোমায় বললে, অসভ্য পাহাড়ী ভূত, আচার নেই বিচের নেই, যখন তখন বিছানা ছোয় । ঘেও না ওদের ঘরে যখন-তখন বুঝলে ? ছোটবোনের পরামর্শ বা উপদেশ নিতে আমার অগ্রজগৰ্ব্ব সঙ্কুচিত হয়ে গেল, বললাম—আচ্ছা যা যা, তোকে শেখাতে হবে না। কাকীমা মন্দ ভেবে কিছু বলেন নি, আমায় ডেকে তারপরে কত বুঝিয়ে দিলেন পাছে আমি রাগ করি । জানিস তা ? · বলা বাহুল্য আমায় ডেকে কাকীমার কৈফিয়ৎ দেওয়ার কথাটা আমার কল্পনাপ্রস্থত । আমাদের জীবনের যে অভিজ্ঞতা এই চার মাসের মধ্যেই আমরা সঞ্চয় করেচি, তা বোধ হয় সারাজীবনেও ভুলবো না । আমরা সত্যই জানতাম না যে, সংসারের মধ্যে এত সব খারাপ জিনিষ আছে, মানুষ মানুষের প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারে, যাদের কাছে জেঠিম, কাকীম, দিদি ব’লে হাসিমুখে ছুটে গিয়েচি, তারা এতটা হৃদয়হীন ব্যবহার সত্যি সত্যিই করতে পারে, কি ক’রে জানবোই বা এসব ? মুস্কিল এই যে এত সাবধানে চললেও পদে পদে আমরা