জনসাধারণ তাহদের কাজকম্মের জন্য স্বর্ণমুদ্র দাবি করিতে লাগিল। ফলে ১৮৪১ সালে ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী সরকারী রাজকোষে স্বর্ণমোহর গ্রহণ করিবার আদেশ প্রচার করিতে বাধ্য হইলেন। মোহরে ও টাকায় একই ওজনের (এক তোল) সোনা ও রূপ ছিল এবং কয়েক শতাব্দী যাবৎ সোনার দর রূপা হইতে প্রায় পনর-গুণ বেশী চলিয়া আসিতেছিল, সেই কারণেই এক মোহরের মূল্য পনর টাকা বলিয়াই জনসাধারণ এতকাল জানিয়া আসিয়াছে। কিন্তু ইতিমধ্যে ক্যালিফোণিয়া ও অষ্ট্রেলিয়ায় বিস্তৃত স্বর্ণখনি আবিষ্কারের ফলে সোনার দাম কমিতে সুরু করিল এবং জনসাধারণ ১ মোহর = ১৫ টাক, এই পুরাতন হার অনুযায়ী কোম্পনীর দেন সোনায় মিটাইয়া লাভবান হইতে লাগিল । সরকারের নিকট র্যাহার ত্রিশ টাকা দেন ছিল তিনি দুই মোহর দিয়া রেহাই পাইলেন ; অথচ সোনার দর পড়িয়া যাওয়ায় বাজারে ২ মোহরের মূল্য তখন হয়ত ২৮ টাকার বেশী নয় । ইহাতে গভর্ণমেণ্টের গুরুতর ক্ষতি হইতে লাগিল এবং ১৮৫২ সালে গভর্ণমেণ্ট নোটিফিকেশান দ্বারা রাজকোষে মোহর গ্রহণ পুনরায় রহিত করিয়া দিলেন । কিন্তু দেশে স্বর্ণমান প্রচলনের জন্য তীব্র আন্দোলন সুরু হইল । প্রত্যেক রাজস্বসচিব ভারতের প্রকৃত মঙ্গল উপেক্ষ করিতে না পারিয়া স্বর্ণমানের স্বপক্ষে অভিমত প্রকাশ করিলেন ; এমন কি ১৮৬৪ সালে একটি স্কিমও তখনকার রাজস্বসচিব খাড়া করিলেন । কিন্তু এত আন্দোলন সত্ত্বেও ভারতসচিবের অনুগ্রহ না হওয়ায় আমাদিগকে দুধের সাধ ঘোলে মিটাঙ্গতে হইল। ভারতবাসীরা প্রকৃতই স্বর্ণমুদ্র চাহে কি-না তাহা পরীক্ষা করিবার জন্য ইংলণ্ড ও অষ্ট্রেলিয়ার টাকশালে প্রস্তুত স্বর্ণমুদ্র মাত্র ভারত-গভর্ণমেণ্ট তাহদের পাওনার পরিবর্ভে গ্রহণ করিতে স্বীকৃত হইলেন । এইরূপ জোড়াতাড়া দেওয়া নীতিতে কেহই সন্তুষ্ট হইতে পারিলেন না এবং দেশীয় টাকশালে প্রস্তুত পূরাদস্তুর স্বর্ণমানের জন্য আন্দোলন বাড়িয়াই চলিল । ফলে যেমন সর্বদ আমাদের ভাগ্যে ঘটিয়া থাকে —-একটি রয়্যাল কমিশন আমাদের দাবি পরীক্ষার জন্য বসিল । তাহারাও জনমতের আস্তরিকতা ও যুক্তির সারবত্তা স্বীকার করিয়া স্বর্ণমান প্রতিষ্ঠার অন্থকূলেই মত প্রকাশ করিলেন ; কিন্তু পরিণামে কিছুই হইল না । ఎరకరీ ১৮৭১ সালে জার্মানী রৌপ্যমান পরিহার করিয়া স্বর্ণমান গ্রহণ করে। ডেনমার্ক, হুলাগু, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশও জাৰ্ম্মানীর পদাঙ্কাকুসরণ করে । ফ্রান্স, বেলজিয়ম, ইটালী প্রভৃতি যে-সকল দেশে দ্বৈত মুদ্রার প্রচলন ছিল তাহারাও উভয় মুদ্রার বিনিময়ের হার ঠিক রাখিতে অসমর্থ হইয়া রৌপ্যমুদ্রার অবাধ তৈরি বন্ধ করিয়া দেয়। ফলে রূপার চাহিদ হঠাৎ অত্যন্ত হ্রাস পাইয় তাহার মূল্য খুব কমিয়া যায় । এই সঙ্কট সময়ে ভারতবর্ষেও স্বর্ণমান প্রচলনের জন্য বিখ্যাত রাজস্বসচিব স্তর রিচার্ড টেম্পল আর একবার বিশেষ চেষ্টা করেন । কিন্তু ১৮৭৪ সালের মে মাসেতাহার পদত্যাগের একমাস পরেই, ভারত-গভর্ণমেণ্ট কোন কারণ প্রদর্শন না করিয়াই তাহার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন । ইহার পরিণাম ভারতের পক্ষে অত্যন্ত খারাপ হইয়া দাড়ায় । ১৮৭২ সাল ও ১৮৯৩ সালের মধ্যে প্রতি টাকার মূল্য ২ শিলিং হইতে ১ শিলিং ৩ পেনিতে নামিয়া আসে। ফলে সস্ত; রূপ খুৱ অধিক পরিমাণে ভারতবর্ষে আমদানী হইতে আরম্ভ হয় এবং তাহ মুদ্রায় পরিণত হইয়। বাজারে ছড়াইয়ু পড়ে। প্রয়োজন-অতিরিক্ত মুদ্র বাজারে চলিতে থাকায় অর্থনীতির জোগান ও চাহিদার সাধারণ নিয়মানুসারে ভারতে জিনিঘের দর চড়িয়া যায় ৷ পক্ষাস্তরে ইউরোপে সোনার দর রূপার তুলনায় চড়া থাকায় সেখানকার জিনিষের দর কমিতে থাকে । সেই কারণে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বিশ্বের হাটে কমিয়া গিয়া বিদেশী জিনিষের চাহিদা ভারতের হাটে অত্যধিক বৃদ্ধি পায় এবং ইহাতে ভারতের গুরুতর অর্থহালি ঘটতে সুরু করে । ভারত সরকারের ক্ষতির পরিমাণ" প্রতি বৎসর বাড়িয়া চলিতে থাকে । ভারত-সরকারকে প্রতি বৎসর প্রায় ৩ কোটি পাউণ্ড ষ্টার্লিং “হোম চার্জেস” দরুণ বিলাতে পাঠাইতে হয় । ইংরেজ আমলাতন্ত্রের ও গোর সৈন্যবাহিনীর মাহিনী, ভাত, পেন্সন, ভারতীয় রেল ও পূৰ্ত্ত বিভাগের জন্য ধার কর টাকার স্বদ, বিলাতের ইণ্ডিয়৷ অফিস ও হাই কমিশনার অফিসের খরচাদি বাবদ এই টাক আমাদিগকে দিতে হয় । ইহা ভারতের পক্ষে নিছক ক্ষতি কিংবা ইহার বিনিময়ে আমরা যাহা পাই তস্থার আমাদের ক্ষতিপূরণ হয়, সে-বিষয়ে মতদ্বৈধ আছে । র্যাহারা টাকা দেন তাহাদের এক মত এবং যাহার টাকাট
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।