পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিনটি দেশের স্বর্ণমুদ্রার আপেক্ষিক মূল্য ঠিকই থাকিবে এবং দেনা-পাওনা মিটাইতে গিয়া কাহাকেও বিনিময়ের হেরফেরে পড়িয়া ঠকিতে হইবে না। রৌপ্যমুদ্রাবিশিষ্ট দেশসমূহের সম্বন্ধেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। যদি এক দেশে স্বর্ণমুদ্রার ও অপর দেশে রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন থাকে, তাহা হইলেই উহাদের মধ্যে হিসাব-নিকাশের সময় কিছু গোল হইবার সম্ভাবনা । কারণ, স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ের হার কোনও ধাতুর সাময়িক আধিক্য বা অল্পতা হেতু কখনও কথনও কম বা বেশী হইতে পারে এবং তাহার ফলে পরম্পরের মধ্যে দেনা-পাওনার পরিমাণ নড়চড় হইয়। যাইবার সম্ভাবন৷ ধটে। কোন ভারতীয় ব্যবসামী ১৫,০০০ পাউণ্ড ষ্টার্লিং মূল্যের বিলাতী কাপড়ের ”অর্ডার” দিবার সময় যদি বিনিময়ের হার প্রেতি টাকায় ১ শিলিং ৬ পেনি হয়, তাহা হইলে তাহাকে মূল্য বাবদ ২,০০,০০০ টাকা দিলেই চলিবে । কিন্তু তাহার - পরেই যদি রূপার দর পড়িয়া গিয়া বাটার হার ১ শিলিং 8 পেন দাড়ায়, তাহা হইলে তাহাকে ঐ জিনিষের জন্ত টাক মূল্য দিতে হইবে । কেবল বাটার দরুণ তাহাকে এ ক্ষেত্রে ২৫,০০০ টাকা বেশী দিতে হইতেছে ! ঠিক তেমনি যদি কোন ইংরেজ বণিক আমাদের দেশে বাটার হার এক শিলিং ৬ পেনি থাকা কালীন ২,০০,০০০ টাকার পাটের অর্ডার দেয়, আর মূল্য দিবার সময় বাট্টার হার ১ শিলিং ৪ পেনি হয় তাহ হইলে তাহাকে ১৫০ ০০ পাউণ্ডের পরিবর্কে মাত্র ১৩,৩৩৩ পাউণ্ড ৬ শিলিং ৮ পেনি দিলেই চলিবে । দুষ্ট দেশের মুদ্র। যদি দুই ভিন্ন ধাতুর হয়, তাহা হইলে মূল্যের এইরূপ তারতম এবং তদরুণ একের লাভ ও অপরের ক্ষতি সময় সময় অনিবাৰ্য্য। কিন্তু তাহাও অনেকটা নিবারণ করিতে পারা যায় যদি সরকারী টাকশাল হইতে মুদ্র তৈরি করিয়া লইবার অবাধ অধিকার জনসাধারণের থাকে । কি ভাবে, তাহা বলিতেছি । বিনিময়ের হার কমিলেই কেমন করিয়া আমদানী মালের দর বৃদ্ধি এবং রপ্তানী মালের দর হ্রাস পায় তাহা উপরের দৃষ্টান্ত হইতে আমরা দেখিয়াছি। হৈার ফলে বিদেশী পণ্যের আমদানী কমিতে থাকে ও দেশী পণ্যের রপ্তানী বৃদ্ধি পায়। আমদানী অপেক্ষ রপ্তানী বেশী হইলেই তাহার মূল্য দিবার জন্য অধিকতর টাকার আবগুক হয় এবং তজ্জন্য অধিকতর রৌপ্যেরও প্রয়োজন

, , , ,

হয়। ফলে রৌপ্যের মূল্যের পুনঃবৃদ্ধি পাইবার সম্ভাবনা ঘটে এবং বিনিময়ের হার পূর্বাবস্থা বা সমতা ( parity } লাভ করিবার চেষ্টা করে। আমাদের লেন-দেন প্রধানত: ইংলণ্ডের সহিত। তারপর আর যে-সকল দেশের সহিত আমাদের বাণিজ্যাদির দরুণ আর্থিক সম্পর্ক তাহদেরও অধিকাংশ স্বর্ণমানবিশিষ্ট। ভারতে রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে স্বর্ণের প্রচলন হইলে বিনিময়ের কবলে পড়িম্ব আমাদিগকে এভাবে ভুগিতে হইত না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ আমরা অর্থশাস্ত্রের সহজ ও স্বাভাবিক নিয়মগুলি হইতে বিচ্যুত হইয় কেবলই সমস্যার পর সমস্তায় পতিত হুইতেছি এবং শতছিন্দ্রবিশিষ্ট মৃৎপাত্রে বারিধারণের ব্যর্থ প্রয়াসের ন্যায় আমাদের মুদ্র-সমস্ত-সমাধানের সকল চেষ্টা প্রতিহত হইতেছে। সেই ব্যৰ্থ চেষ্টার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এক্ষণে আলোচনা করিব । দক্ষিণাত্যে হিন্দুপ্রাধান্ত চিরদিন অক্ষুণ্ণ থাকা সহস্রাধিক বৎসর যাবৎ স্বর্ণমুদ্রাই এতদঞ্চলে একাধিপত্য করিয়া আসিতেছিল। উত্তর-ভারতে মুসলমান রাজত্বকালে স্বণ ও রৌপ্য দ্বিবিধ মুদ্রারই প্রচলন ছিল । কিন্তু বাদশাহগণ রৌপ্যমুদ্রাকেই অধিকতর প্রাধান্ত দিতেন। স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার হার নির্দিষ্ট করা ছিল না - মুদ্ৰামধ্যস্থিত ধাতুর মূল্য অনুযায়ী হার স্থির করা হইত। এদিকে ধাতুর মূল্য পরিবর্তনশীল ; ইহাতে কাজকর্মের অসুবিধা হয় দেখিয়া ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ইহাদের মধ্যে একটা নিৰ্দ্দিষ্ট হার বাধিস্থ দিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন । কিন্তু ধাতুর বাজার-দর স্থির না থাকায় নিদিষ্ট হারে দ্বিবিধ মুদ্রার ( Binetalism ) প্রচলন অসম্ভব হয় এবং ১৮৩৫ খৃষ্টাব্দে আইন-প্রণয়ন দ্বারা সমগ্র ভারতের জন্য এক তোলা ওজনের রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন বিধিবদ্ধ করা হয় । দেনা পরিশোধের জন্য স্বর্ণমুদ্রা লইতে ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী আর বাধ্য রহিলেন না। এইরূপে দ্বৈত মুদ্রার পরিবর্তে ভারতে এক রকম মুদ্রার (monometalism ) প্রচলন হয়। কেন যে স্বর্ণের পরিবর্ভে রৌপ্যের উপর কর্তৃপক্ষের স্বনজর পতিত হইল তাহার কারণ বুঝিতে পারা যায় না। কিন্তু এই নিৰ্দ্ধারণই ভারতের পক্ষে কাল হইয়া দাড়াইল । কেমন করিয়া তাহা পরে বলিতেছি। ১৮৩৫ সালের আইন দ্বারা স্বর্ণমুদ্র রদ করা হইলেও